গোলাপগঞ্জে জোরালো হচ্ছে সুরমায় ‘সেতু নির্মাণ’ আন্দোলন!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৫:৫০,অপরাহ্ন ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৫৪০ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নকে উপজেলা সদর থেকে পৃথক করে রেখেছে সুরমা নদী। সুরমা নদীর উপর সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার বাঘা ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। সেতু নির্মাণ হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে এসব এলাকার মানুষের সরাসরি ‘সেতুবন্ধন’-এর দ্বার উন্মোচিত হবে। এ সেতু নির্মাণ করা হলে সুরমা পারের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন একধাপ এগিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন উপজেলা ও পৌর সদরের সঙ্গে সরাসরি আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ফলে সহজতর হয়ে উঠবে শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করার।
উপজেলা সদরের সাথে সহজে যোগাযোগ স্থাপনে নদীর উপর সেতু নির্মাণে এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই সেতু নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন স্থানীয়দের। এমনকি মন্ত্রী-এমপি না সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকের আস্থাভাজন এমন অনেকেও আশ্বাস দেন। কিন্তু সরকার আসে, সরকার বদলে। শুধু বদলেনি বাঘাবাসীর ভাগ্য। এনিয়ে র্যালি, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশের মতো অনেক আন্দোলনও হয়েছে। এরপরও কোন সুখবর পাননি বাঘাবাসী। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে এবার সেতু নির্মাণে জোরালো আন্দোলনের ডাক আসছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
জানাগেছে, উপজেলার ১নং বাঘা ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরের সংযোগাস্থল বাঘা মাদ্রাসা ঘাটস্থ সুরমা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের। এ নায্য দাবীটি বাস্থবায়নে এমপি-মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ধরনা দিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রতিবারই দাবিটি উপেক্ষিত হয়েছে জনপ্রতনিধিরা গুরুত্ব না দেয়ায়। আর স্থানীয় হোক বা জাতীয় হোক নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতেন ভোটারদের মনে। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই ভূলে যান মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর কথা। এসব স্বপ্ন কবে বাস্তবায়ন হবে, নাকি কখনও হবেনা তা নিয়েও সন্দিহান বাসিন্দারা।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে জনবহুল ১নং বাঘা ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী কানাইঘাট উপজেলার ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন, শাহপরাণ থানার একাংশ সাধারণ মানুষ উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে শহরতলীর মুরাদপুর বাইপাস হয়ে নতুবা খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ যেনো একই দেশে দুটি রাজ্যর যোগাযোগ। বিশেষ করে সরকারি সব কয়টি দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপজেলা সদরের হওয়ায় নদীর উত্তরপাড়ের মানুষের যোগাযোগ কিংবা স্কুল কলেজে যেতে একমাত্র খেয়া নৌকাই শেষ ভরষা। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে বাড়ে নৌ-দূর্ঘটনা আর সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ে সরকার সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করায় এলাকাবাসীও সুরমা নদীর উপরে সেতু নির্মাণের দাবীটি জোরালো করেছেন। দাবী আদায় না হলে তারা বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিবেন বলেও জানান। বাঘামাদ্রাসা ঘাটস্থ সুরমা নদীর উপরে ব্রীজ নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বেও একাধিক বার মাপঝুক করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ব্রীজটি আজও নির্মাণ হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষকে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন যে শীঘ্রই সুরমা নদীর উপরে আমাদের বহু কাংঙ্খিত ব্রিজটি নির্মান হবে’ আমরা সেই আশ্বাসে বার-বার আমাদের মুল্যবান ভোটটি আমরা তাদের দেই। কিন্তু নির্বাচন গেলে আর সুরমা নদীর উপরে সেতু নির্মাণ হয়না। এবার আমাদের নায্য দাবীটি বাস্তবায়ন না হলে আমরা আন্দোলনে যাবো। তার আগে স্থানীয় এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে দেখা করে স্মারক প্রদান করা হবে।
বাঘা ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের জনসাধারণ সেতু নির্মাণের দাবীটি বাস্তবায়নের জন্য একাধিক জনপ্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত করেছি। তারাও বলেছেন, এমপি মহোদয়ের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। সেতুটি নির্মান হলে উপজেলা সদরের সাথে নদীর উত্তরপাড়ের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাগবের পাশাপাশি বাড়বে ব্যবসার ক্ষেত্র, বৃদ্ধি পাবে শিক্ষা প্রসারের সুবিধা।
সাব্বির আহমদ নামে এক বাসিন্দা জানান, সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণ হলে বাঘা ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পাশাপাশি জীবন মানেরও অনেক পরিবর্তন হবে।
গোলাপগঞ্জ সরকারি এমসি একাডেমীর দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী কিবরিয়া আহমদ জানান, খেয়াঘাটে একটিমাত্র নৌকা থাকায় কলেজে যেতে অনেক অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় নৌকার জন্য কলেজে যেতে দেরি হয়ে যায়।
লালনগর খেয়াঘাটের মাঝি চুনু মিয়া জানান, প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী সহ হাজারো মানুষ খেয়াঘাটে নৌকায় পারাপার হন। অনেক সময় অধিক যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করাতে হয়।
সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা স্যায়িদ আহমদ সুহেদ জানিয়েছেন, এখানে সেতু নির্মাণের দাবী দীর্ঘদিনের। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার সরকার জনবান্ধব সরকার। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ সরকার অনেকটা সফল। কিন্তু আমাদের বাঘা ইউনিয়নটি পিছিয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ পর্যায়ে বারবার বলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ রয়েছেন স্থানীয়রা। সেতু বাস্তবায়েনে তারা বৃহৎ আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আমি মনে করি আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমাদের সংসদ সদস্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে গণস্বাক্ষরযুক্ত একটি স্মারক প্রদান করা হোক।