নিজের ‘সমকামিতা’ নিয়ে মুখ খুললেন করণ জোহর
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৯:৫৩,অপরাহ্ন ১০ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ২৫১২ বার পঠিত
শুভজ্যোতি ঘোষ ।।
বলিউডের সবচেয়ে নামী চিত্রনির্মাতা করণ জোহর তার সেক্সুয়ালিটি নিয়ে এই প্রথম খোলাখুলি মুখ খুলেছেন – এবং তাঁর প্রকাশিতব্য আত্মজীবনীতে প্রায় স্বীকারই করে নিয়েছেন যে তিনি একজন সমকামী।
ভারতে এই প্রথম তার মাপের কোনও তারকা নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করলেন – যদিও তিনি আইনি হেনস্থার ভয়ে কথাটা সরাসরি উচ্চারণ করেননি।
ভারতে যারা সমকামীদের অধিকার অর্জনে আন্দোলন করে থাকেন তারা করণ জোহরের এই স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছেন – তবে আইনি হেনস্থা নিয়ে তার মন্তব্য কিছু ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে বলেও তারা কেউ কেউ সতর্ক করে দিচ্ছেন।
বলিউডে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সম্ভবত সবচেয়ে বড় জল্পনা ছিল করণ জোহর কি সমকামী?
এতদিন ধরে সে প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে আসার পর নিজের আত্মজীবনী ‘অ্যান আনস্যুটেবল বয়’-তেই অবশেষে তার উত্তর দিয়েছেন তিনি।
সরাসরি বলেছেন, “সবাই জানে আমার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন কী! যদিও সেটা আমি চিৎকার করে বলতে চাই না, কারণ আমি এমন এক দেশে বাস করি যেখানে এটা বললে হয়তো আমার জেল হবে!”
এই মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে বলা চলে। করণ জোহর এটাও স্বীকার করেছেন যে শাহরুখ খানের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে গুজব তাকে ভয় আর যন্ত্রণায় কুঁকড়ে দিয়েছিল।
করণ জোহরের আগে ভারতে এরকম কোনও বড় মাপের সেলিব্রিটি নিজেকে সমকামী বলে স্বীকার করার সাহস দেখাতে পারেননি।
মেয়েদের চুম্বন করে ভারতীয় ইউটিউবার বিপাকে
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ তীব্র আকারে বেড়েছে
ফলে এলজিবিটি অ্যক্টিভিস্ট আদিত্য ব্যানার্জি মনে করেন, সমকামীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীকে স্বাভাবিক করে তুলতে এই পদক্ষেপ হয়তো সাহায্য করবে।
তার কথায়, “হোমোফোবিয়া বা সমকামীদের প্রতি যে বিদ্বেষ আমাদের দেশে আছে, তার পেছনে বড় কারণ হল মানুষ এটাকে নর্মাল বা স্বাভাবিক বলে মনে করে না। সেই পরিস্থিতিতে যখন একজন সৃষ্টিশীল বলে পরিচিত, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নিজেকে প্রকাশ্যে সমকামী বলে মেনে নেন, সেটা সমাজকে ‘নর্মালাইজ’ করতে নিশ্চয় কাজে আসবে।”
তবে হাজারটা এফআইআর কিংবা জেল-মামলার ভয়ে করণ জোহর যে সরাসরি নিজেকে সমকামী বলে ঘোষণা করতে পারছেন না, সেটা দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করেন নাজ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অঞ্জলি গোপালন – যিনি আজীবন সমকামীদের অধিকার রক্ষায় লড়ে এসেছেন।
বিবিসিকে মিস গোপালন বলছিলেন, “আজকের যুগেও যে করণ জোহরের মতো ব্যক্তিত্ব নিজের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কথা বলতে ভয় বা অস্বস্তি পান – সেটাই দেখিয়ে দেয় যে ভারতীয় সমাজ কীভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে চলেছে।”
“হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে এটা নিয়ে ছাদ থেকে চিৎকার করে বলার কিছু নেই – কিন্তু সমকামীদের কেন নিজেদের পরিচয় গোপন করে থাকতে হবে? ফলে ঘুরিয়ে হলেও করণ জোহর তবু যে কথাটা বলতে পেরেছেন তাতে আমি খুশি”, বলছিলেন মিস গোপালন।
ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ক একটি অপরাধ। আদিত্য ব্যানার্জি বলছিলেন, করণ জোহরের কথায় মনে হতে পারে সমকামিতাই একটা অপরাধ – যদিও ৩৭৭ ঠিক সে কথা বলে না।
তিনি বলছেন, “এই আইনে বলা হয়েছে অ্যানাল সেক্সের মতো কাজ একটা অপরাধ। কিন্তু ধরা যাক একজন পুরুষের যদি অন্য পুরুষের প্রতি শারীরিক বা রোমান্টিক আকর্ষণ থাকে – কিন্তু তার ভিত্তিতে তিনি কিছু না-করেন তাহলে ভারতীয় আইন অনুযায়ী তিনি মোটেই অপরাধী নন।”
“করণ জোহরের কথায় একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনা থাকে যে সাদারণ মানুষ ভাবতে পারে যারা সমকামী তারাই বোধহয় ক্রিমিনাল। কিন্তু আইন বলছে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি সেই বিশেষ যৌনক্রিয়াটি করছেন ততক্ষণ আপনি ক্রিমিনাল নন!”
করণ জোহর নিজের বইতে লিখেছেন “তিন অক্ষরের যে ইংরেজি শব্দটা সবাই আমার সম্বন্ধে জানে – সেটা আমি নিজে মুখ ফুটে বলতে পারি না স্রেফ জেলে যাওয়ার ভয়ে”।
কিন্তু ভারতে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকাটা কোনও অপরাধ নয় – করণ জোহরের মতো তারকারা বরং সে কথাটাই স্পষ্ট করে বলুন।
বিবিসির সৌজন্য।।