‘সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে, না বললে জনগণের গালি শোনা লাগবে’!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৫:৩৯,অপরাহ্ন ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সত্য কথা বললে সেটা সরকারের ঘাড়ে যাবে, আবার সত্য না বললে জনগণের গালি শোনা লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এখন যদি কিছু সত্য কথা না বলি তাহলে জনগণের গালি খেতে হবে।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যানবাহন চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন নিয়ে শাজাহান খান বলেন, অনেকদিন ধরেই আমি বেশ কিছু বিষয় হজম করেছি। সত্য কথা না বলে বদ হজম হয়ে গেছে। তাই এখন কিছু সত্য কথা না বললেই নয়। তবে সত্য কথা বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে, অথবা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঘাড়ে যাবে। আর যদি না বলি তাহলে আমাদের কে জনগণের গালি শোনা লাগবে।
তিনি বলেন, এত বছর কেন ড্রাইভারদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠল না? কেন বিআরটিএ-এর মাধ্যমে সারা দেশে ড্রাইভার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়নি? যদিও বলা হচ্ছে- ১৩৫টি ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। কিন্তু আমার জানা মতে ১২০ থেকে ১৩০টির মতো চালু আছে। আর এর মধ্যে আমাদের নির্দেশক আছেন ১২৮ জন। ১৩৫টি ইনস্টিটিউট থাকলে ১২৮ জন দিয়ে চলছে কীভাবে? সুতরাং এই তথ্যটি মোটেই সঠিক নয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলাম আমি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা ১১১টা সুপারিশ তৈরি করে জমা দিয়েছি। সেই সুপারিশগুলোর অংশ বিশেষ এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে জানান তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই- আপনি এনজিওর নামে দেশ-বিদেশ থেকে যে কোটি কোটি টাকা এনেছেন, সেই টাকা দিয়ে কয়টি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? আর সেখানে কয়জন ড্রাইভারকে ট্রেনিং দিয়েছেন?
চালকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে শ্রমিকনেতা শাজাহান খান বলেন, ড্রাইভার তৈরি করার দায়িত্ব কার? শ্রমিক ইউনিয়নের, মালিক সমিতির? নাকি ড্রাইভারের নিজের? না এটার দায়িত্ব সরকারের। ড্রাইভার তৈরি করার জন্য কোনো ভর্তুকি আছে? নেই। আজকে একেকজন কেন তাহলে বড় বড় গলায় কথা বলবেন? সমস্যা কোথায়, দেখবেন না? আগে সমস্যার মূলে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এতদিন পরে শুরু হয়েছে, ড্রাইভারদের ফ্রি ট্রেনিং ও ফ্রি লাইসেন্সের। এটিও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তাদের চার মাসের জন্য নয় হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কত সরকার আসল-গেল কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।
বিআরটিএকে ইঙ্গিত করে সাবেক নৌমন্ত্রী বলেন, আপনারা কি কেউ বলতে পারবেন, ভুয়া লাইসেন্স ছাপানোর মেশিন কখনো ধরা পড়েছে? বিআরটিএ’র মাঝেই এসব লোক মুখ লুকিয়ে রয়েছে। তাই বিষয়টিকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে হলে প্রথমেই জাল লাইসেন্সধারীদের ধরতে হবে। ট্রাকের বড় বড় বাম্পার কোন আইনে আছে, কে দিল? দিয়েছে বিআরটিএ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান কামরুল আহসান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর নবী শিমু প্রমুখ।