নেতাকর্মীর ভিড়ে ‘গণ সাক্ষাত’ কতটুকু সফল হচ্ছে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২২:৩৭,অপরাহ্ন ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩২৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা, অভিযোগ ইত্যাদি সরাসরি নিজে গ্রহণ করতে চালু করেছেন ‘গণ সাক্ষাত’ নামে ব্যতিক্রম এক অনুষ্ঠান। যেখানে নেতা নয়, দল নয়, সাধারণ মানুষ তাদের মনের দু:খ, বেদনা খোলে বলবে তাদের জনপ্রতিনিধির কাছে। এমন আয়োজন সর্বস্তরের নাগরিকের মাঝে সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে পাড়া গায়ের সাধারণ মানুষ শুধু ভোট আসলে ভোট দিয়েছে, কোন অনুষ্ঠানে বসে বক্তৃতা শুনেছে। কিন্তু এভাবে একান্ত পামে বসে কথা বলতে পারেনি বা কখনও বলবে বলে মনে আসেনি। কিন্তু ‘গণ সাক্ষাত’ অনুষ্ঠান করায় পাড়া গায়ের অসহায় মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন বলে মনে করছেন উপজেলাবাসী।
গত আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলায় পৃথক আয়োজনে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কিছুটা লক্ষণীয় ছিলো। চলতি মাসের ‘গণ সাক্ষাত’ অনুষ্ঠান মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় বিয়ানীবাজার উপজেলায়। আর বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
এবারের গণ সাক্ষাতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বা আগ্রহ তেমন ছিলোনা বলে ধারণা করছেন আওয়ামীলীগেরই কয়েকজন নেতা। কারণ হিসেবে তারা জানান, ‘গণ সাক্ষাত’ মানে সাধারণ মানুষের সাথে একান্ত আলোচনা। সাধারণ মানুষ তার এলাকার সমস্যা তুলে ধরতে হয়তো স্থানীয় দলীয় কোন নেতারও নাম উঠে আসতে পারে। প্রথম ‘গণ সাক্ষাত’ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেও বলেছেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে এলাকার সমস্যা তুলে ধরতে পারবেন, প্রয়োজনে আমার দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করতে পারবেন’। সাধারণ মানুষও তাদের প্রিয় জনপ্রতিনিধির কাছে মনের দু:খ ও অভিযোগ খুলে বলতেই উপস্থিত হন ‘গণ সাক্ষাতে’।
গণ সাক্ষাত চলাকালে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ তাদের জনপ্রতিনিধির সাথে একান্ত কথা বলার সুযোগ পেয়েও বলতে পারে না। কারণ সাক্ষাত চলাকালে দেখাযায় টেবিলের চারপাশে দাড়িয়ে আছেন দলীয় নেতাকর্মী। এমনকি লোকটি যে এলাকার সমস্যা বা অভিযোগ নিয়ে এসেছে সে এলাকারও নেতা দাড়িয়ে আছেন টেবিলের পাশে। এখন লোকটি তার চারপাশে দলীয় নেতাকর্মী দেখে সবকিছু খোলে বলতে পারেনা। এমনকি অনেকে এমন অবস্থা দেখে সাক্ষাত না দিয়েই চলে যান। আর অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে অনেকেই ঐ জনপ্রতিনিধিকেই দুষারোপ করেন। তারা বলতে থাকেন একান্ত কথা বলার পরিবেশ না করে কেন এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনেরই এক নেতা বলেন, এমপি মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, কিন্তু মানুষ যদি তাদের মনের সব বেদনা খোলে বলতে না পারে, তাহলে এরকম অনুষ্ঠানের মানে হয়না। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যখন কথা বলে,তখন দেখা যায় টেবিলের পাশে ভিড় করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তখন সাধারন মানুষের মুখ দিয়ে অভিযোগতো দূরে থাক, কোন কথাই বের হবে না।
গণ সাক্ষাতে আসা একজন বলেন, আমি আমার এলাকার একটি সমস্যা নিয়ে এসেছিলাম, কথাও হয়েছে। কিন্তু কোন কারণে এলাকায় এ সমস্যাটা হচ্ছে তা বলতে পারিনি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকার এক নেতা পাশেই দাড়ানো ছিলেন। এখন যদি আমি তার সামনে এ অভিযোগ দেই, তাহলে এলাকায় গিয়ে আমার পিছনে তারা লেগে যাবে। এ ভয়েই সবকথা চেঁপে রেখেই চলে আসি।
আরেকজন ফেসবুকে অনুষ্ঠানের একটি ছবির কমেন্টে লিখেছেন- ‘মানুষকে প্রাণ খুলে কথা বলতে কি দিলেন আপনারা, যে ভাবে নেতাকর্মীদের ভিড়ে রাখেন মনে হয় উনি শুধু আওয়ামিলীগের, একটু একা কথা বলতে দিলে মাননীয় এমপি মহোদয় আরো স্পষ্ট ভাবে সবার সাথে মিশতেন’।
অনেকে আবার বলেন, ‘নাহিদ সাব বালা একটা কাজ চালু করছইন, ইলা আগে কেউ কোনদিন করছইন না, এর লাগি তানরে আর দলর হকলরে ধন্যবাদ জানাই, আমরা মনর দু:খ খান খুলিয়া খইতাম পারমু।
এদিকে, বুধবার ‘গণ সাক্ষাত’ চলাকালে নুরুল ইসলাম নাহিদ বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকটা ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা যার যার আসনে বসুন, সাধারণ মানুষকে একান্তে কথা বলার সুযোগ দিন, আপনারা সামনে এসে দাড়ানো থাকলে সাধারণ মানুষ তার অন্তরের কথা বলতে পারবে না, আর সাধারণ মানুষ যদি তার ভিতরের কথাগুলো আমাকে না বলতে পারে তাহলে আমার এ উদ্যোগ (গণসাক্ষাত) করার কোন মানে নেই। আপনারা দলীয় নেতাকর্মীরাতো আমায় সবসময় কাছে পেয়েছেন, আগামীতেও পাবেন। আপনাদেরও কোন অভিযোগ থাকলে সারিবদ্ধভাবে একান্তে এসে বলতে পারেন। আগে সাধারণ মানুষকে সুযোগ করে দেন।