জিয়া চ্যারিটেবল মামলার শুনানির আগমুহুর্তে বিএনপিতে চাঙ্গা ভাব!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৭:০৩,অপরাহ্ন ২৭ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৩৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আপিল বিভাগের শুনানির আগমুহুর্তে হঠাৎ চাঙ্গা ভাব এসেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। এতদিন অনেকটা ঘরোয়া কর্মসূচির বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়া দলটি এবার রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এরআগে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালো কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ ছিল দলটি।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশও করে দলটি। মূলত ওই সমাবেশ থেকেই রাজপথের কর্মসূচির দাবি আসে। আগে থেকেই জোরালো কর্মসূচির দাবি ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। ওই সমাবেশে শীর্ষ থেকে মধ্যমসারির নেতারাও দলনেত্রীর মুক্তিতে রাজপথের আন্দোলনকেই জোর দিয়ে বক্তব্য দেন।
বিএনপির একটি সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেস্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আপিল বিভাগের শুনানি হবে। তার আগে কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই চেষ্টা হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে কয়েকশ নেতাকর্মী অংশ নেন। তবে অনুষ্ঠানটি শেষে মিছিলে সে সংখ্যাটি ছাড়িয়ে যায়। মিছিলের একপর্যায়ে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নেন হাজারের মতো নেতাকর্মী। নিকট অতীতে ঢাকার রাজপথে দলটির এত নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে এদিন পুলিশকেও অনেকটা নমনীয় দেখা গেছে।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার সমাবেশ থেকে সামনে আর অনুমতি না নিয়েই কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়। একইসঙ্গে শিগগিরই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার কথা বলেছেন নীতিনির্ধারকরা। এই বক্তব্যের এক দিন পরই গতকাল ব্যস্ত এই ভিআইপি সড়কটি অবস্থান নেন তারা। সড়ক ছেড়ে দিতে বারবার পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও তা আমলে নেয়নি দলটির নেতাকর্মীরা। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো অবস্থান শেষে পুলিশের ধাওয়ায় সড়ক ছেড়ে চলে যান তারা।
যুবদলের সবশেষ কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, ‘চেয়ারপারসনের মুক্তির কর্মসূচির জন্য শীর্ষ নেতাদের প্রতি একধরনের চাপ আছে। কর্মীরা নিশ্চুপ বসে থাকতে ইচ্ছুক না আর। তাই ধীরে ধীরে সবার জায়গা থেকে মাঠে নামার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এত কর্মীর উপস্থিতি।’
যুবদলের এই নেতার বক্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া গেছে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নেয়া অনেক নেতাকর্মীর বক্তব্যে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চান।
অন্যদিকে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ব্যানারে সড়কের কর্মসূচি শেষে যখন নেতাকর্মীরা চলে যান তখন আদালত চত্বরে বিক্ষোভে নামেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে দুই শতাধিক আইনজীবী মিছিল করেন। এসময় তারা আদালতের ফটক খুলে রাস্তায় আসতে চাইলেও পুলিশ তাদের আটকে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ধারণা ছিল না এমনভাবে সড়কে বিপুল জমায়েত হবে। তবে অন্যান্য সময়ের থেকে মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে উপস্থিতি ছিল বেশ। তাদের সড়কে বসার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা থেকে ছাত্রদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও কর্মসূচি যোগ দেয়ায় কর্মসূচি গতি পায়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে এলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। তাই ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে চান।
কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে বিএনপি প্রধানের মুক্তির জন্য তৃণমূলের কর্মীরা কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা বললেও সে দিকে যায়নি দলটির হাইকমান্ড। তবে ইদানীং শীর্ষ নেতারাও বলছেন, এখন রাজপথেই একমাত্র সমাধান বের করতে চান তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবে যে অনুষ্ঠান শেষে মিছিলসহ সড়কে মেনে আসেন বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘সবাই স্লোগান দিচ্ছেন, অ্যাকশন-অ্যাকশন। এবার ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’
বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৮নভেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জামিন আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চে শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। আইনজীবীরা জামিনের আশা করলেও নেতাদের মনে শঙ্কা আছে আইনী জটিলতায় জামিন আটকে দেয়া হতে পারে। যদি শেষ পর্যন্ত জামিন চূড়ান্তভাবে নাকচ হয় সেক্ষেত্রে কঠোর কর্মসূচির দিকেই হাঁটার কথা ভাবছেন নেতারা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও এমন সিদ্ধান্ত আছে। তবে কর্মসূচির গতি প্রকৃতি কি হবে তা চূড়ান্ত হয়নি এখনো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেভাবে চলছে তাতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া উপায় আছে? সেদিকেই যেতে হবে। আলাপ আলোচনা চলছে এ নিয়ে।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার পরামর্শ দিচ্ছেন দলের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরাও। গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সবাইকে রাজপথে হাজির হতে হবে। রাজপথে হাজির হয়ে হাইকোর্টের চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে বলতে হবে মানবিক কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।