স্বপ্নের পদ্মাসেতু দিয়ে যান চলবে ২০২১ সালে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:৩৪,অপরাহ্ন ২৯ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৫৬৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: স্বপ্নের পদ্মাসেতু দিয়ে আগামী ২০২১ সালের জুনে যান চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে সেতুটি উদ্বোধনের জন্য তিনবার সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করা হলেও সেতুটি উদ্বোধন করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সচিবালয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতুটি উদ্বোধনের সময়ের তথ্য দেন কাদের।
দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে।
পিলারের ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলার হবে ৪২টি। এর মধ্যে নদীতে থাকবে ৪০টি পিলার। এক পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি পিলারের ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। ইতোমধ্যে সেতুটিতে ১৪টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
সেতুটি উদ্বোধনের জন্য আগে তিনবার সময় ঘোষণা এসেছিল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে। এসব বক্তব্যে ২০১৮, ১৯, ২০ সালে সেতুটি উদ্বোধনের সময় জানানো হলেও সেতুটি উদ্বোধন করা যায়নি।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুনের আগেই পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি হয়েছে একশ’ শতাংশ। নদী শাসন কাজের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ১৮৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ৪২টি পিলারের (পিয়ার) মধ্যে ৩১টি পিলার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১১টি পিলার স্থাপনের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। মাওয়া অংশে এ পর্যন্ত টাস্ট এসেছে ২৭টি। এর মধ্যে স্প্যান বসানো হয়েছে ১৪টি। বাকি স্প্যানগুলোর কাজ চীনে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেলওয়ে স্ল্যাবের জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-টাস্ট স্ল্যাবের প্রয়োজন। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৫৪টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্ল্যাবের কাজ এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মূল সেতুর কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মূল সেতুর ব্যয় ততটা বাড়বে না। পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়ছে বলে যা বলা হচ্ছে তা মূলত জমির বেশি দাম ও ট্যাক্স পরিশোধের কারণে। ২০১০ সালের এস্টিমেট অনুয়ায়ী এ ব্যয় ধরা হয়েছে।
এ সময় সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়রুল ইসলাম, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার প্রদত্ত ঋণ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাছুর রহমান এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. মনিরুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন।
সেতুমন্ত্রী জানান, ঋণচুক্তি অনুযায়ী সেতু কর্তৃপক্ ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে অর্থ বিভাগ তথা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ পরিশোধ করবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৩৫ বছর। এক শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করা হবে। ঋণ পরিশোধের সিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনিম্ন ৮২৬ কোটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।