ডিআইজি মিজানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব কেন- প্রশ্ন সাবেক আইজিপির
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৫৪:৫৩,অপরাহ্ন ১৯ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৮২৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ঘুষ দেওয়ার অপরাধ স্বীকার করার পরও ডিআইজি মিজানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পুলিশ কেন দেরি করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাহিনীটির সাবেক একজন প্রধান। তিনি মনে করেন, এতে বাহিনীর সম্মান নষ্ট হচ্ছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ, যিনি নিজে বর্তমানে একজন আইনপ্রণেতা, তিনি বলছেন, পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করতেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
ডিআইজির বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। তিনি এক নারীকে অস্ত্রের মুখে তুলে বিয়ে করেছেন। আরেক নারী ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে ৬৪ জেলায় ফেলে রাখার হুমকি দিয়েছেন। ওই নারীর নামে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অশালীন ছবি ছড়িয়েছেন।
এর মধ্যে নারীতে তুলে নিয়ে বিয়ে করার ঘটনাটি তদন্ত করে পুলিশ প্রমাণও পেয়েছে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ডিআইজির বিরুদ্ধে। বাকি দুই অভিযোগের কোনো তদন্তই হয়নি।
এই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সবশেষ অভিযোগ, দুর্নীতির অনুসন্ধান ঠেকাতে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। একে আর অভিযোগ বলা যায় কি না, এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কারণ, ডিআইজি নিজেই ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এই বিষয়টি সামনে আসার পর গত ১০ জুন দুদক আর পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু যিনি ঘুষ দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গরিমসি করছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত কেবল তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তাও গোপনে।
ডিআইজি মিজানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব কেন- প্রশ্ন তুলে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘একজন মানুষ ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তা আবার বলছেন। এটাতো নিজের সম্মান, পুলিশের সম্মানের বিষয়। এটা নিয়ে এত সময় নেওয়ার কী দরকার?’
ডিআইজির বিরুদ্ধে আগের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হলেও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আগের তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক কেন ব্যবস্থ নেয়নি তা একটু মন্ত্রণালয়কে (স্বরাষ্ট্র) জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে।’
দেরিতে হলেও ডিআইজি মিজানের ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মঈনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন কোরেশী এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মিয়া মাসুদ হোসেন এই তদন্ত করবেন। তবে এই তদন্ত প্রতিবেদন কত দিনের মধ্যে দিতে হবে তা স্পষ্ট করেনি সদরদপ্তর।
এক নারীতে তুলে নিয়ে বিয়ের যে অভিযোগ ছিল, সেটির তদন্তের নেতৃত্বেও ছিলেন মইনুর রহমান চৌধুরী। ছিলেন মিয়া মাসুদ হোসেনও। তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবুদ্দীন কোরেশী ছিলেন তৃতীয়জন।
সে সময় তদন্ত কমিটি তার প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে কিছু স্পষ্ট করেনি। তাই এই কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ডিআইজি মিজান বারবার পার পেয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্ত ও বিচার নিয়েও আছে সংশয়। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়ে আসছি। এটি পুলিশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ, পুলিশ আইনের আওতায় পড়বে নাকি তারা আইনের ঊর্ধ্বে- এমন একটি প্রশ্নের উত্তর পুলিশেরই দেওয়া উচিত। এই বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেই পুলিশ নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারবে।’
নতুন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত দ্রুত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন টিআইবিপ্রধান। তিনি বলেন, ‘তিনি নিজে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এই ক্ষেত্রে গাফিলতি তো আছেই।’
‘দুর্নীতি দমন কমিশনেরও উচিত ডিআইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এখানে একটি বিষয় হলো তিনি ঘুষ দিয়ে স্পষ্টই আইনের লঙ্ঘন করেছেন। অন্যদিকে হিসাববহির্ভূত বিপুল সম্পত্তির মালিক তিনি কীভাবে হলেন? যে টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলেছেন, সে টাকারই উৎস কী? সে বিষয়েও সুরারহা হওয়া উচিত।’
নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তিনি (ডিআইজি) তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধ করেছেন। তাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা বিশ্বাস। এটা পুলিশ বাহিনীকেই রক্ষা করতে হবে। আর এটা ভেঙে গেলে গোটা সিস্টেম ধসে পড়বে।’
ডিআইজি মিজানের বিষয়ে পুলিশ তথা সরকারের নির্লিপ্ততায় বিস্মিত খোদ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। গত ১৬ জুন অন্য একটি মামলার শুনানিতে তার প্রসঙ্গ আসে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলমকে বিচারপতি বলেন, ‘ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। হ্যাঁ তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এই মামলায় তাকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’