শিশু জিহাদের মৃত্যু মামলার সব আসামি খালাস!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১১:২৭,অপরাহ্ন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৩৮২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলের পরিত্যক্ত নলকূপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর মামলার সকল আসামিকেই খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। এর আগে নিম্ন আদালতে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাদের সকলের।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এএসএম আবদুল মবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের খালাস দেয়।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর আহমেদ শাকির।
ঢাকার জজ আদালত দুই বছর আগে এ মামলার রায়ে তাদের অবহেলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা করেন।
আসামিদের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, এসএম শাহজাহান, এম সারোয়ার আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন ও এম আলী মর্তুজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা থাকা কয়েকশ ফুট গভীর এক নলকূপের পাইপে পড়ে যায় শিশু জিহাদ।
প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে অনেক নিচে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ওই সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি বেঁচে নেই।
জিহাদের মৃত্যুর ওই ঘটনা সে সময় সারাদেশে আলো্চনার জন্ম দেয়। এর জন্য দায়ীদের শাস্তিরও দাবি ওঠে। এরপর জিহাদের বাবা অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ এনে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক আবু জাফর ২০১৫ সালের এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেন তাতে শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালামকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধজনক প্রাণনাশের’ অভিযোগ আনা হয়।
পরে বাদীর নারাজি আবেদনে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ আরও চারজনকে যুক্ত করে নতুন করে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান।
তাতে জাহাঙ্গীর ও সালাম ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু আহমেদ শাকি, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দিপক কুমার ভৌমিককে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রেল কলোনির একটি পানির পাম্পে লোহার পাইপ দিয়ে কূপ খনন করা হয়। কূপে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে মুখ খোলা অবস্থায় দীর্ঘদিন পরিত্যক্তভাবে ফেলে রাখা হয়। ফলে বাদীর ছেলে জিহাদ কূপের পাশে খেলার সময় পড়ে মারা যায়।
২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু করে আদালত। বাদীপক্ষে ১১ জনের সাক্ষ্য শুনে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন।
ঐ সময় রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এই আসামিদের ‘অবহেলার কারণে’ একটি চার বছরের শিশুর অকাল মৃত্যু হয়েছে খেলতে গিয়ে।
জিহাদের মৃত্যুর দুই দিন পর চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তাতে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আরজি জানানো হয়।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে। জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
পরে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়ে রেলওয়েকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও রেল কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলেও তাদের লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যায়। ফলে ক্ষতিপূরণের রায় বহাল থাকে এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেই ২০ লাখ টাকা জিহাদের বাবা-মায়ের ব্যাংক হিসাবে জমা পড়ে।