বাংলাদেশের ১৫ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫০:২১,অপরাহ্ন ০৭ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ১৪৬৩ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। গত চারদিন ধরে দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে মানুষ। এমনকি প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এ পর্যন্ত দেশের ১৫ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া একই সময়ে রোগটিতে মারা গেছেন আরও ৩ জন। মৃত্যুর এই সংখ্যাও একদিনে সর্বোচ্চ।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন নতুন জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে ‘ক্লাস্টার’ (একই এলাকায় কম দূরত্বে একাধিক আক্রান্ত) এলাকার সংখ্যাও। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে করোনার ‘হট স্পট’ হয়ে উঠছে বিভিন্ন লোকালয়।
এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এতদিন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই লোকজনকে রাস্তাঘাটে নামতে দেখা গেলেও, গত দুদিন ধরে সে চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। খুব বেশি প্রয়োজনীয় কাজ না থাকলে মানুষ এখন পথেও নামতে চাইছেন না। সারা দেশে করোনা নিয়ে থমথমে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
সোমবার (৬ এপ্রিল) নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং এটি আর এক স্থানে সীমাবদ্ধ নেই। প্রত্যেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট হলে অবহেলা না করার পরামর্শ দেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে নতুন শনাক্ত ও মৃতদের তথ্য দেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি জানান, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সর্বমোট আক্রান্ত ১২৩ জন।
সোমবার আরও তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতের সংখ্যা সর্বমোট ১২ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন কেউ সুস্থ হয়নি। তাই সর্বমোট সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৩৩। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে। ২১-৩০ বছরের মধ্যে আছেন ৬ জন। বাকিদের বয়স জানানো হয়নি।
আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৩০ জন এবং মহিলা ৫ জন। ৩৫ জনের ক্ষেত্রেই কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং (সংক্রমণের উৎস) জানা যায়নি। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্ত হওয়া রোগী রয়েছেন ঢাকায় ৬৪ জন ও নারায়ণগঞ্জে ২৩ জন। এ তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চ ১২ জন করে রয়েছেন।
মৃত তিনজনের বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, একজন গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন। তিনি সকালে (গতকাল) মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকি দুজন হাসপাতালে আসার পরপরই মারা গেছেন। তারা দুজনই নারায়ণগঞ্জের।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১০৭জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৩৯ জনকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১১ হাজার ৩৩০ জন। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৬৬ হাজার ৮১০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৪টি পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। মজুদ আছে ১ লাখ ৭৭৮টি। ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩, ৩৩৩ ও আইইডিসিআরের হটলাইনে কল এসেছে মোট ৬৭ হাজার ২১০টি। ২৪ ঘণ্টায় স্থল, সমুদ্র ও বিমানপথে দেশে প্রবেশ করেছেন মোট ২৬৯ জন। তাদের প্রত্যেককে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দেশের ১৫টি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ। এসময় মোট শনাক্ত ১২৩ জনের মধ্যে ১২১ জনের এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান দেন তিনি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৬৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৩ জন, মাদারীপুরে ১১ জন, গাইবান্ধায় ৫ জন, ঢাকা জেলায় (মহানগরীর বাইরে) ৪ জন, জামালপুর ৩ জন ও চট্টগ্রামে ২ জন রোগী আছেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, রংপুর, শরীয়তপুর ও সিলেটে ১ জন করে রোগী রয়েছে।
তিনজন মৃতের মধ্যে একজন রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক। তার মৃত্যুর সময় চিকিৎসকরা কেউ তার পাশে ছিল না, পরিবারের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এমন কিছু হয়েছে কি না আমি নিশ্চিত নই। তিনি হাঁপানি রোগে ভুগতেন। এরকম ব্যক্তিদের করোনায় মৃত্যুর শঙ্কা বেশি। তবে আমি নিজে প্রতিদিন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। দুদক মহাপরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও খোঁজ রাখা হতো। কিন্তু তার মৃত্যুর মুহূর্তে চিকিৎসক কোনো কারণে বাইরে গিয়ে থাকতে পারেন বা ওয়াশরুমেও যেতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নেব। ’
অনেক চিকিৎসক পিপিই পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, কারা কোথায় কখন পিপিই পরবেন সেই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গাইডলাইন আছে। ওখানে যদি করোনার রোগী থাকে, তাহলে তিনি পিপিই পরবেন। অন্য চিকিৎসার জন্য তো কারও পিপিই পরার দরকার নেই। কোনো চিকিৎসককে করোনা রোগীর সংস্পর্শে যেতে হলে তিনি অবশ্যই পিপিই পাবেন। যেখানে এরকম অবস্থা আছে, সেখানে পিপিইর অভাব নেই।
গ্রাম-উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভুল বুঝাবুঝির তৈরি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি ভালো করে জানার জন্য তেমন লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলেও অনেকের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছি। নমুনা সংগ্রহ মানেই তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। সুতরাং নমুনা সংগ্রহ করলেই তাদের এলাকা লকডাউন করতে হবে না, বাড়ি ঘিরে ফেলতে হবে না। নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেব এবং যেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নেব।