বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তায়ালার পরিচয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৩:০৯,অপরাহ্ন ০৯ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ২৭৭২ বার পঠিত
।। মোঃ শামছুল আলম ।।
আল্লাহ’ শব্দটি সৃষ্টিকর্তার ‘ইসমে যাত’ বা সত্তাবাচক নাম। আল্লামা তাফতাযানি বলেন, ‘আল্লাহ’ শব্দটি ঐ চিরন্তন সত্তার নাম যার অস্তিত্য অবশ্যাম্ভাবী এবং যিনি সমস্ত প্রশংসনীয় ও উত্তম গুণের অধিকারী।
‘আল্লাহ’ শব্দ ইলাহুন শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ উপাস্য বা মা’বুদ। আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা ইসলামের মৌল ভিক্তি। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও সঠিক জ্ঞান থাকা প্রতিটি মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। আল্লাহ নামের কোন বহুবচন হয়না। আরবি ভাষায় ‘আল্লাহ’শব্দের হুবহু অর্থজ্ঞাপক কোনো শব্দ নেই। তিনি অনাদি, অনন্ত ।মহান আল্লাহ সবকিছুর মালিক। তাঁর অপার অনুগ্রহেই এ সুন্দর দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আল্লাহর পরিচয়ঃ আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত এক কথায় সবকিছুই মহান আল্লাহ তাআলার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন।
কুরআনের ঘোষণায়-
‘নিশ্চয় তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি- রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত করেন। মৃতকে জীবিত করেন আবার জীবিতকে মৃত্যুদান করেন। তিনিই বীজ থেকে ফসল বের করেন আবার ফসল থেকে বীজ বের করেন। তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি খেজুরের দানা থেকে খেজুর গাছ উৎপন্ন করেন আবার দানাটি বের করেন খেজুর থেকেই।
তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি কাফেরের ঘরে মুমিনকে সৃষ্টি করেন আবার মুমিনের ঘরে কাফের সৃষ্টি করেন। তিনিই ডিম থেকে মুরগি আবার মুরগি থেকে ডিম সৃষ্টি করেন। এ সবই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা বেশুমার রিজিক দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা রিজিক বা সম্পদ থেকে মাহরুম করেন। দুনিয়ার সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। তাহার উপর এইরুপ বিশ্বাস হল প্রকৃত ঈমান।
ঈমান দুর্লভ সম্পদ। বনে অনেক হরিন থাকে। সকল হরিনের মৃগনাভী হয় না। যে হরিনের মৃগনাভী হয় সে হরিন দামী।জগতে বহু মানুষ আছে। সকল মানুষ দামী নয়। যে মানুষের আন্তরে প্রকৃত ঈমান আছে সে সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দামী। তাহার মূল্য সমগ্র জাহান থেকে অধিক।
মহান প্রভুর জাতি নাম আল্লাহ্ । তিনি বিশ্ব জগতের মালিক, পালন কর্তা, রক্ষাকর্তা। তিনি নিখিল বিশ্বজগতের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। দৃশ্যমান আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য , গ্রহ তারা, সাগর মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, সকল মানব-দানব, বিচিত্র রকমের ফুল-ফল পশু-পাখি , আল্লাহ পাক আপন কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। তা ছাড়া ও অদৃশ্যমান আরশ, কুরসী ,লাওহ, মাহফুজ, বেহেস্তদোযখও তিনি সৃষ্টি করে রেখেছেন। বিশ্ব জগতের তিনিই একক মালিক। সকল প্রাণীর জীবনের মালিক, জগতের আস্তিত্বের তিনিই একমাত্র মালিক।পৃথিবী কত কাল থাকবে না থাকবে তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে । তিনি সকল প্রাণীর ও মানব-দানবের জীবন দিয়েছেন, বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং মৃত্যুও তাঁহার হাতে । মৃত্যুর পর সকল জ্বীন ও মানুষকে হাসরের মাঠে একদিন তাহার সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের ভাল মন্দ কর্মের হিসাব নিকাশ দিতে হবে। ঐ দিন হিসাব না দিয়ে কাহারও কদম এক চুল নড়তে পারবে না। সেদিন ঈমানের পরখ হবে এবং নেকী বদীর ওজন হবে।পূর্ণবান আত্মা সুখের দেশ জান্নাতে চলে যাবে এবং ঈমান হারা পাপীরা চির কালের জন্য প্রজ্বলিত আগুনের দেশ জাহান্নামে জলবে। এজন্য যারা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে নিজকে স্রষ্টার নির্দেশিত পথে পার্থীব জীবন বরন করবে, সত্যি কার অর্থে তারাই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিও বুদ্ধি মান। তারা পৃথিবীতে প্রকৃত ইজ্জত-সম্মান পাবে এবং মৃত্যুর পরেও পরকালের জীবনে চির সুখী হবে। আর পৃথীবির স্রষ্টাকে যে মানতে পারল না, চিনতে পারল না, পাক পবিএ জীবন পরিহার করে, ভাল মন্দ বিচার বোধ হারিয়ে স্রষ্টা- বিমূখ অপবিত্র জীবন যাপন করল পৃথিবীতে সে ক্ষনিকের সুখ পেলেও শেষ পরিনামে সে লাঞ্চিত হবে। পর কালের জীবনে তাকে চির দুঃখ ঘিরে ফেলবে।
আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ কুরআনে করিমে নিজেই তার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে নিচে আল-কুরআন থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হলোঃ
১. বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। (সূরা ইখলাসঃ১-৪)
২. তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করুণাময়, দয়ালু। তিনিই আল্লাহ; যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে তা হতে পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশারী, প্রজ্ঞাময়।(সূরা হাশরঃ২২-২৪)
৩. আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, পরে আবার তোমাদের জীবন দেবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এ থেকে কোন কিছু করতে পারবে? তিনি পবিত্র এবং তারা যাদের শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। (সূরা রুমঃ ৪০)
৪. নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা ইউনুসঃ৩)
আল্লাহ কোথায় আছেন বা কেথায় থাকেন? এমন একটা প্রশ্ন আমাদের মনে অনেক সময়ই ঘুরপাক খায়। আল্লাহ আমাদের প্রভু, আমাদের একমাত্র প্রতিপালক। আমাদের সবচেয়ে আপনজন তিনি। আমরা তারই ইবাদত করি । তিনি কোথায় আছেন, কোথায় থাকেন তিনি, সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা তার একজন বান্দা হিসেবেই আমাদের জন্য জরুরি বৈকি। বান্দা যার বন্দেগি করে, তার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জানাশোনা না থাকলে তার বন্দেগিতে সংশয় থেকে যাওয়া বিচিত্র নয়।
আল্লাহ কোথায় আছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই বলছেন- “পরম করুণাময় আরশের উপর সমাসীন আছেন”। [সুরা তাহা, আয়াত ৫]
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। [সুরা আনআম, আয়াত ৩]
আয়াত থেকে জানা যায়, আল্লাহ আসমানে আছেন। তার আরশ আসমানে। কোরআনে এ-ও বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়লার ‘কুরসি’, যেখানে তিনি সমাসীন আছেন, তা আসমান ও জমিনব্যাপী বিস্তৃত । আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, এর সমর্থনে আরো একটি আয়াত পাওয়া যায়, সুরা নাহলে আল্লাহ তায়লা ইরশাদ করেন, তারা তাদের উপরের প্রতিপালককে ভয় করে । [সূরা নাহল, আয়াত ৫০]
হাদিসের দিকে তাকালেও দেখবো, আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূলের (সা.) অনেক বাণী ও সাহাবীদের উক্তি থেকেও । রাসূলকে (সা.) আল্লাহ সপ্তম আকাশের উপরে উঠিয়ে নিয়েছিলেন মেরাজের উদ্দেশ্যে। সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। [বুখারী ও মুসলিম]
এ সুন্দর পৃথিবী, চন্দ্র, সুর্য, গ্রহ, নক্ষত্র দিয়ে সাজিয়ে আল্লাহ পাক আমাদের আরামের জন্যই উপহার দিয়েছেন । সুর্য নিয়মিত মানব জতিকে সেবা দিচ্ছে। কোটি কেটি বৎসর থেকে সে সেবা করে আসছে, কোন দিন বলেনি আমি উদয় হব না! তার শক্তি কমেনি!সুর্যকে কোন দিন চার্জও দিতে হয়নি! অনুরূপ সৃষ্টি জগতের অফুরন্ত সৃষ্টিরাজী আল্লাহর নির্দেশে আমাদেরকে সেবা দিচ্ছে। গভীর ভাবে মহান আল্লাহর এই সকল বিষয়ে যদি আমরা ভাবি এবং নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা করি তাহলে পাক পবিত্র পরাক্রমশালি আল্লাহ্ কে চিনা আমাদের জন্য সহজ হবে। আর তখনই আমরা চির সফলতার পথ খুজে পাব। আল্লাহর সৃষ্ট অগনিত গ্রহ-নক্ষত্র খচিত সুন্দর পৃথিবীর বিশাল বৈচিত্রের দিকে তাকও। কত বিচিত্র রং এর ফুল ফল পাক-পাখালী ,গাছ তরুলতা সাগর নদী অরণ্য আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন! এর কোথাও কোন এূটি খুজে পাবে না। এর বিশালতা সৃষ্টির নৈপূর্ণতা আবলোকন করে পবিত্র মনে চিন্তা করলে স্রষ্টার মহানুভবতা অনুভব করা যায়। আর তখনি স্রষ্টার তরে শীর নত হয়ে আসবে, কৃতজ্ঞতা দিয়ে স্রষ্টাকে জয় করার বাসনা মনে জাগবে।
আল্লাহ্ পাকের নিপুন কুদরতে তৈরী বিশ্ব জাহান কে নিয়ে ভাবতে শিখলে স্রষ্টার পরিচয় মনে ফুটে উঠবে। তিনি সেই পরওয়ার দিগার যিনি জগত সৃষ্টি করেছেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। মহাপবিত্র, মহাপরাক্রম শালী । তিনি আদি, তিনি অনন্ত। তাহার কোন শরীক নাই। তিনি জগতের সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা। তাঁহার হাতে মানবজাতির নিরাপত্তা, সুখ শান্তি , জীবন মরন-এই বিশ্বাসে স্রষ্টাকে বুঝতে পারলে মানবজাতি চির সুখের দেখা পাবে।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক।