জাপা ছেড়ে গণফোরামে নবীগঞ্জ পৌর সভাপতি মুরাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৫:৫৯,অপরাহ্ন ০৯ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৪৯৪ বার পঠিত
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : জাতীয়পার্টি থেকে পদত্যাগ করে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন নবীগঞ্জ পৌর জাপা সভাপতি মুরাদ আহমদ। তিনি প্রায় ২৬ বছর জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
মুরাদের এ যোগদান গণফোরাম সুসংহত এবং আরো শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া।
ড. রেজা কিবরিয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে গণফোরামকে নবীগঞ্জের তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত একটি সংগঠনে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত মুখ মুরাদ আহমদ। উল্লেখ্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা ও কারা নির্যাতিত রাজনীতিক মুরাদ আহমদ জাতীয় পার্টির সাথে দীর্ঘ ২৬ বছরের রাজনৈতিক সর্ম্পকের অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি গণফোরামে যোগদেন। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ ও হামলা মামলার স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু পোড় খাওয়া এই রাজনৈতিক কর্মী রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি। বরং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে নতুন করে তুলে ধরতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মুরাদের রাজনৈতিক নতুন ঠিকানা গণফোরামকে তিনি সেভাবেই গড়ে তুলে নবীগঞ্জ উপজেলায় একটি সেরা সংগঠনে পরিণত কতে চান। যেভাবে তিনি জাতীয় পার্টিকে গড়ে তুলেছিলেন। ড. রেজা কিবরিয়াকে তিনি আদর্শ মনে করে সামনে এগোতে চান। সবধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে গণফোরামকে শক্তিশালি সংগঠনে পরিণত করার মাধ্যমে ড. কামাল হোসেন ও ড. রেজা কিবরিয়ার হাতকে আরও শক্তিশালি করতে চান তিনি।
ইতোমধ্যে তার সার্বিক প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে দুই শতাধিক নেতাকর্মীর গণফোরামে যোগদান করেছেন। মুরাদ আহমদ জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু থাকা সত্বেও দলে নেতৃত্ব শূন্যতা, ত্যাগী নেতা কর্মীদের যথাযথ মূল্যয়ন না করাসহ বিভিন্ন কারনে তিনিসহ জাতীয় পার্টির অসংখ্য নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি থেকে গণফোরামে যোগদান করতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৯৪/৯৫ ইং সালে নবীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রতিষ্টাতা সভাপতির দায়িত্ব গ্রহনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন রাজপথ কাপাঁনো ছাত্র নেতা মুরাদ আহমদ। তৎকালীন সময়ে এরশাদ মুক্তি আন্দেলন করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার মুরাদ আহমদ তার কর্ম দতায় ধীরে ধীরে সংগঠনের প্রধান কান্ডারী হয়ে ওঠেন। মুরাদ আহমদ ছাড়া জাতীয় পার্টির কথা চিন্তাও করা যেতোনা বলেই নবীগঞ্জের রাজনৈতিক মহল মনে করে থাকেন। মুরাদ আহমদ তার কর্ম দক্ষতা দিয়ে উপজেলা যুব সংহতির বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মূল সংগঠন উপজেলা জাতীয় পার্টির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি নবীগঞ্জ পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি নবীগঞ্জ পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলীয় কারণে অসংখ্যবার তিনি কারাভোগ করেছেন। মুরাদ আহমদ জাতীয় পার্টির নবীগঞ্জ পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা কালীন সময়ে নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লন্ডন প্রবাসী মুনিম চৌধুরী বাবু নবীগঞ্জে আসেন এবং বিগত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মুরাদ আহমদ মনে করেন, বাবু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলে দেখা দেয় স্থবিরতা। তিনি দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে তার নিজস্ব বলয়ের লোকজন দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত না করে তার নিজের আখের গুছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। দলীয় এমপি থাকা সত্বেও নেতা কর্মীরা মূল্যায় না পাওয়ার কারণে বাবু এমপি থাকাকালীন সময়ে নেতাকর্মীরা চুপ থাকলেও সংসদ সদস্য পদ চলে যাওয়ার পর উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টিসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে দুই শতাধীক নেতাকর্মী ইতিমধ্যেই গণফোরামে যোগদান করেছেন। একে একে দলের বেশীরভাগ ত্যাগী নেতাকর্মী ড. রেজা কিবরিয়ার হাতে ও স্থানীয় গণফোরাম নেতৃবৃন্দে হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে গণফোরামে চলে যাওয়ার ঘটনায় নবীগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অবশেষে পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক ওই ছাত্র নেতা মুরাদ আহমদ জাতীয় পার্টির সাথে দীর্ঘ ২৬ বছরের রাজনৈতিক সর্ম্পকের অবসান ঘটিয়ে গণফোরামে যোগদান করলেন।