সরকারী হাসপাতাল, নিজেই রোগী!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৩:১৫,অপরাহ্ন ২৯ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৪২৬ বার পঠিত
ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা (খুলনা) থেকে:: খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট ও যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার কারণে স্বাস্থ্য সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের । এখানে চিকিৎসকের ২৯টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র সাতজন। বাকি পদগুলো শূন্য। হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক পদটি দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। ফলে নারী ও প্রসুতি রোগীদের হাসপাতালে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগীদের ভীড়। মেডিকেল কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার পাল ও রিজবি আহমেদ চিকিৎসা দিচ্ছে। দুই তলায় অবস্থিত পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ৪০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ৫০ শয্যা থাকার বিপরীতে ৩২শয্যা থাকায় বারান্দায় রোগীরা সেবা নিতে দেখা যায়। ওয়ার্ডের বাথরুমগুলোও অপরিষ্কার। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। বিড়ালের বমি ও মল যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে। ছাদ থেকে পলেস্তা খসে পড়ছে। পুরো হাসপাতাল জুড়ে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন আউটডোরে কমপক্ষে ২০০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়। আর জরুরী বিভাগে আরও ৫০-৬০ জনকে সেবা দিতে হয়; যা দুজন কিংবা তিন জন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। চার বছর ধরে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় নারী রোগীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ১ বছরের (২০১৩-১৪) জন্য একজন গাইনি চিকিৎসক এসেছিলেন। তিনি বদলী হওয়ার পর আর কখনও এখানে কোন গাইনী চিকিৎসা আসেনি। কয়েকজন রোগী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার নারীদের। বেশি ভোগিন্তর শিকার হয় প্রসূতি রোগিরা। এ্যাম্বুলেন্স করে খুলনায় নিতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ২৫০০-৩০০০ টাকা। যা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের ভর্তি থাকা রোগী মহেশ্বরীপুর তেতুল তলা এলাকার জ্যোৎসা বেগম বলেন, এখানে মেয়ে ডাক্তার নেই।নিজের একান্ত সব কথা তো পুরুষ ডাক্তারের সাথে তো বলা যায় না। লজ্জা লাগে। সেকারণে অনেক মহিলা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে না।
আলতাফ হোসের বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার, পরীক্ষার যন্ত্রপাতি কিছুই নেই। তাই বড় বিপদে না পড়লে এখানে কেউ আসে না। আমরা সরাসরি একশ’ কিলোমিটার দুরে খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নেই।
কয়রা সদরের বাসিন্দা শাহানারা খাতুন বলেন, বাড়ির কাছের হাসপাতালে থাকা সত্তেও চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই আমাদের মত গরীব মানুষের কিছু হলে ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করে খুলনা গিয়ে ডাক্তার দেখাতে খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ে ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে আমাদি ইউনিয়নের জায়গীরমহল গ্রামে ১৯৬৪ সালে এটি স্থাপন করা হয়। তখন এটি ৩১ শষ্যা ছিল। পরে ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর হাসপাতালটিকে ৩১ থেকে ৫০ শষ্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজাত আহমেদ রয়েছেন। তবে তিনি এখন ছুটিতে দেশের বাইরে ট্র্রেনিং এ আছেন ।মেডিকেল কর্মকর্তা দুজনের স্থলে আছেন ২জন।জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন রয়েছেন। মেডিকেল কর্মকর্তা (আয়ুবেদিক), ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল কর্মকর্তা (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) একটি পদে একজন করে রয়েছেন। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পদটি শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টসার্জারি, গাইনি অবেদনবিদ, শিশু, ইএনটি, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষু ওচর্ম চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য। সহকারী সার্জন, মেডিকেল কর্মকর্তা (সমমান), ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা, ইমারজেন্সী মেডিকেল কর্মকর্তা, প্যাথলজিষ্ট ও এনেসথেটিষ্টপদ শূন্য রয়েছেন। ৩য় শেণির কর্মচারী ১২২ জনের স্থলে ৪৭টি পদ শূন্য। ৪র্থ শ্রেণির ৪৭ জনের স্থলে আছেন মাত্র ৮ জন। ৩৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এ-ক্সরে মেশিন নষ্ট ১৫ বছর। আল্ট্রাস্নোগ্রাম করা জন্য প্যাথলজিষ্ট নেই। চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছুই এই হাসপাতালে হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সব চিকিৎসক পদায়ন করা হয় তারা সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দিতে সক্ষম। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল না থাকায় সেটা সম্ভব হয় না। একটু জটিলতা হলে জেলা শহরের বড় হাসপাতালে রেফার করতে হয়। অথচ দোষ হয় চিকিৎসকদের। আর অভিযোগ করা হয়, যোগ্যতার অভাবের কারণে আমরা সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারি না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত কুমার পালবলেন, ভবনের অবস্থা নাজুক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু সংস্কার করা হচ্ছে। এই ভবনে বসে কাজ করতে বেশ ভয় হয়। আর চিকিৎসক-সংকটের বিষয়ে প্রতি মাসে উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয় কিন্তু নিয়োগ আর হয় না । সেখান থেকে দ্রæত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। বাথরুমের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ সুশান্ত কুমার পাল জানান,সুইপারের পদে ৫ জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ২ আছে।