১০ কপি বইয়ের দাম ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩১:২৫,অপরাহ্ন ৩১ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৭৯৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কাণ্ডের রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে আলোচনায় বই কাণ্ড। রূপপুরে সেই বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছিল ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর এবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার একটি বই কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। মাত্র ১০ কপি বই কিনতে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য সার্জারির ছাত্র ও শিক্ষানবিশদের টেক্সট বই ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’ বইটির ১০ কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আর বইটির বাজারমূল্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিটি বই কিনেছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা করে। সেই হিসাবে ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বাজার দামের তুলনায় ৮ লাখ টাকা বেশি খরচ করে এ বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শুধু এই একটি আইটেমের বই-ই নয়, দুটি টেন্ডারে ৪৭৯টি আইটেমের ৭৯৫০টি বই কেনা হয়েছে। এসব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা। এ বছরের ১৯ জুন টেন্ডার দুটির ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাক্কানী পাবলিশার্স। এ প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে বইগুলো কিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজের জন্য ৩১৭টি আইটেমের ২ হাজার ৪৫৪টি বই ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় কেনা হয়েছে। এ ছাড়া, সারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য ১৬২টি আইটেমের ৫ হাজার ৪৯৬টি বই কেনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ২৬ ও ২৭ মে বই কেনার জন্য পৃথক দুটি টেন্ডার আহবান করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রথম টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় পাঁচ কোটি টাকা ও দ্বিতীয়টির প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৮ টাকায় প্রথম টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার পায় হাক্কানী পাবলিশার্স। আর ২ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৫ টাকায় দ্বিতীয় টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডারও পায় একই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে এসব বই কেনার দায়িত্বে ছিলেন উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান, শিক্ষা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।
সাতটি মেডিকেল কলেজের জন্য গ্রেজ অ্যানাটমি নামে ৯৫টি বই কেনা হয়েছে। বাজারে এই বইয়ের প্রতিটি কপির দাম ৫-৭ হাজার টাকা। কিন্তু একেকটি বই কেনার বিল করা হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা করে। ৯৫টি বই কিনতে খরচ হয়েছে ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে অন্তত ৭ গুণ বেশি দামে বইটি কিনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বার্ন অ্যান্ড লেভি ফিজিওলোজি বইটির ৬৫টি কপি কেনা হয়েছে দেশের ৫টি মেডিকেল কলেজের জন্য। বাজারে বইটির দাম ৪-৬ হাজার টাকা। কিন্তু, মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ২০ হাজার ৪৮০ টাকায়। মুগদা মেডিকেলের জন্য কেনা হয়েছে ‘অর্থোডোনটিক মেটারিয়াল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল অ্যাসপেক্টস’ নামে তিনটি বই। বাজারে বইটির দাম ৪-৫ হাজার টাকা হলেও কেনা হয়েছে ১৪ হাজার ১৭৫ টাকা করে। একই মেডিকেলের জন্য ‘প্র্যাকটিক্যাল অপটামোলজি ম্যানুয়াল ফর বিগেনার্স’ বইটি কেনা হয়েছে পাঁচ কপি। প্রতিটি বইয়ের বাজার মূল্য ২৯ হাজার টাকা। কিন্তু, প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকা করে। ‘অর্থোফিক্স এক্সটার্নাল ফিক্সেশন ইন ট্রমা অ্যান্ড অর্থোপেডিকস’ নামের বইটির ১০টি কপি কেনা হয়েছে মুগদা মেডিকেলের জন্য। এ বইয়ের বাজারদর প্রতিটি ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিটি বই কেনা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৫ টাকা করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণের আগে সব বইয়ের দাম নিজেই যাচাই-বাছাই করেছেন বলে জানান চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেই মূল্য নির্ধারণ করেছি।
বাজার মূল্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাক্কলিত মূল্যের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি এমনটা হতেই পারে না দাবি করে স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা কেনাকাটার প্রতিটি নিয়ম মেনেই বইগুলো কিনেছি। তবে কোনো বইয়ের দামে যদি ব্যবধান থেকে থাকে, তাহলে আমরা যাচাই করে দেখব।
বিষয়টি নিয়ে উপপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. শেখ মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘বইয়ের দামে এত ব্যবধান হওয়ার কথা না। তারপরও হয়ে থাকলে আমরা দেখবো।’