সড়কে গাড়ি আর নৌকা চলছে এক সাথে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৯:৫৫,অপরাহ্ন ২৮ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৪০৭ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: মুষলধারে বৃষ্টি ও সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাড়ি আর নৌকা একসাথে চলাচল করছে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার এমন একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী।
জানা গেছে, গত বুধবার থেকে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি বিপদ সীমার উপর অতিক্রম করছে। ইতোমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং অন্যান্য নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন ওয়েজখালী বাজার থেকে সুরমা নদীর সড়কে এমন চিত্র। তিনি ত৭ার এক আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার পথে ছবিটি তুলেন।
সুনামগঞ্জের সাংবাদিক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী সূত্রে জানা গেছে, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪১৫ সেন্টিমিটার।
এদিকে, শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বেলা ১১টার দিকে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর পানি। গত চার দিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তীর উপচে পানি প্রবেশ করেছে শহরের মাছবাজার, সবজিবাজার, উকিলপাড়া, সাহেববাড়িঘাট, বড়পাড়া, কাজীর পয়েন্ট ও ওয়েজখালী এলাকায়। এসব এলাকায় সড়কের ওপর কোথায় কোথাও হাঁটু পর্যন্ত উঠে এসেছে পানি।
এ ছাড়া শহরের কালীবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর কলোনি এলাকা, পূর্ব নতুনপাড়া, জামতলা এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ ভোগান্তির সৃষ্টি বলে জানাচ্ছে স্থানীয়রা। এদিকে, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বাজার ও সৈয়দপুর এলাকাও।
অন্যদিকে উজানের ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়ধল ইউনিয়নের কলাগাঁও ও আশপাশের এলাকার বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তবর্তী বোগলাবাজার, বাংলাবাজার ও নরসিংহপুর ইউনিয়ের বিভিন্ন গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ছাতক উপজেলার পৌরশহর, নয়ারাই ইউনিয়ন, ইসলামপুরসহ বেশিরভাগ ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। পার্ল অ্যান্ড পেপার মিল সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসুবিধা হচ্ছে। পানি আরো বাড়লে এ পথে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে ঢল নামার কারণেই সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। তবে বৃষ্টি থামলে পানি কমতে পারে।
পৌরশহরের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে আবু বকর বলেন, সব স্থানে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে প্রবেশ করেনি। সুনামগঞ্জ পৌরশহরের যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, তাতে এত পরিমাণ বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই। তাই পানি নামছে না। এ কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছে, উজান থেকে ঢলও নামছে, যে কারণে পানি বাড়ছে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সব উপজেলায় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।