পুলিশের নির্যাতনে হাজতির মৃত্যু, ওসি প্রত্যাহার!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩০:২৬,অপরাহ্ন ২৭ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৫০৯ বার পঠিত
বরগুনা থেকে সংবাদদাতা:: বরগুনার আমতলী থানা হাজতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন পিপিএম স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। ওসিকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করায় সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
তারা দ্রুত ওসি আবুল বাশারের বিচার দাবি করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছর ৩ নভেম্বরে ইব্রাহিম নামে একজনকে হত্যা হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভুক্ত আসামি। মিজানুরের সৎ ভাই শানু হাওলাদারকে সোমবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আমতলী থানা-পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। পরে শানুর পরিবারের কাছে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
শানুর পরিবার টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে থানা হাজতে রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে। নির্যাতন থামাতে আসামির ছেলে সাকিব হোসেন মঙ্গলবার ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। কিন্তু তাতে ওসি তুষ্ট হয়নি। তারা নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
বুধবার (২৫ মার্চ) পরিবারের লোকজন এসে শানু হাওলাদারের সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি, উল্টো পরিবারের লোকজনের সাথে অশ্লীল আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের ছেলে সাকিব।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকালে ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবন্থায় শানুর লাশ পাওয়া যায়।
ওসি আবুল বাশারের দাবি, সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শানু টয়লেটে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে টয়লেটে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে শানু ওসির (তদন্ত) কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি (শুতলি) পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।
আরও পড়ুন
থানায় নির্যাতনে হত্যা, পুলিশ বলছে আত্মহত্যা!
দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, একজন নির্দোষ মানুষকে থানা হাজতে টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহতের ছেলে সাকিব হোসেন আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারের প্রত্যাহারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। তিনিই টাকা না পেয়ে আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকারী ওসির দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ, এসপি পদায়ন) মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, থানায় আসামির মৃত্যুর মূল কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকাজ শুরু করেছি। অল্প দিনের মধ্যেই তদন্তকাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।