মুচলেকায় জামিন প্রথম আলো সম্পাদক!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৩:১৫,অপরাহ্ন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৩৮৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নিহতের মামলায় দুই হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে জামিন পেলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাত নিহতের ঘটনার মামলায় এ জামিন মঞ্জুর করেন সিএমএম আদালত।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম এ জামিনের আদেশ দেন।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী, আমিনুল গণি টিটো, প্রশন্ত কর্মকার, শ্রী চৈতন্যচন্দ্র হালদার, আশরাফুল আলম।
অন্যদিকে বাদীপক্ষে শুনানিতে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক আসিফ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের জামিন প্রদান করেন। এরপর তাকে সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী সোমবার তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
এরও আগে গত ১৬ জানুয়ারি মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভিশন কবির বকুল, নির্বাহী শুভাশিষ প্রামানিক শুভ, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম পাভেল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসিম উদ্দিন অপু, মোশারফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।
গত বছরের ৬ নভেম্বর নাইমুল আবরারের বাবা মো. মজিবুর রহমান একই আদালতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় এ মামলা করেন। আদালত নিহত আবরারের লাশ দ্রুত কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করাসহ মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্তের পর মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক আব্দুল আলীম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদীর ছেলে নাইমুল আবরার (১৫) গত ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিশোরদের মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যান। সে ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান চলাকালে সাড়ে তিনটার দিকে আবরার বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানের জন্য যে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয় তা অরক্ষিত ছিল। এরূপ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার যে নিরাপত্তামূলক ও সাবধানতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল তা করা হয় নাই। ঘটনাস্থলের অতি সন্নিকটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থাকলেও আবরারকে দূরবর্তী ‘মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে’ নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গত ১ নভেম্বর ইস্যুকৃত মৃত্যুর সনদে দেখা যায়, নিহত আবরার উক্ত তারিখে ৪টা ১৫ মিনিটে ভর্তি হন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪টা ৫১ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। যেখানে আবরার সাড়ে ৩টায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। আর মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও মৃত্যুর সংবাদ গোপন রেখে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে যায়।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আবরারের পরিবারকে ৭টার পর সহপাঠির মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ জানানো ছিল পরিকল্পিত অবহেলাজনিত। পরে বাদী ও তার পরিবার হাসপাতালে আসলে মৃত্যুতে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এরপর বাদী দ্রুত লাশ চাইলে মুচলেকা রেখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন হয়। পরবর্তীতে নাইমুল আবরারের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা দৃশ্যমান হতে থাকে। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গত ২ নভেম্বর ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাদীর দৃঢ় বিশ^াস নাইমুল আবরারের মৃত্যু অপমৃত্যু নয়। বরং আসামিগণের চরম অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসায় অবহেলা, অযত্ন, অমনোযোগী, গাফিলতি এবং অসাবধানতার কারণে ঘটেছে। যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারার অপরাধ।