এমন বিষাদময় রমজান ও তারাবীহ কখনো আসেনি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৩:২৫,অপরাহ্ন ২৪ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৪৩৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পৃথিবীজুড়ে নেমেছে স্তব্ধতা। সাধারণ জনজীবন আজ বিপন্ন অদৃশ্য এক ভাইরাসের ভয়ে। এখনো কোনো প্রতিষেধক বেরোয়নি কোভিড-১৯ দমনে। নেই কোনো চিকিৎসাও। বলা হচ্ছে, ঘরে থাকা আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া করোনা ঠেকাতে কিছুই করার নেই।
এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও ঘরবন্দি হয়ে আছে। ১৬ কোটি মানুষ আজ চারদেয়ালের মাঝে দিনকে রাত করছে, রাতকে করছে দিন। বন্ধ করা হয়েছে সব জনসমাগম। মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সেই সুবাদে রমজানের তারাবির নামাজ আদায়েও মুসল্লি সংখ্যা ঠিক করে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১২ জনের বেশি একজনও যেতে পারবেন না মসজিদে। তাই এবার রমজানের রোজার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তারাবিহ্ও পড়তে হচ্ছে ঘরে।
এমন বিষাদময় রমজান অতীতে কখনো আসেনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জীবনে। রমজান ইবাদতের মাস। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মাস। সবাই মিলে ইবাদতের যে প্রশান্তি মুসল্লিরা পেতেন এবার আর তা মিলবে না। এজন্য কারো মনই ভালো নেই।
মুসলমানদের পবিত্র ভূমি মক্কা এবং মদিনার মসজিদেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে তারাবির নামাজ। সেখানেও নেমেছে লকডাউনের খড়গ।
ষাটোর্ধ আজগর আলী বলেন, এমন রমজান কখনো দেখিনি কখনও। রমজানকে বরাবরই পেয়েছেন উৎসবের আমেজে। রোজার চাঁদ দেখার জন্যও মনে যে আনন্দবোধ করতেন এবার যেন তা নেই। মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন এক ফাঁলি চাঁদের জন্য। তারপর মসজিদে মসজিদে ঘোষণা হতো, ‘আহলান, সাহলান, মাহে রমজান।’ এই ঘোষণা যতদ্রুত ভেসে যেত আনন্দের বার্তাও যেন ততদূরই পৌঁছে যেত।
তার ভাষায়, ‘চাঁদ দেখার ঘোষণার পর পরই তারাবির নামাজের প্রস্তুতি শুরু করতাম। নামাজে প্রথম কাতারে গিয়ে শামিল হওয়ার জন্য তাড়না কাজ করতো। এবার মসজিদ থেকে যখন ঘোষণা আসছিল, মনে হচ্ছিল আনন্দ নয়, যেন শোক ছড়িয়ে গেল ভেতরে।’
আনোয়ার হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘ভাবতে পারেন রমজান মাস শুরু হলো অথচ মসজিদে যেতে পারবো না তারাবির নামাজ পড়তে! সারা বছর তো কাজের ব্যস্ততায় খুব একটা মসজিদে যাওয়া হয় না। রমজান এলে এই সুযোগ পাই। পুরো মাস তারাবি না পড়লে ঈদের আনন্দকে আনন্দ মনে হয় না।’
রমজানে ইফতারে থাকে বাড়তি আয়োজন। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে যে যার জায়গা থেকে ইফতারের প্রস্তুতি নেন। পাড়ামহল্লা, বাজার হাটে বসে ইফতারের আয়োজন।
সরকারি কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। করোনার ভয়ে বাইরে যাচ্ছেন না। মুঠোফোনে বললেন, ‘ভাবতে ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠছে। প্রতিবছর ইফতার উপলক্ষে অনেক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেখা হয়। সারা বছর পাওয়া না এমন লোকজনও একসঙ্গে হই। এবার এর কিছুই হবে না। কী এক দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা!’
রমজানে ইফতার সামগ্রীর পসরা ক্ষুদ্রব্যবসায়ী পেয়ার আলীর আয়ের অন্যতম উৎস। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট জিনিসপত্র পাইকারি কিনে দোকানে দোকানে সরবরাহ করেন। কেবল রমজান এলে ইফতার সামগ্রীর ব্যবসা করেন। এ থেকে যে বাড়তি আয় হয় তা দিয়ে ঈদের খরচ মিটে যায়। কারণ ঈদ তো একার নয়, সবাইকে নিয়েই করতে হয়।
আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘ঈদ আসলে বৃদ্ধ বাবা-মা চেয়ে থাকে। সন্তানরা চেয়ে থাকে। নতুন জামা পাবে। ভালো খাবার পাবে। তাদের জন্য পুরো রোজার মাসে খাঁটি। ইফতার বানায়ে বিক্রি করি। এখন দোকানে মাল দেওয়া বন্ধ। ইফতার বিক্রিও আর হবে না। জানি না এবার ঈদে নতুন জামা তো দূরে থাক, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবো কি না।’
রমজান মাসের শুরু থেকেই একটু একটু করে জমে ওঠে মার্কেট আর শপিংমলগুলো। যারা শেষ দিকে ঝামেলা পোহাতে চান না, তারা আগেভাগেই সেরে রাখেন কেনাকাটা। সেই উপলক্ষে রমজানের শুরু থেকেই ঈদের জন্য নানান পোশাকের পসরা সাজায় বিক্রেতারা। এবারের চিত্র একেবারে উল্টো। তালা ঝুলছে বড় বড় শপিংমল আর মার্কেটগুলোতে। কোথাও কেউ নেই। খুলছে না খাদ্য-ওষুধ ছাড়া অন্য কিছুর দোকান।
একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের রমজান আমাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহপাকের কাছে গোনাহ মাফের জন্য আরও বেশি করে ফরিয়াদ করত হবে। তার কাছে করোনাভাইরাসের বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ চাইতে হবে। আল্লাহ পাক বালা মুসিবত দেন, তিনিই আবার তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেন।’
এই আলেম বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে ইবাদতের বেশি ফজিলত। যেহেতু মানুষ বাধ্য হয়ে এখন ঘরে আছেন, তাদের উচিত হবে ইবাদত বন্দেগিতে সময় কাটানো। আর বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দোয়া করতে হবে।’