আলোকিত মানুষ : আনোয়ার শাহজাহান
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০০:৩৮,অপরাহ্ন ০৫ মার্চ ২০২১ | সংবাদটি ৮৯০ বার পঠিত
আফতাব চৌধুরীঃ
একজন লেখক, গবেষক, সংগঠক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক আনোয়ার শাহজাহান তারুণ্যদীপ্ত বহুমাত্রিকতায় পরিপূর্ণ জীবন। একজন নিষ্ঠাবান মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন দেশ বিদেশে।
প্রবাস জীবনের যান্ত্রিক ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে তাঁর সৃজনশীলতা, কর্মচাঞ্চল্য, পরিশ্রমপ্রিয়তা, প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা দেশে-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী সৃষ্টি করেছে। এটা একক কোনো ব্যক্তির জীবনে বড় অর্জন। হৃদয়ের ভেতর অযুত সম্ভাবনা এবং স্বপ্নরোপিত না থাকলে, বহুমুখী ব্যস্ততায় এমন অবস্থান সৃষ্টি করা আদৌ সম্ভব নয়। আনোয়ার শাহজাহান একজন সচেতন এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক। আমিও ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় থেকে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে আমার কুড়িটিরও বেশি গ্রন্থ। এটা কিন্তু ঠিক পেশা নয়, নেশার মতই। আনোয়ার শাহজাহানও সাংবাদিকতার অঙ্গনে কাজ করে অনুভূতি এবং ভালো লাগার আবেশে জড়িয়ে গেছেন। কারণ সাংবাদিকতায় তাঁর বহুগামী বিচরণ এবং সৃজনশীলতার অনন্য প্রকাশ মূর্তমান সত্যকেই উন্মোচিত করেছে। এছাড়াও তাঁর বিস্তৃত কর্মজীবনে অনন্য নির্মাণ এবং রচনাশৈলী সেই নিষ্ঠার পরিচয় বহন করে। ঐতিহ্য সচেতনতা এবং অনুসন্ধানী মনোভাব যে দেশের স্বকীয়তা-সভ্যতা-সমৃদ্ধ অতীতকেই বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা করে তোলে তাঁর বাস্তব দৃষ্টান্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আনোয়ার শাহজাহান। বিশেষ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় যে অপার দক্ষতা, সক্ষমতা, মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন তা তাঁর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
আনোয়ার শাহজাহান ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের রায়গড় গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ভিন্ন মাত্রায় যাপিত জীবনের অধিকারী আনোয়ার শাহজাহান নব্বই দশকের প্রথম দিক থেকেই লেখালেখি এবং সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হন। তিনি দৈনিক খবর পত্রিকার গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা ‘জনতার মিছিল’। পরবর্তীতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে গোলাপগঞ্জ প্রেসকাব প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রোপটে সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের প্রত্যয় নিয়ে অদ্যাবধি কাজ করে চলেছে গোলাপগঞ্জ প্রেসকাব। এটা অনস্বীকার্য যে, গোলাপগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে প্রেসকাবের ভূমিকা প্রশংসনীয় এবং এর নেপথ্যে আনোয়ার শাহজাহান এর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আনোয়ার শাহজাহান ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে চলে যান যুক্তরাজ্যে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘পাক্ষিক প্রবাস’ পত্রিকার ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক ‘লন্ডন বিচিত্রা’ এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অনলাইন বাংলা পত্রিকা ‘বাংলালিংক ডটকম’-এর সম্পাদক’র দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ‘আমাদের গোলাপগঞ্জ’ নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। আনোয়ার শাহজাহান গোলাপগঞ্জ প্রেসকাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, লন্ডন বাংলা প্রেসকাবের সদস্য এবং ইউকে বাংলা অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক। যুক্তরাজ্যস্থ গোলাপগঞ্জ হ্যালপিং হ্যান্ডস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত অনলাইন টেলিভিশন ‘জালালাবাদ টিভি’র সত্ত্বাধিকারী। এই টিভিতে প্রতিনিয়ত দেশ, সমাজ, পরিবার, বিশ্ব, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্ম-দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পাশাপাশি সামাজিক দায়বোধ সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে আত্মমর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। অনলাইন তথা জনপ্রিয় গণমাধ্যম ফেইসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে জালালাবাদ টিভি দেখে অসংখ্য দর্শক উপকৃত হচ্ছেন।
আনোয়ার শাহজাহান-এর সাংবাদিকতা এবং গবেষণার প্রান্তিকতা একই মোহনায় ঘনিষ্ঠ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছে যা তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে গভীরভাবে দৃশ্যমান। মূলত ঐতিহ্যসন্ধানী সাংবাদিকতা গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করে বাস্তব উদাহরণ তাঁর অনবদ্য সাহিত্যকর্ম। তাঁর সৃষ্টিকর্মের দিকে প্রাথমিক পরখ করলেই প্রতিভাত হয়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে তাঁর মেলবন্ধনটা কত গভীর! তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বেশ ক’টি। প্রকাশিত গ্রন্থগুলো : ‘সিলেটে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা’, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা (দুই খণ্ড)’, ‘সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধ’, ‘গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ এবং `Galantry award recipient freedom fighters of Sylhet’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শুধু তাই নয়, তাঁর সৃজনশীল গবেষণাকর্মের আলোচনায় একটি বিশাল সমালোচনাগ্রন্থ সম্পাদনা সম্ভব। কারণ বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা। তাঁর গ্রন্থগুলো শুধু গবেষণাকর্মের দায় নয়, বরং এটি জাতির জাতিসত্তাকে অনাগত প্রজন্মের কাছে তোলে ধরার জন্য এক মহৎ উদ্যোগ। এ দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর নামটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব তথা খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী তিনি সন্নিবেশিত করেছেন যা একটি অনন্য কাজ। কেননা সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধকে তিনি এমন অসাধারণ তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন যা একটি জাতির তথা আঞ্চলিকতার ইতিহাসে দুর্বোধ্য সংকলন। তিনি এমন অনেক স্থানের বর্ণনা দিয়েছেন যা অনেক বোদ্ধামহলের ব্যক্তিবর্গও জানেন না। তাঁর মাধ্যমে এসব স্থান ও সৌধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের কাছে ধারণা সুস্পষ্ট হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার। গবেষক আনোয়ার শাহজাহান-এর ‘গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থটি অনন্য। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, প্রতিটি প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের ব্যক্তিবর্গের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান যা অদ্যাবধি দৃশ্যমান। এছাড়া এই অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এবং ঋদ্ধ চেতনার ধারক-বাহক। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্ম-দর্শন, ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি দেশ নির্মাণে এই অঞ্চলের ব্যক্তিবর্গের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। ইতিহাস-ঐতিহ্যের বর্ণনায় তিনি এমন পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন যে, তা গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নিজেকে স্বকীয়তায় উজ্জ্বল করে তুলেছেন। নিঃসন্দেহে এই গবেষণাটি যেকোনো এলাকার আঞ্চলিক ইতিহাস-ঐতিহ্য নির্মাণে প্রেরণা এবং মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। অসাধ্য পরিশ্রমলব্ধ এই গবেষণাটি ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে যা নিশ্চিত বলা যায়।
আনোয়ার শাহজাহান একজন খ্যাতিমান লেখক। লেখালেখিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘মধ্যাহ্নের কোলাহল’ নামক কাব্যগ্রন্থ তার সম্পাদনা জীবনের মাইলফলক। সিলেটের তৎকালীন নবীন-প্রবীণ আটান্ন জন কবির কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে কবি হিসেবেও পরিপূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ করেন আনোয়ার শাহজাহান। কাব্যগ্রন্থটির মাধ্যমে কবি সাহিত্যিকদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় লেখক পরিষদ ঢাকা থেকে ‘লেখক সম্মাননা পদক’-এ ভূষিত হন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘বিলাতের দিনগুলি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ নামক গ্রন্থ। এ গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাঁর সম্পাদনায় অনেক সাময়িকী এবং সাহিত্য-পত্রিকা প্রকাশিত হয় যা থেকে তাঁর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এবং ভালোবাসা প্রকাশ পায়। কাব্যগ্রন্থটির মাধ্যমে কবি-সাহিত্যিকদের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। একজন সমাজসেবক হিসেবে আনোয়ার শাহজাহান-এর রয়েছে অসামান্য খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন যা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সমাজকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এসই ফাউন্ডেশন (ইউকে) কর্তৃক ‘কমিউনিটি জিনিয়াস’ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
আনোয়ার শাহজাহান এখন যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা। যারাই ওইসব দেশে ভ্রমণ করেছেন তারা নিশ্চয়ই সেসব দেশের লোকদের ব্যস্ততা সম্পর্কে অবগত আছেন। আমার নিজের চোখে ওইসব দেশ ভ্রমণে গিয়ে সেসব দেশের জীবনযাত্রা দেখেছি। দেখেছি মানুষ কতটা যান্ত্রিক তথা রোবটের মত জীবনযাপন করছে। কারো আবেগ-অনুভূতি বোঝার মত পরিবেশ সেসব দেশে নেই। অপরদিকে একটি অদৃশ্য প্রেষণা সবাইকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। খ্যাতি, যশ, টাকা-পয়সা, ক্ষমতা সর্বোপরি একটি সামাজিক স্ট্যাটাস অর্জনের পিছনে মানুষের কঠোর পরিশ্রম রীতিমতো অবাক করেছে আমাকে। কিন্তু আনোয়ার শাহজাহান-এর সামগ্রিক জীবনপাঠে এটাই মনে হয়েছে, তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। একজন ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তি হিসেবে অন্য সকলের মত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেননি কিংবা সম্পদের মোহে হন্য হয়ে বেড়াননি। তিনি তাঁর জীবনকে সার্থক করে তোলার জন্য সাহিত্য-সংস্কৃতি, গবেষণা, সমাজসেবার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন যা তার ব্যক্তি মহত্ত্বের পরিচয়।
আনোয়ার শাহজাহান একজন লেখক, গবেষক, সংগঠক, ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক হিসেবে সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কারণ সবদিক সামলিয়ে তিনি নিজেকে একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক হিসেবে সামাজিক দায়বোধ, গবেষক হিসেবে ঐতিহ্যসন্ধানী, সংগঠক হিসেবে আন্তরিক, ব্যবসায়ী হিসেবে সৎ ও দক্ষ এবং সমাজসেবক হিসেবে মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন-এই বহুমুখী গুণ তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের ভিন্নতাকেই মূর্তমান করে তুলেছে। অবশ্য সেখানে সততা, দক্ষতা এবং যোগ্যতার মিশেল যারপরনাই বিদ্যমান। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সোনা ফলিয়েছেন। আনোয়ার শাহজাহান যে সত্যটি মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরেন তা হচ্ছে কোনো মানুষের প্রতিই তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদ্বেষ নেই-পরস্পরের মধ্যে প্রীতি, মমতা, সঞ্চার করে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আপন ও দুঃখীজনের অন্তরঙ্গ বন্ধু আনোয়ার শাহজাহান রসবোধে গভীরতা সুবচনীয়, তীব্র ও ঝরঝরে। সাদাসিদে জীবনযাপনে অভ্যস্ত, কথাবার্তায় অমায়িক, মার্জিত, নিমেষে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যতটা বিনয়ী ততটা সংযমী। একটি অহংবোধ তার মধ্যে কাজ করে তা হচ্ছে সৎ চিন্তা ও উদার মানসিকতা। তার কাছে আছে মানবতা, আছে জ্ঞান, সম্মানবোধ, সহানুভূতি ও উদারতা। জীবনে হয়ত অনেক কিছুই তার পাওয়ার সখ ছিল-পাননি। এ না পাওয়াতে তার কোনো দুঃখ নেই, আফসোস নেই যা পেয়েছেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন আল্লাহ যাকে যেভাবে পছন্দ করেন সেভাবেই তাকে দেখেন-সেভাবেই তাকে রাখেন। এতে মানুষের হাত নেই। আর এ বিশ্বাসেই তিনি সন্তুষ্ট।
আনোয়ার শাহজাহান আমার রক্তের বা দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ও নয়। তারপরও আমরা উভয়ে আত্মার টান অনুভব করি। কোনো স্বার্থ বা সুবিধা আদায়ের চেষ্টা আমরা দু’জনে করিনি কোনোদিনই। বয়সের কিছু ব্যবধান থাকলেও স্বার্থহীন যোগাযোগের কারণেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক চমৎকার বলতে পারি। তিনি আমাদের আপনজন, আমাদের ভালোবাসেন, মানুষকে ভালোবাসেন অকাতরে। রাজনীতি, তাঁর সাহিত্য ও গবেষণার ক্রিয়াকর্ম সব কিছুই মানবমুখী, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন, সততা ও সারল্যে ভরপুর। তার সাহচর্য লাভ করার দুর্লভ সুযোগ সৌভাগ্যের অধিকারী বলে মনে করেন অনেকেই, আমিও বাদ নেই। তাই তাঁর সম্পর্কে আমার যা কিছু বলা তার সবটুকু আমার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ও বাস্তব দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকেই।
প্রিয় আনোয়ার শাহজাহান মুক্ত চিন্তার প্রতিভূ জীবন রসিক-মুখর থাকুন জীবন ভর। লিখতে থাকুন সভ্যতা, সততা, স্বাধীনতার না বলা কথা।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জীবন সদস্য-বাংলা একাডেমী, ঢাকা ও সিলেট প্রেসকাব।