‘দেশে এখন ১০ টাকার প্রতারণা শুরু হয়েছে’!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৫:৫৩,অপরাহ্ন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ১০০৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: খেলাফত মজলিস আয়োজিত চামড়া শিল্পসহ সর্বব্যাপী আর্থ-সামজিক অস্থিরতা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে এখন ১০ টাকার প্রতারণা শুরু হয়েছে। বর্তমান অনির্বাচিত সরকার ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়ার কথা বলেছে, এর আগে দশ টাকার চাউল খাওয়ানোর কথা বলেছে, তারপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ১০ টাকা দিয়ে সমুচা সিঙ্গারা খাওনের কথা বলেছে, সর্বশেষ এসেছে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানো। এই যে দশ টাকার প্রতারণা এটা কতদিন চলবে? দেশের টাকা লুট করতে করতে এবার এ লুটেরাজ সরকার ইয়াতিম-গরীবের হক চামড়া বাজার লুটের ঘটনা ঘটলো। যা আমাদের জন্য একটা কলঙ্ক।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্ব) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে (৩য় তলা) সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। দেশে একটি জনবিচ্ছিন্ন সরকার চেপে বসে আছে। এ জনবিচ্ছিন্ন সরকারের কারণে দেশে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, ঘুষ, দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সর্বত্র লুটপাট চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে অনির্বাচিত সরকারকে হঠাতে হবে।
সেমিনারে আলোচনা পেশ করেন খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফিজ্জী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, বীর প্রতীক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান, সাবেক এমপি ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট জনাব গোলাম মাওলা রনি, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব জনাব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল প্রমুখ।
খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব শেখ গোলাম আসগর ও মুহাম্মদ মুনতাসির আলীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কে এম আলম। আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল করিম, জাগপা’র ভারপ্রাপ্ত মহাসিচিব আসাদুর রহমান খান, খেলাফত মজলিসের প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, আলহাজ্ব আবু সালেহীন, ডাঃ এস এম মোসাদ্দেক, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল ইসলাম, মাওলানা আজীজুল হক, হাফেজ জিন্নত আলী, মুফতি ওযায়ের আমীন, হাজী নূর হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াস আহমদ, কাজী ফিরোজ আহমদ সিদ্দিকী, মাওলানা আহমদ আলী, শ্রমিক মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, বীর প্রতীক বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে সফলতা পেতে ছোট-বড় সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। আলেম-ওলামা, সাধারন শিক্ষিত সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনে আগাতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, সবাই অনুভব করছে যে, দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি নির্ভর করে সমকালীন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, সরকারের অবস্থা ও অবস্থা পরিবর্তনে জনগণের ইচ্ছার উপর। আর পরিবর্তনের শর্ত হচ্ছে বিশেষ অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সে ঐক্য হতে হবে দেশ প্রেমিকদের ঐক্য, সৎ ব্যক্তিদের ঐক্য এবং যাদের চরিত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই তাদের ঐক্য। যাদের সম্পদের মোহ নেই তাদের ঐক্য।
তিনি বলেন, দেশে এক ধরনের লুন্ঠনের অর্থনীতি চলছে। লুন্ঠনের সুযোগ এখন অবারিত। লুন্ঠনের অর্থনীতিতে অনৈতিক পন্থায় বহু রাস্তার লোক কোটিপতি বনে গেছে। এদিকে সরকার রিজার্ভ ভেঙ্গে ব্যয় নির্বাহের চিন্তা করছে। বিভিন্ন শ্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জমাকৃত অর্থ সরকার নিয়ে খরচ করতে চাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে বোধ হয় দেশে একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হতে যাচেছ। এ অবস্থায় একটি বড় ধরণের পরিবর্তন আসন্ন হয়ে পড়েছে। সে পরিবর্তন কালবৈশাখী রূপে আসবে নাকি টর্নেডো নাকি সাইমুম রূপে না অন্যকোন রূপে আসবে তা ভবিষ্যৎ বলবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে জাতিকে একটা ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ইয়াতিম-গরীবের হক চামড়া বাজার লুটের ঘটনা ঘটলো। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লুটপাট, নৈতিক অবক্ষয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে অরাজকতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকার সর্বত্র ব্যর্থ। কিন্তু কোথায়ও কোন অঘটন ঘটলে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে দায়ী করা হয়। এমনকি কোথায়ও বর্জ্রপাতের ঘটনা ঘটলেও বিরোধী দলকে দায়ী করা হয়। মামলা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে, ধর্মের পোশাক পড়লে তখন আমরা চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, জঙ্গি হয়ে যাই। আর পহেলা বৈশাখে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ যখন বিভিন্ন প্রকার পশু-বাঘ-প্যাঁচার মুখোশ পরে উদযাপন করে তাতে কোন দোষ নেই। অথচ ধর্ম নিয়ে কথা বললেই সব দোষ, তখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হয়ে যাবো, চেতনাবিরোধী হয়ে যাই।’
সাবেক এমপি ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমরা কি একটা গণতান্ত্রিক অবস্থায় আছি না স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থায় আছি নাকি স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি তা দেখতে হবে। আসলে আমরা একটি স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার চেয়েও একটি খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। বর্তমানে রাষ্ট্রে, প্রশাসনে এমনসব ঘটনা ঘটছে তা মানুষ হিসেবে কল্পনাও করা যায় না। এ বছর চামড়া নিয়ে যে কলংকজনক ঘটনা ঘটলো তা কল্পনাও করা যায় না। এ বছর যে একটি নির্বাচন হলো, নিশি রাতের নির্বাচন, যারা রক্ষার দায়িত্বে তারা বসে বসে পিস্তলের মুখে ব্যালটে সিল মারলো তা কল্পনাও করা যায় না। আসলে এদেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ভয়কে জয় করতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এ অস্থিরতা ও সংকট উত্তরণে সর্বাগ্রে রাতের ভোট ডাকাত সরকারকে হঠাতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে। এ জন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।