খালেদা জিয়া ৭৭৬ দিন পর ফিরোজায় ফিরলেন!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৪:৪২,অপরাহ্ন ২৫ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৯৫৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: অবশেষে মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য তাকে মুক্তি দিয়েছে সরকার।
দুই বছর এক মাস ১৭ দিন (৭৭৬ দিন) সাজা ভোগের পর সরকারের দুটি শর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তিনি মুক্তি পান।
বুধবার (২৫ মার্চ) বিকাল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির প্রক্রিয়া শেষে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে সরাসরি তিনি রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় উঠেন। এ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার।
তিনি জানান, বুধবার বিকাল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউর প্রিজন সেল থেকে খালেদাকে মুক্তি দেওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে গ্রহণ করেন।
মুক্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পর খালেদা জিয়া লিফটে করে হুইল চেয়ারে নিচে নেমে আসেন। এসময় তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও হাসপাতালের নার্স ও আনসার সদস্যরা ছিলেন। এরপর তাকে নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল থেকে রওনা হন। গুলশানে তার বাসভবন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।
দুই শর্তে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে সাজা স্থগিত থাকায় অন্যান্য বন্দির মতো সাধারণ চলাচলের সুযোগ পাবেন না তিনি। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় নিজ বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে তাকে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। তাকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষ কারাগার স্থাপন করে সেখানে রাখা হয়। গত বছরের এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে।
এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করতে ও চিকিৎসা সেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুইদিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ফের একই হাসপাতালে আনা হয় তাকে।
২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি সেখানে ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যানের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তার পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিতে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা অবস্থান করছিলেন।
বিএনপির ও চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানানো হয়। যদিও এই দাবি নিয়ে কয়েক দফায় উচ্চ আদালতে আপিল, রিভিউ আপিল করেও তাকে মুক্ত করতে পারেননি আইনজীবীরা। আর এ নিয়ে বরাবরই আইনজীবীদের সঙ্গে দলের নেতাদের বিরোধ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।