আবরার হত্যায় এ পর্যন্ত যারা আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৫:২২,অপরাহ্ন ১০ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৯৩৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে যে ছাত্রলীগ নেতার রুমে আবরারকে পেটানো হয় সেই আলোচিত অমিত সাহাকে আটক করা হয় সকালে। দুপুরে আবরারের রুমমেট মিজান নামে একজনকেও আট করে ডিবি পুলিশ। সর্বশেষ বিকাল তিনটায় গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে। তোহা বুয়েটের এমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র।
এর আগে মঙ্গলবার আটক করা হয় আরও তিনজনকে যাদের নাম এজাহারে ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে এদের নাম আসায় তাদের আটক করে আবরার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বুধবার তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আর হত্যাকাণ্ডের পরদিন সোমবার বুয়েট ছাত্রলীগের ১০ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আবরার হত্যার ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকতুল্লাহ মোট ১৯ জনের নামোল্লেখসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন। গ্রেপ্তার ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন এজাহারভুক্ত আসামি। অমিতসহ অন্য চারজনের নাম ছিল না এজাহারে।
আসামিদের পরিচয়
বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। তাদের বাড়ি নেত্রকোনা শহরের আখড়া মোড় এলাকায়। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের ঠাকুরাকোনা বাজারের স্বাস্থ্য ক্লিনিকের পাশে। অমিতের বাবার নাম রঞ্জিত সাহা।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলে অমিত সাহার ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে পেটানো হয় আবাররকে। ওই কক্ষে আরও তিনজন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের দুজন হলেন উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ এবং সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশাররফ।
এজাহারে আসামিদের ক্রম
আবরার হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি মেহেদী হাসান রাসেল (২৪) ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি ফরিদপুরের সালথা থানাধীন সূর্যদিয়া রাঙ্গারদিয়ায়। তার বাবার নাম রুহুল আমিন।
দুই নম্বর আসামি মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩)বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ফেনীর ছাগলনাইয়ার দৌলতপুর লাঙ্গলমোড়ার আবু তাহেরের ছেলে তিনি। শেরেবাংলা হলের ২০১০ নম্বর কক্ষে একাই ২০১০ থাকতেন তিনি।
মামলার তিন নম্বর আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকারের (২২)বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। রাজশাহীর মোহনপুর থানার বড়ইকুড়িতে তাদের বাড়ি। একই হলের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
চার নম্বর আসামি মেহেদী হাসান রবিন (২২)একই হলের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। রাজশাহীর পবা থানার চৌমুহনীর কাপাসিয়ার মাকসুদ আলীর ছেলে তিনি।
পাঁচ নম্বর আসামির নাম ইফতি মোশারফ সকাল (২১)বুয়েট ছাত্রলগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক। রাজবাড়ী সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৯৫ নম্বর বাসাটি তাদের। বাবার নাম ফকির মোশারফ হোসেন। তিনিও শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
আবরার হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (২১)। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানাধীন ভাঙ্গাড়িপাড়ার মাহতাব আলীর ছেলে মনির একই হলের পানিসম্পদ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
সাত নম্বর আসামি মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২২) ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার ক্রীড়া সম্পাদক। রংপুরের মিঠাপুকুর থানাধীন শঠিবাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে তিনি। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
৮ নম্বর আসামি মাজেদুল ইসলাম (২১)শেরেবাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড ম্যাটার্লজিক্যাল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
৯ নম্বর আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য মোজাহিদুল ওরফে মোজাহিদুর রহমান (২১) ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে থাকেন তিনি।
১০ নম্বর আসামি তানভীর আহম্মেদ (২১)একই হলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২০)শেরেবাংলা হলে ২০১১ নম্বর কক্ষের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
১২ নম্বর আসামি জিসান (২১) একই হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষের ছাত্র এবং ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
এ মামলায় আসামি ছিলেন না বুয়েট ছাত্রলীগের উপআইন সম্পাদক অমিত সাহা। তবে ফেসবুকসহ দেশজুড়ে চলা তীব্র সমালোচনার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের সূত্রে গত রবিবার দিবাগত রাতে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে খুন করে ছাত্রলগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভে তোলপাড় চলছে। ইতিমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,আবরার হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিবেনে তিনি। অপরাধীদের দল দেখবেন না তিনি। তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী।