আইনজীবী আবিদা সুলতানা খুনের রহস্য জট খুলতে শুরু করেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৬:৫২,অপরাহ্ন ৩০ মে ২০১৯ | সংবাদটি ১৪৮৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবিদা সুলতানা খুনের ঘটনায় জেলাজুড়ে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও কৌতূহল। ঘাতকরা কেন তাকে খুন করল। চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনার নেপথ্যের কারণ কি এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু হচ্ছে না এই হত্যার নেপথ্যের কোনো ক্লু উদঘাটন। মামলার এজাহারে উল্লিখিত চার আসামির মধ্যে ৩ জনই আটক রয়েছেন। ১০ ও ৮ দিন করে তারা রিমান্ডেও রয়েছেন। হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা মসজিদের ইমাম তানভীর আলম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
এছাড়া রিমান্ডে আসামিরা মামলার এজাহারের বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বড়লেখা থানার ওসি (তদন্ত) মো. জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, এজাহারে উল্লিখিত পলাতক আসামি আফছার আলমকে (২২) গ্রেপ্তার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
খুন হওয়া আইনজীবী আবিদা সুলতানার ব্যবহারকৃত ২টি মুঠোফোনই উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে আইনজীবী আবিদা সুলতানার স্মার্ট ফোনটি শ্রীমঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। ইমাম তানভীর শ্রীমঙ্গল আসার দিন গাড়ি চালকের কাছে ১ শত টাকায় ফোনটি বিক্রি করেছিল। অপর মুঠোফোনটি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুনা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আসামি ইমাম তানভীর যেখানে অবস্থান নিয়েছিল সেখান থেকেই ওই মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়। উভয় মুঠোফেন উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. আবদুস ছালেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুঠোফোন দুটি উদ্ধার হওয়ায় ক্লু উদঘাটনে অনেকটা সহায়ক হবে বলে ধারণা করছেন তদন্ত কাজে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
মৌলভীবাজারের চাঞ্চল্যকর আইনজীবী হত্যা মামলার এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া (৪০)। মামলার আসামি হলেন তানভীর আলম (৩৪), পিতা-ময়নুল আলম, আফছার আলম (২২), হালিমা সাদিয়া (২৮), স্বামী তানভীর আলম, নেছার বেগম (৫৫), স্বামী ময়নুল আলম, স্থায়ী ঠিকানা-ছিল্লারকান্দি, থানা-জকিগঞ্জ, জেলা- সিলেট, বর্তমান ঠিকানা থানা- বড়লেখা, জেলা মৌলভীবাজার। এই মামলার সাক্ষী রাখা হয়েছে ৫ জনকে। ঘটনার সময় ও তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৬শে মে রোববার সকাল অনুমান সাড়ে এগারোটা হতে বিকেল অনুমান ৫টার মধ্যে যে কোনো সময়।
আবিদা সুলতানা (৩৫) মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের একজন নিয়মিত আইনজীবী ছিলেন। তার স্বামী পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট মেডিকেল কোম্পানি ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা সদরে চাকরি করেন। আবিদা সুলতানার বাবা মৃত ও জীবিত মা একজন মানসিক রোগী। তাই তিনি তার মেঝো মেয়ের বাড়িতে তারই তত্ত্বাবধানে থাকেন। ঘটনাস্থল আবিদা সুলতানার বাবার বাড়ির বাসায় ৪টি কক্ষের মধ্যে ২টি কক্ষে আইনজীবী আবিদা সুলতানা তার স্বামী ও অন্য দুই বোনের পরিবার মাঝেমধ্যে আসতো ও ব্যবহার করতো। অন্য ২টি কক্ষ আসামি তানভীর আলম ভাড়াটিয়া হিসেবে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আবিদা সুলতানা প্রায় প্রতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক অফিস বন্ধের সময় ঘটনাস্থলের বাসাতে আসতেন ও পৈতৃক বিষয় সম্পত্তি দেখাশুনা ও খোঁজখবর করতেন।
ঘটনার কিছুদিন আগ থেকে প্রধান আসামি অনাধিকারভাবে আবিদা সুলতার পৈতৃক সম্পত্তির মূল্যবান গাছপালা বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন। এবিষয়ে নিয়ে আবিদা সুলতানার সঙ্গে আসামির মনোবিবাদ ঘটে। এ ঘটনায় আবিদা সুলতানা তানভীরসহ অন্য আসামিদের বাসা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে বিভিন্নভাবে প্রধান আসামি আবিদা সুলতানার সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করেন।
২৫ মে দুপুর বেলা আবিদা সুলতানা বাড়িতে আসেন এবং ২নং আসামিকে বলেন, আমি এখন বিয়ানীবাজার আমার মা ও বোনের কাছে যাচ্ছি। আগামী রোববার সকালে আসব তুমি আমার জন্য কিছু চাল, আম, কাঁঠাল জাতীয় ফলাদি প্রস্তুত করে রাখিও। ওই দিনই আমি মৌলভীবাজার বাসায় নিয়ে যাব। ঘটনার দিন সকালে আবিদা সুলতানা বিয়ানীবাজার হতে ঘটনাস্থলের বাসায় পৌঁছান। সকাল অনুমান সাড়ে এগারোটার দিকে ফোন দিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন। ইফতারের আগে মৌলভীবাজার শহরে পৌঁছাবেন বলেও জানান। এর পর বিকেল অনুমান ৫টার সময় তার স্বামীর মুঠোফোন হতে ফোন দিলে তার মুঠোফোনে বন্ধ পাওয়া যায়। তার বোন ও মামলার অন্য সাক্ষীগণকে ফোন দিয়েও তার খবর নিশ্চিত হতে পারেননি তার স্বামী। মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েন। তার বোন বিয়ানীবাজার হতে ও তার স্বামী মৌলভীবাজার হতে বড়লেখায় আসেন। তারা সকলেই আইনজীবী আবিদা সুলতানাকে খুঁজে না পেয়ে বড়লেখা থানায় আশ্রয় নেন। তখন ঘটনাস্থলের বাড়িতে আসামিদের ভাড়াটিয়ার ঘর তালাবদ্ধ ছিল।
বড়লেখা থানা পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলের নিকটস্থ তানভীরের স্ত্রীর পিতার বাড়িতে সব আসামিকেই পাওয়া যায়। ওদেরকে আইনজীবী আবিদা সুলতানার অবস্থানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারাও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। থানা পুলিশ তখন তাদের ওখান থেকে থানায় নিয়ে আসেন এবং তাদের কাছ থেকে ঘটনাস্থলের ঘরের চাবি সংগ্রহ করে আবিদা সুলতানার স্বামী ও স্বজনসহ পুলিশের লোকজন ঘটনাস্থলের ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। তার গলার ডান পার্শ্বে থুঁতনির নিচে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম। মাথায় মারাত্মক ভারী বস্তু দ্বারা আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান। শরীরের কাপড় চোপড় অসংলগ্ন ও ছেঁড়া। সমস্ত ঘরে রক্তের চিহ্ন ও ঘরের সব জিনিসপত্র এলোমেলো।
কে এই তানভীর:
সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি গ্রামের ময়নুল ইসলামের ছেলে তানভীর আলম। স্থায়ী ঠিকানা সিলেটের জকিগঞ্জ হলেও কয়েক বছর ধরে বড়লেখা উপজেলার চরকোনা গ্রামে বসবাস করত। নিজের এলাকায় বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ছিলেন এই তানভীর। খোঁজ নিয়ে এমনটি জানা গেছে। মাত্র ৪ মাস আগে নিহত আবিদা সুলতানার পিতার তৈরি করা পারিবারিক মসজিদের ইমাম হিসেবে তিনি চাকরি নেন।
এর আগে বড়লেখার বরইতলি নামক এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করলেও মসজিদ কমিটি সেখান থেকে বের করে দেয়। নতুন কর্মস্থল মসজিদে যোগদানের পর স্ত্রী, মা ও ছোটভাইকে নিয়ে নিহত আবিদা সুলতানার বাবার বাসায় নামমাত্র ভাড়ায় বসবাস করতেন।