রেড জোন এলাকায় ১৪-২১ দিন থাকবে কঠোর লকডাউন!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২১:১৩,অপরাহ্ন ১২ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৫৬০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সাত দফায় ছুটি বাড়িয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনের সময়ও। টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে সীমিত পরিসরে সচল হয়েছে অফিস-আদালত। ঘুরছে কলকারখানা ও গাড়ির চাকা। কর্মে ফিরেছে শ্রমজীবী মানুষ। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে এসেছে গতি। নির্ভর করতে হচ্ছে না সরকারি ত্রাণের ওপর।
করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি তথা লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা, কর্মহীন মানুষের খাদ্য সংস্থানসহ এবার সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে চায় সরকার। এজন্য চলতি বছরের বাজেটেও স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি খাতেই করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তাই আর গোটা দেশ লকডাউন নয়, অর্থনীতি বাঁচিয়ে অধিক সংক্রমিত ‘রেড জোনগুলোতে’ কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুক্রবার (১২ জুন) ছুটির দিনে সরকারের পাঁচ মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব অনলাইন বৈঠক করেন। বৈঠকে অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলোতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়।
দীর্ঘ সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে বিধি মেনে অফিস আদালত এবং গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্তই নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হবে ১৫ জুনের পরেও। সরকার ফিরবে না আর দেশব্যাপী লকডাউনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবন ও জীবিকা- দুটো নিয়েই এগোচ্ছেন। তিনি জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এসব বিষয় আলোচনা হয় পাঁচ মন্ত্রীর বৈঠকে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সভায় অংশ নেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে যুক্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত রেড জোন জায়গাগুলো লকডাউন থাকবে। রেড জোনগুলোতে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট হবে। এসব এলাকায় স্পেশাল কেয়ার থাকবে, যাতে মুভমেন্ট না থাকে। রেড জোনগুলোতে অফিস বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, এসব এলাকায় কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। যাদের খাবার প্রয়োজন তাদের খাবার বিতরণ, সামর্থ্যবানদের কেনাকাটার ব্যবস্থা করা হবে। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ জনসাধারণের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত থাকবে।
ফরহাদ হোসেন বলেন, এসব এলাকায় ১৪-২১ দিন এমন লকডাউন থাকবে, যাতে সংক্রমণ বিস্তৃত না হয়।
সংক্রমণের হটস্পট ঢাকা, উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন এখানে আক্রান্তের হার ৭২ শতাংশ। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম। আর সারাদেশে ১৬ শতাংশ। এজন্য ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আগামী ১৫ জুনের পর কী সিদ্ধান্ত হবে- এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সীমিত পরিসরে চলার ব্যবস্থা নিয়েছি আপাতত এ সিদ্ধান্ত থাকছে।
বৈঠকে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে যখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে তখন সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ন্যস্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ করোনা ছাড়াও অন্য আইন-শৃঙ্খলাজনিত বিষয় সামলাতে গিয়ে শুধু করোনা প্রতিরোধে এত সংখ্যক জনবল পদায়ন করা কঠিন হবে। সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ এটা কার্যকরী করতে সহজ হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটি সক্রিয় করার আহ্বান জানান।
শুক্রবার আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক হওয়া নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং আসার সময় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের রিপোর্ট এখন আসছে। নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা বাড়ি গেছেন।
ঢাকা শহরে ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরছে উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা পরছে না তাদের পরতে হবে। মাস্ক না পরলে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। গ্রামেও যেন মাস্ক পরে। এ প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন বলেন, দেখা যায় রিকশাচালকেরা মাস্ক পরছে না, তাদেরও পরতে হবে। মাস্ক পরে রিকশা চালানো হয়তো কঠিন কিন্তু জীবন বাঁচানোর জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত কাজ করছি। মানুষ যেন সবাই মাস্ক পরে, অযথা যেন না বের হয়।