মুক্তিযুদ্ধের বই, বইয়ের মুক্তিযুদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪২:০০,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ২৩২৮ বার পঠিত
দীপংকর গৌতম ।।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের হাজার বছর ধরে করা সংগ্রামের অর্জন। কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে সাঁওতাল বিদ্রোহ, তেভাগা, টংক থেকে নানকার বিদ্রোহ কোনো সংগ্রামকেই স্বাধীনতার বাইরে থেকে দেখা যাবে না। মানুষ যারপরনাই সংগ্রাম করেছে স্বাধীনতার জন্য স্বাধীন ভুখণ্ড-স্বাধীন মানচিত্রের জন্য। দিনের পর দিন লড়াই সংগ্রাম করে তা বুঝেছিল সংগ্রাম কখনো বৃথা যায় না। তারপর ক্রমশ সংঘটিতভাবে চলেছে সংগ্রাম। সবশেষে এসেছে মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। নয় মাসের আতঙ্কিত প্রহর বেষ্টিত রাত বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা পৃথিবীর যে কোনো বর্বরতাকে হার মানিয়েছিল। সে অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করাও দুষ্কর। কর্কশ বুটের তলায় পিষে দেয়া ঘুমন্ত শিশুর আর্তচিৎকার আজো সবাইকে তাড়া করে ফেরে। রক্তের নহরে ভেসে আসা স্বাধীনতা আমাদের বীর মুক্তিসেনা, কিষান, মজদুর শ্রমিক, ছাত্র-জনতা, পেশাজীবীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। এখনো বাংলার মানুষের হৃদয়ে-মননে চেতনার গহিনে রেখাপাত করে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ। মননশীলতার প্রকাশে তাই মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি আসাই স্বাভাবিক। তাই আজকের নতুন পাঠকটিও গভীর আগ্রহ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের কাছে যায় তার চেতনার আলোর সন্ধানে; যে আলোয় জেগে উঠেছে সারদেশের তরুণ প্রজš§।
লেখক-গবেষক যারা মূলত মননশীলতার সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যে খুব কম লেখকই আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে চায় না। যে কারণে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পূর্ব আন্দোলনগুলো। গল্প-উপন্যাসে, প্রবন্ধ-প্রতিবেদনে, কবিতা-ছড়ায় বিধৃত হয়ে আছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। প্রত্যেকটি মুক্তিযুদ্ধের বই ইতিহাসের এক একটি খণ্ডচিত্র। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে রাজনৈতিক যে ভাগাভাগি তার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি দিন দিন ক্ষমতাসীন হয়ে উঠেছে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে শাসক শ্রেণীর অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই তাদের মর্যাদা পায়নি। সেদিক থেকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি অনেক সুবিধার মওকা নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছে। তারা তাদের অবস্থানকে দৃঢ় করেছে। কিন্তু বইয়ের পাতাকে তারা বশে আনতে পারেনি যেমন পারেনি প্রকাশনা শিল্পকে করায়ত্ত করতে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিও স্বাধীনতার ইতিহাস লিখতে চেয়েছে। বিপুল পরিমাণে টাকা ঢেলেছে লেখকদের পেছনে। ওইসব লেখক কখনোই প্রকৃত মননশীলদের দলে দাঁড়াতে পারেনি, যেমন পারেনি তাদের প্রকাশনা শিল্পও। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প তাদের স্বাধীন অবস্থানে থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কখনো গতিরুদ্ধ হতে দেয়নি। দেশের প্রকৃত অর্থে লেখক যারা তারা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসকে গাতিশীল করতে যে ভূমিকা রেখেছে তা বলে শেষ করার মতো নয়। যেসব বই মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সামনে ও পরবর্তী প্রজন্ম চেতনা জাগাতে ভূমিকা রেখে চলেছে সেসব বইয়ের একটা তালিকা দিতে চাই পাঠকের সুবিধার জন্য। কারণ স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও একাত্তরের পরাজিত শক্তি যতই মরিয়া হয়েছে তাতে তারা কোনো সুবিধা করতে পারেনি। কারণ ইতিহাস বড় নির্মম। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। তারা নতুন কোনো ইতিহাসও দাঁড় করতে পারেনি। লেখক ও প্রকাশনা শিল্পে যূথবদ্ধ সংগ্রাম দুঃসময়ে, দুর্দিনেও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে রেখেছে সবার ঊর্ধ্বে। আমরা লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী সর্বোপরি যারা মুক্তির ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ তারা নিয়মিত লিখছি যে যার মতো, যে যার স্থান থেকে। এর মধ্যেও যেসব বইয়ের কাছে আমরা ঋণী তার একটা তালিকা দেয়া হলো পাঠকের সুবিধার্থে –
১. দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী এ এস এম সামছুল আরেফীন।
২. একাত্তরের ডায়েরী বেগম সুফিয়া কামাল।
৩. একাত্তরের দিনগুলি জাহানারা ইমাম।
৪. আলবদর ১৯৭১ মুনতাসীর মামুন।
৫. মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি.এল.এফ)- শেখ মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন।
৬. চরমপত্র এম আর আখতার মুকুল।
৭. যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা ১৯৭১ আজাদুর রহমান চন্দন।
৮. মুক্তিযুদ্ধ ও নারী রোকেয়া কবির ও মুজিব মেহেদী।
৯. পাকিস্তানী জেনারেলদের মন মুনতাসীর মামুন।
১০. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর কর্নেল শাফায়াত জামিল, বীরবিক্রম।
১১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১২. অসহযোগ আন্দোলন: একাত্তর রশীদ হায়দার।
১৩. নৃশংস একাত্তর মোস্তফা হোসেইন।
১৪. অপারেশন জ্যাকপট সেজান মাহমুদ।
১৫. স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা – আনোয়ার শাহজাহান।
১৬. জনতার আদালতে জামাতে ইসলামী শাহরিয়ার কবির।
১৭. একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়।
১৮. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লুৎফর রহমান রিটন।
১৯. আমি বীরাঙ্গনা বলছি নীলিমা ইব্রাহিম।
২০. গণআদালতের পটভূমি শাহরিয়ার কবির।
২১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র সম্পাদক: হাসান হাফিজুর রহমান তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
২২. ডিসেম্বরের দিনগুলি নুরুজ্জামান মানিক।
২৩. মুক্তিযুদ্ধ ও চারু মজুমদার নেসার আহমেদ।
২৪. মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর : কথোপকথন।
২৫. ১৯৭১: চুকনগরে গণহত্যা মুনতাসীর মামুন।
২৬. বেহাত বিপ্লব: ১৯৭১ সলিমুল্লাহ খান।
২৭. ছয় দফা অফিসিয়াল ইশতিহার।
২৮. Bangladesh: A Legacy of Blood- Anthony Mascarenhas.
২৯. Witness to Surrender- Siddiq Salik
৩০. রাইফেল, রোটি, আওরাত আনোয়ার পাশা।
৩১. ২৬ টি চিত্রে বঙ্গবন্ধু।
৩২. বঙ্গবন্ধু কর্মসংকলন।
৩৩. আমি মুজিব বলছি কৃত্তিবাস ওঝা।
৩৪. বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র ড. সুনীল কান্তি দে।
৩৫. বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ: সমকালীন সাংবাদিকের দৃষ্টিতে আমির হোসেন।
৩৬. সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু।
৩৭. একাত্তরের কন্যা জায়া জননীরা মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া।
৩৮. একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হোসেন তারেক বীরবিক্রম।
৩৯. ফাঁসির মঞ্চে তেরজন আনোয়ার কবির।
৪০. মুখোশের অন্তরালে জামাত মাওলানা আবদুল আউয়াল।
৪১. মওদুদী-জামাত ফেৎনার স্বরূপ আনোয়ার কবির সম্পাদিত।
৪২. সেই রাজাকার জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন।
৪৩. শাহবাগের সাথে সংহতি সম্পাদনা: রেজওয়ান তানিম।
৪৪. বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস ১৮৩০ থেকে ১৯৭১ ডঃ মোহাম্মদ হাননান।
৪৫. জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া।
৪৬. আমি আল বদর বলছি।
৪৭. পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ১৯১ জন ডঃ এম এ হাসান।
৪৮. The Vanquished Generals and The Liberation War of Bangladesh- Muntassir Mamoon.
৪৯. গণহত্যা (Genocide)- অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস।
৫০. আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর আবুল মনসুর আহমেদ।
৫১. আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম – হুমায়ুন আজাদ।
৫২. বাংলাদেশ: প্রথম বিজয় দিবস বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ।
৫৩. ভাষা আন্দোলন: সাহিত্যিক পটভূমি- হুমায়ুন আজাদ।
৫৪. ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্তী।
৫৫. History of Freedom Movement in Bangladesh (১৯৪৭-১৯৭৩) Jyoti Sen Gupta
৫৬. একাত্তরের একদল দুষ্টু ছেলে – আনিসুল হক।
৫৭. মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরী – সাথী দাস।
৫৮. Memoirs of the Revolution in Bengal, Anno Domini 1757@ John Campbell and William Watts.
৫৯. Bengal in 1756-57@ S.C. Hill
৬০. একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার – সম্পাদনা: শাহরিয়ার কবির।