সিলেটে টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় ট্রাক পার্কিং!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৫:৩৪,অপরাহ্ন ০৫ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬১৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সিলেটে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টার্মিনালে রাখা হচ্ছে না ট্রাক। আগের মতো কদমতলীসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কের উপর রাখা হচ্ছে ট্রাক। এতে করে বাড়ছে দুর্ভোগ। ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে ট্রাক রাখার জন্য। কিন্তু টার্মিনালে না রেখে ট্রাক রাখা হচ্ছে রাস্তায়। তবে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মতে, ট্রান্সপোর্ট গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালালে এমনটি হচ্ছে। এ জন্য তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। সিলেট নগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে দক্ষিণ সুরমা পারাইরচক নামক স্থানে সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়।
ইতিমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ৬ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ট্রাক টার্মিনালটির ইজারা গ্রহণ করেছে সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ।
ইজারাদার সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকগুলোকে টার্মিনালে রাখার জন্য ট্রাক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানালেও সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারের প্ররোচনায় ট্রাকগুলো টার্মিনালে না গিয়ে সড়কের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে করে ইজারা গ্রহিতা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০১৩ সালের ২৩শে নভেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত ২০১৯ সালের ১৯শে অক্টোবর পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। ইজারা গ্রহিতা সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ গত ১লা অক্টোবর সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ট্রাক টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেন। কিন্তু ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারের প্রতিবন্ধকতার কারণে ট্রাকগুলো টার্মিনালে পার্কিং না করে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পার্কিং করছে। ইজারাদার বার বার ট্রাকগুলো টার্মিনালে পার্কিং করার আহ্বান জানালেও আবু সরকারের অসহযোগিতার কারণে ইজারাদার টোল আদায় থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অপরদিকে যানজট মুক্ত নগরী রাখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
ইজারা গ্রহণের পর থেকে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির অজুহাতকে কেন্দ্র করে ট্রাক রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে অবরোধ করার মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়। কিছুদিন পর পর এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। মালিক ও শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ট্রাক টার্মিনালের ইজারা টেন্ডারে আবু সরকারের পছন্দের লোক টেন্ডার জমা দেয়। কিন্তু সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ দরপত্রে বেশি টাকা দেয়ার কারণে তারা ইজারা লাভ করে। আর এ কারণে শ্রমিক নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ইজারা গ্রহিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসার উদ্দেশ্যে ইজারাদারের সঙ্গে প্রতি ট্রাকের টোল ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা আবু সরকারকে প্রদানের মাধ্যমে সমঝোতা হয়। এই ৫০ টাকা থেকে ২৫ টাকা আবু সরকার পাবে এবং বাকি ২৫ টাকা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের তহবিলে জমা হবে। কিন্তু পুরো ৫০ টাকায় আবু সরকারের পকেটে যাওয়ার কারণে ট্রাক শ্রমিকদের সঙ্গে আবু সরকারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ট্রাক টার্মিনালে আসছে না।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ গত ২৪শে অক্টোবর সিলেটের জেলা প্রশাসক ও ২৩ অক্টোবর সিলেটের পুলিশ কমিশনার বরাবরে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অবৈধভাবে ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ট্রাক টার্মিনালের ইজারা গ্রহণের পূর্বে প্রায় ৬-৭ মাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার সিটি করপোরেশনকে কোনো রাজস্ব না দিয়ে টার্মিনালের নাম ব্যবহার করে টার্মিনাল থেকে এবং পারাইরচক মোড় থেকে টার্মিনালের টোল আদায় করেন। ইজারা গ্রহণের পর একই নিয়মে ইজারা গ্রহিতা টোল আদায় করে।
কিন্তু ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ অযথা অন্যায়ভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে যাতে ইজারা গ্রহিতা সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত ট্রাকপ্রতি টোল আদায় করতে না পারে। বর্তমানে কিছু শ্রমিক নামধারী চাঁদাবাজ শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজার পয়েন্ট, পাররাইচকস্থ সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে, জৈন্তাপুর শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে, ফতেহপুর, পরগনা বাজারসহ শ্রমিক ইউনিয়নের যতগুলো শাখা কমিটি রয়েছে প্রতিটি শাখা কমিটি কর্তৃক বিভিন্ন হারে অসহায় ভাতা, কল্যাণ ভাতা বলে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে। তাছাড়াও ট্রাকের ওভারলোড কথা বলে প্রতি গাড়ি থেকে ৪-৫ শ’ টাকা অবৈধভাবে আদায় করে। যদিও ওভারলোড সংক্রান্ত বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই শ্রমিক নামধারী এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপ।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, ‘আবু সরকারের অসহযোগিতার কারণে টার্মিনালের ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা কামনা করেছি।’
সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়। আমার শ্রমিকরা সরকারি বিধি মোতাবেক চাঁদা আদায় করে। কোনো অবৈধ চাঁদা আদায় করে না। ট্রাক টামির্নালের ইজারাদারের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমি টার্মিনালে ট্রাক প্রবেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি না।’