প্রবাসেও বন্ধন গোলাপগঞ্জবাসীর: ব্রিটেনে ফেস্টিভ্যাল এক অনন্য
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১১:৫৫,অপরাহ্ন ২২ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৭৮৯ বার পঠিত
:ইমরান আহমদ:
গোলাপ ফুলের পাপড়ি যেমন একত্রিত, তেমনি গোলাপগঞ্জের মানুষও একত্রিত। তারা একে অপরের সুখ-দু:খ, বেদনা, হাসি-কান্নায় একে অপরের অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। শুধু দেশে নয় দূর প্রবাসে গিয়েও একত্রিত হয়ে থাকতে গড়েছেন একাধিক সামাজিক সংগঠন।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালী, আরব-আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার পৃথক পৃথক সংস্থা-সংগঠন রয়েছে। রয়েছে উপজেলা ভিত্তিকও কয়েকটি সংগঠন। এসব সংগঠন গড়ার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রবাসে উপজেলার সকলকে নিয়ে মিলেমিশে বসবাস, একে অপরের খোঁজ খবর নেয়া, সকলে মিলে উপজেলার উন্নয়ন-অগ্রগতির উন্নয়নে অবদান রাখা এবং গরীব দুস্থদের সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।
এসব সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রম প্রবাসের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্য এগিয়ে। গোলাপগঞ্জের সকল পথ, মতের মানুষকে একত্রিত করতে প্রায় দেড়যুগ আগে গড়ে উঠে সামাজিক সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যে নবপ্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন ‘গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্ট’। সংগঠনটি নবপ্রতিষ্ঠিত হলেও ইতোমধ্যে তার কার্যক্রম ও সফলতায় আস্তা খুঁড়িয়েছে সর্বমহলে। শুধু গোলাপগঞ্জের মানুষের মাঝে নয় বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা, উপজেলা ছাড়াও ভিনদেশীদের কাছ থেকেও সুনাম খুঁড়িয়েছে নবপ্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি।
গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্টের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপজেলার একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়া, সুখ-দু:খ ভাগাবাগি করা, সেখানে বসবাসরত নবপ্রজন্মের কাছে নিজ উপজেলার অতীত ইতিহাস, কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরা, দেশ, দেশের মানুষ ও এলাকার প্রতি প্রেম-ভালবাসা তৈরী করা।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসের ইতিহাসে গোলাপগঞ্জবাসীই সর্বপ্রথম নিজ এলাকার নারী-পুরুষ, সন্তানসহ সকলকে একত্রিত করতে ‘গোলাপগঞ্জ উৎসব’ বা ‘গোলাপগঞ্জ ফ্যাস্টিভ্যাল’র আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। আগামী ২৮ জুলাই পূর্ব লন্ডনের ব্রার্ডি আট সেন্টারে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবকে ঘিরে প্রায় দু’মাসের বেশি সময় থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সামাজিক যোগাযোগেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। এ উৎসবকে সফল করতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে চরেছে মতবিনিময়, সভা, সেমিনার, প্রদর্শনী।
গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্টের এ আয়োজন নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই ব্যস্ততায় কাঁটছে সেখানে বসবাসকারী গোলাপগঞ্জবাসীদের। বিশেষ করে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তদের রাত নেই দিন নেই, বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিভাবে গোলাপগঞ্জের সকলকে একত্রিত করে এ উৎসবকে সফল করা যায়। প্রবাসের মাটিতে এ উৎসবকে চির স্মরণীয় করে রাখতে “প্রজন্মের সেতু” নামক একটি স্মারকগ্রন্থও প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ গ্রন্থে ট্রাস্টের ৪১৭ জন সদস্যের নাম ও ছবি, প্রবাসী গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি সংগঠক ও সংগঠন নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ ট্রাস্টের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকবে আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রকাশনা অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ, পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠান, চিত্র প্রদর্শনী, কবিতা আবৃত্তি, পূথি পাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।
আয়োজকরা জানিয়েছেন উৎসবে হাজার খানেকের বেশি লোকের সমাগম ঘটতে পারে। প্রবাসের মাটিতে বড় পরিসরে এতো আয়োজন কতইনা কষ্টকর তা একমাত্র আয়োজকরাই বলতে পারবেন। যুক্তরাজ্যে আমাদের গোলাপগঞ্জের যারা বসবাস করছেন তারা উপজেলার সকলের সাথে পরিচিত হতে বা এলাকার লোকদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে এ ‘ফ্যাস্টিভ্যাল’ উৎসবে শরিক হবেন, এটাই আমাদের আশা।
এছাড়া ইতোমধ্যে গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্ট’র উদ্যোগে লন্ডনের মাটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে। এরমধ্যে গত ৭ জুলাই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভার পৃথক পৃথক টিম গঠন করে অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় পিঠা উৎসব, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই উপজেলাবাসীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সমুদ্র সৈকত ভ্রমন। এছাড়া আরো নানা উৎসব ও কর্মসূচী পালন করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেও সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
প্রবাসের ব্যস্ত জীবনেও উপজেলার মানুষদের মাঝে আনন্দন-উৎসবের আমেজ দিয়ে সত্যিই প্রশংসা খুড়িয়ে নিয়েছে গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্ট। আমরা আশা করি আগামীতেও এমনিভাবে সকলকে নিয়ে নানা আয়োজন করবে ট্রাস্টটি।
গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্ট ছাড়াও গোলাপগঞ্জের উপজেলা পর্যায়ের যেসকল সংগঠন ব্রিটেনের মাটিতে কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে, গোলাপগঞ্জ হেলপিং হ্যান্ডস ইউকে, গোলাপগঞ্জ উলামা কাউন্সিল ইউকে উল্লেখযোগ্য। এ চারটি সংগঠনের লগো প্রায় একই ধরনের। তাদের মিশন ও ভিশন উপজেলাবাসীকে নিয়ে।
সর্বশেষ গোলাপগঞ্জ সোশ্যাল ট্রাস্টের সকল কলাকৌশলী, কর্মকর্তা, সদস্যসহ অন্যান্য সংগঠনের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ হাফিজ।