পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান চীনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৮:৪৫,অপরাহ্ন ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৬১৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কে চীনে অবস্থানরত ১৭১ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে চ্যালেঞ্জ করেছেন সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের কড়া জবাবও দেন তারা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, চীনের ২৩টি স্থানে থাকা বাংলাদেশিদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সময়মতো পাঠাচ্ছে চীনারা। তারা খাবারের সংকটে রয়েছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে- তা আসলে সঠিক নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে মিথ্যা উল্লেখ করে চ্যালেঞ্জ করেছেন চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির হাইড্রলিক অ্যান্ড ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মো. রতন ভূঁইয়া।
চীনে অবস্থানরত একজন শিক্ষার্খী দেশের গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণই মিথ্যা। আমাদের এখানে যথেষ্ট সমস্যা আছে। আমার কাছে সবকিছুর প্রমাণ আছে। এখানে ১ তারিখে অর্ডার দেওয়া খাবার ডেলিভারি পাই ৬ তারিখে। তবে আজ (রবিবার) থেকে খাবার মোটামুটি সাপ্লাই (সরবরাহ) করছে। আর একটি মাস্ক ২৪ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা বিপদজনক হলেও প্রতি সপ্তাহে আমাদের একটি বা দুটি করে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।
দূতাবাসের গ্রুপ এবং এক্সিকিউটিভ কমিটি আছে- মন্ত্রীর এ বক্তব্যটিকে আংশিক মিথ্যা দাবি করে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের গ্রুপ আগে ছিল, যেটি এখন নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা পূর্বে দেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের ব্যাপারে রতন ভূঁইয়া বলেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্যটি পুরোপুরি মিথ্যা। আমি আগে বহুবার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বারবারই বলেছিলেন ‘নাউ উই অনলি ফোকাস অন উহান’। তাদের নির্দেশে আমরা পরিপূর্ণ তালিকাও প্রণয়ন করেছিলাম কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তবে আমার সাথে তারা কথা বলার সময় সুন্দর ব্যবহার করেছেন, যোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
চীনে থাকা বাংলাদেশিরা পরিপূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। এ ব্যাপারে রতন ভূঁইয়া বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে ইতোমধ্যে ভারত, মরক্কো, আমেরিকা, উজবেকিস্তান, উত্তর সুদানসহ বেশকিছু দেশ তাদের শিক্ষার্থীদের সরকারি সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। এছাড়াও নেপাল, আফ্রিকার মাউরিটেনিয়া- তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। আমরা যদি এখানে নিরাপদেই থাকি তাহলে অন্য দেশ কেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে?
দেশে ফেরার আকুতি জানানো এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সরকার থেকে টাকা চাইনি, বলিনি আমাদের সরকারি খরচে নিয়ে যান। আবেদনটা ছিল একটাই- আমাদের নিয়ে যান। আমাদের সিটি লক ডাউন/বন্ধ না হলে, আমরা নিজ ব্যবস্থায়ই দেশে চলে আসতাম। আমরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা গুয়াংজু পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিতে বললে, সেক্ষেত্রেও তারা না করে দিয়েছেন।
মন্ত্রীর উদ্দেশে রতন ভূঁইয়া বলেন, আপনি মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার হয়তো জানা আছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি বিদেশে কোথাও আটকে পড়ে বা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্রের শুধু উচিতই নয় বরং দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, দেশবাসীর কাছে আমাদের মিথ্যাবাদী বানানো হয়েছে। এখানে অবস্থানরত ১৭২ জন শিক্ষার্থীর কারও যদি কোনো সমস্যা হয় বা কেউ যদি মারা যায়, তাহলে তার দায়ভার নেবে কে?
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অবরুদ্ধ শহর উহান থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ৩১২ বাংলাদেশিকে (১ ফেব্রুয়ারি) দেশে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ সরকার। এদের মধ্যে আটজনের জ্বর থাকায় তাদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিশেষ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। বাকিদের ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় আশকোনায় হাজি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। আর কাউকে সরকারি খরচে আনা হবে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।