জাপা কি এবার সর্বোচ্চ পদ নিয়ে টুকরো হচ্ছে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১১:২৬,অপরাহ্ন ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৯৫৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সাবেক স্বৈর শাসক মরহুম হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের দল আরেক দফা ভাঙনের দিকে হাটছে। তবে এবার শীর্ষ দুই নেতার বলয়ে ভাঙন দেখা দিবে। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের উভয়ই দলের সর্বোচ্চ পদ চেয়ারম্যান নিয়ে টানাটানি করছেন। তবে এরশাদের মৃত্যুর আগে জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেলেও তাঁর মৃত্যুর পর তিনি পুরোপুরো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। কাদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর গোপনে বিরোধ থাকলেও বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে তা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
কারণ বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তার অনুসারীরা। কিন্তু এ ঘোষণাকারীদের বিরুদ্ধে দলের ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে রওশন এরশাদের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে চেয়ারম্যানের ঘোষণা দেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। একইসঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের ঘোষণার কথাও জানান তিনি।
এরপরই বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাকারীদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জিএম কাদের।
গত ১০ জানুয়ারি বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করেছিলেন এরশাদ। তবে এমন সিদ্ধান্তে বেশিদিন স্থির থাকেননি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি। ২৩ মার্চ এরশাদ এক সাংগঠনিক চিঠিতে সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে জিএম কাদেরকে সরিয়ে তার স্থলে স্ত্রী দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে মনোনীত করেন।
১৪ জুলাই এরশাদ মারা গেলে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। নিজের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ভাই জিএম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। তবে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, এর কোনও সুরাহা করে যাননি।
জাপা চেয়ারম্যানের মৃত্যুর চার দিন পর ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের সাতজন সংসদ সদস্য ও দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন না তা নিয়েও ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় দেবর-ভাবির মধ্যে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তারা। দেবর-ভাবির এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করল দলটির একাংশ।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের ঘোষণার কথাও জানান তিনি।
আনিসুলের আগে সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব কষ্ট করে তিলতিল করে পার্টিটাকে গড়ে তুলেছেন। ‘পার্টিতে এখন কী হচ্ছে? জাতীয় পার্টি কি আবার ভাঙতে যাচ্ছে? অতীতে কিন্তু জাপা ভেঙেছে। এখন সেই পার্টিটাকে ভালো করতে চাই।’
যারা জাতীয় পার্টি থেকে ছেড়ে গেছেন তাদের নতুন করে দলে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এরশাদপত্নী বলেন, ‘মান-অভিমান ভুলে দেশ ও মানুষের স্বার্থে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসুন। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে জাতীয় পার্টিকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
এর পরই সংবাদ সম্মেলন করে রওশনপন্থিদের সতর্ক করলেন জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। দলের প্রেসিডিয়ামও তাতে সমর্থন দিয়েছে।
কাদের বলেন, “রওশন এরশাদ আমার মায়ের মতো। তিনি নিজ মুখে তো আর বলেন নাই যে তিনি চেয়ারম্যান। তাকে সম্মান করি। আশা করি, তিনি এমন কিছু করবেন না, যাতে তার সম্মান নষ্ট হয়।”
প্রেসিডিয়ামের সদস্যদের অধিকাংশদের সমর্থন নিয়েই তাকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে এবং দলীয় এমপিদের অধিকাংশের সমর্থন নিয়েই সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নাম ঘোষণার জন্য স্পিকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন জি এম কাদের।
এ সময় রওশনপন্থিদের সতর্ক করে বলেন, “যারা শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০১৬ সালের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ২২ নম্বর ধারা উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান পার্লামেন্টারি পার্টির আস্থাভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হবেন। পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা যিনি হবেন তিনিই আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
‘এখানে পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো মিটিং (সভা) করার বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। চেয়ারম্যান যাকে আস্থাভাজন বলে মনে করবেন তিনিই হবেন। আমার প্রতি কাদের আস্থা আছে তা জানার জন্য সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেছি। ১৫ জন আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। তারা বলেছেন যে, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আমরা বিরোধী দলীয় নেতা দেখতে চাই। তখনই আমি এই পত্রটি স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছি। এটা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়েছে। সেখানে কোথাও পার্লামেন্টারি পার্টির সভা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়নি।
কাদের বলেন, এরশাদ একটি সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি বলে গেছেন, আমার অবর্তমানে আমার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। ওনার মৃত্যুর পূর্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। তার মৃত্যুর পর কী হবে সে হিসেবে আমাকে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন।
সর্বশেষ ১৭ আগস্ট তাঁকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় বলেও জানান কাদের।
এ সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সালমা ইসলাম, এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা, রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, মজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা ও নাসিম ওসমান উপস্থিত ছিলেন।