সুরমায় কিছুটা কমলেও হু হু করে বাড়ছে কুশিয়ারার পানি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৩:২৬,অপরাহ্ন ১৪ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বয়ে যাওয়া সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। গত ৩/৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে রবিবার সুরমার পানি কমতে শুরু করলেও বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কুশিয়ার পানি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের, সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১.৩ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো। আগেরদিন একই সময়ে যা ১.৫৯ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার .৬০ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। শনিবার সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে .৬১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
আর কুশিয়ারা নদীর পানি রোববার সন্ধ্যায় অমলসীদ পয়েন্টে ১.৫৯ মিটার,শেওলা পয়েন্টে ১ মিটার ও শেরপুর পয়েন্টে .৪৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। আগেরদিন এসব পয়েন্টে যথাক্রমে ১.৪৫ মিটার, .৮৫ মিটার ও .৪৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো পানি।
কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ তীরবর্তী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাজার পানিতে নিমজ্জিত।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া, ভাদেশ্বর, বুধবারীবাজার, উত্তর বাদেপাশা ও শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েকটি গ্রাম যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ইসলামপুর, সুনামপুর, দক্ষিণ সুনামপুর, আমুড়া ইউনিয়নের শিকপুর, গাগুয়া, বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কটলীপাড়া, বহরগ্রাম, বানীগ্রাম, চন্দরপুর, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার, আশাপশের ঘর-বাড়ি, এবং বাদেপাশা ইউপির আছিরগঞ্জ বাজার, নোয়াই-মোল্লাকোনা, ছয়ঘরী গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব গ্রামের বেশ কয়েকটি রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি এসব গ্রামের রাস্তা প্লাবিত করে ফসলী জমিতে ঢুকে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষি ক্ষেত।
হাকালুকি হাওর পাড়ের জনপদ শরীফগঞ্জ ইউনিয়নেও বেশ কয়েকটি গ্রামীন রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে হাওরপাড়ের ইসলামপুর, রাংজিয়ল, নুরজাহানপুর গ্রাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করেছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়ন অনেকটা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে শেওলা ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। পানি প্রবেশে ইউনিয়নের দীগলবাক, কোনা শালেশ্বর ও বালিঙ্গা এলাকাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার চলাচলের রাস্তা তলিয়ে গেছে।
এদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ওসমানীনগরে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতো মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মৎস্য খামার। প্রায় ১৫টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে।
কুশিয়ারা ও ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
রবিবার বিকাল পর্যন্ত কুশিয়ারা ডাইকের উপর দিয়ে পানি নিম্নাঞ্চলে নামছে। কুমিয়ারর ডাইকের উপর বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের পানিতে ওসমানীনগরে বন্যা দেখা দিয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। ওসমানীনগর উপজেলা এলাকায় কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থানে ডাইকের উপর দিয়ে পানি নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ ও বৃষ্টিপাতের পানিতে উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের গ্রাম্য রাস্তা-ঘাট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ওসমানীনগর উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক মৎস্য খামার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক প্রায় ১৫টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি রয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে পানি না থাকলেও রাস্তা-ঘাটে পানি থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে কয়েকটি স্থানে কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যেতে পারে বলে দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
পানি বৃদ্ধির ফলে সৈয়দপুর গ্রামের গোলাম সৈয়দ শওকত আলীর মাছের মৎস্য খামার তলিয়ে গেছে। তিনি প্রায় এক একর জায়গা র মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মাছের পোনা চাষ করেছিলেন। তবে, কুশিয়ারা সংলঙ্গ এলাকায় প্রায় সব বাড়ি গুলো পানিতে নিয়জিত রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগস্থ গ্রামগুলো হলো- উপজেলার সাদীপুর, লামা তাজপুর, দক্ষিণ তাজপুর, চর তাজপুর, ইব্রাহিমপুর, সুন্দিখলা, সুরিকোনা, গুচ্ছগ্রাম, লামা গাভুরটিকি, চাতলপাড়, খছরুপুর (খসরুপুর একুয়ার) গালিমপুর সহ আরো কয়েকটি গ্রাম ও রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামঞ্চলে পানি হু হু করে বাড়ছে।
অপরদিকে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কুশিয়ারা ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
রবিবার (১৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ডাইকের জামারগাও রাধাপুর জামে মসজিদের কাছে ভেঙ্গে ডাইক ভেঙ্গে যায়। ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং তিনটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
ডাইক ভাঙ্গনের ফলে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের ভাটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাতের মধ্যে কয়েক হাজার বাড়ি ঘর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনেরর পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি থাকায় এ বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ।
বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার অবনতি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। এখনো কোন সরকারী কোন ত্রান এলাকায় পৌছেনি। পানিবন্দি মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়া ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি স্কুলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টে পানি প্রবেশ করেছে এবং ওই এলাকার পাঁচটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বর্তমানে নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা, বিজনা ও বরাক নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তৌহিদ বিন হাসান তার কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্টোলরুম খুলেছেন। তিনি বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানির প্রবল স্রোত থাকায় বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রবিবার (১৪জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার বিকাল ৪টা থেকে কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের কাজ পুনরায় শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ।