ঢাবির প্রথম ‘অগ্নিকন্যা’ লীলা নাগের পৈতৃক বাড়ি বেদখলে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫২:৫৭,অপরাহ্ন ১৩ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ১৩১৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা ও নারী জাগরণের পথিকৃত লীলা নাগের পৈতৃক বাড়িটি বেহাত হয়ে গেছে। এলাকার চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী পরিবার এটি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার মানুষের দাবি বাড়িটি উদ্ধার করে সেখানে লীলা নাগের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী এবং বাংলা ভাষায় মহিলা সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা মাসিক জয়শ্রী পত্রিকার সম্পাদিকা লীলা নাগের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর লীলা নাগ ও অনিল রায় দম্পতি পূর্ববঙ্গে বসবাস করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তৎকালীন মুসলিমলীগ শাসকেরা তাঁদেরকে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করে।
মূলত সেই সময়েই লীলা নাগ এর পৈতৃক বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে পাঁচগাঁও গ্রামে আলাউদ্দিনের চক্রান্তে ৬৯ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার পর এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করে কৌশলে আশপাশ এলাকার প্রায় শত কোটি টাকার ১৭ একর ফসলি জমি ও বাড়িটি দখলে নেয়া হয়। এর মাধ্যমে লীলা নাগের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়। লীলা নাগের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বাড়ির বৈঠকখানাটি জরাজীর্ণ অবস্থায় এখনো টিকে আছে। তাও ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। যে কোন সময় শেষ স্মৃতিচিহ্ন বৈঠকখানাটিও ভেঙ্গে যেতে পারে ।
লীলা নাগ স্মৃতি পরিষদের সম্পাদক মো: তোফায়েল আহমদ বলেন, লীলা নাগের স্মৃতি বিজড়িত রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের পৈতৃক বাড়িটি উদ্ধারে স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু, কোন ফলোদয় হয়নি। প্রয়াত যুদ্ধাপরাধী আলাউদ্দিনের পরিবারের হাত থেকে বাড়িটি উদ্ধার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের তত্ত্বাবধানে লীলা নাগের স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে একটি জাদুঘর গড়ে তোলার দাবি করেন তিনি।
আলাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে লীলা নাগের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত কুঞ্জলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মুনিম চৌধুরী জানান, বাড়িটি তারা জবর দখল করেননি। বাড়িটি নিয়ে আদালতে মামলা হলে হাইকোর্ট খাজনা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, আলাউদ্দিন চৌধুরীর পরিবার বাড়িটি রক্ষায় মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় তারা পরাজিত হলে উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। মামলাটি এখনো চলছে।
নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়ি দখলমুক্ত হওয়ার পর লীলা নাগের বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবি তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গেল ১১ জুন ছিল লীলা নাগের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।