গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রাবেলের প্রথম বাজেট: ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি ২ বছরে তার চেয়ে বেশি হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৮:০৯,অপরাহ্ন ২৫ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৭৩১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: গোলাপগঞ্জ পৌরসভার তৃতীয় মেয়র হিসেবে প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা করলেন আমিনুল ইসলাম রাবেল।
মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভা অডিটরিয়ামে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ৫০ কোটি ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট পেশ করেন মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল।
বাজেট পরবর্তী বক্তৃতায় মেয়র বলেন, টানা ১০ বছর মেয়রের চেয়ারে বসেও পৌরসভার যে উন্নয়ন হয়নি, ইনশাআল্লাহ আগামী ২ বছরে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন দেখতে পাবেন পৌরবাসী। এজন্য পৌর নাগরিক, বাজারের ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শ্রমিকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বর্তমান পৌর পরিষদ সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, তার প্রমাণ আজকের বাজেট অধিবেশন। তিনি বলেন, এর আগে অনেক বাজেট পেশ করা হয়েছে। কোন বাজেটেই পুরো পরিষদ উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি বাজেটের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এখন আপনারা নাগরিকরা আমাদের সহযোগিতা করলে গোলাপগঞ্জ পৌরসভাকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলা সম্ভব হবে।
বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে সাবেক মেয়র মরহুম সিরাজুল জব্বার চৌধুরীর কথা স্মরণ করে মেয়র রাবেল বলেন, সিরাজুল জব্বার চৌধুরী ছিলেন আমাদের অভিভাবক। আমরা তাঁর মাগফেরাত কামনা করছি।
বাজেট অনুষ্ঠানে পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের নাগরিক, সিলেট ও গোলাপগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক, বাজারের ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেটে আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ২লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৮০ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। আয় খাতে দেখানো হয়েছে সরকার প্রদত্ত উন্নয়ন সহায়তা, বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প মঞ্জুরী, তৃতীয় নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, অফিস ভবন নির্মাণ মঞ্জুরী, গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন প্রকল্পে মঞ্জুরী, জলবায়ু প্রকল্পে মঞ্জুরী, বি.এম.ডি.এফ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত মঞ্জুরী, জাইকা প্রকল্প মঞ্জুরী, এলজিএসপি প্রকল্পের মঞ্জুরী বাবদ সম্ভাব্য আয় হবে ৪৬ কোটি টাকা এবং রাজস্ব খাতে আয় হবে কোটি ৮২লক্ষ ৭০ হাজার টাকা এবং প্রারম্ভিক স্থিতি ১৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যায়খাতে রাজস্ব ব্যায় ৩কেটি ৮০ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যায় ৪৬ কোটি টাকা। ব্যায়ের মধ্যে সর্বোচ্ছ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যায় হবে তৃতীয় নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যায় বহুল প্রকল্প হচ্ছে পৌর বাস, ট্রাক টার্মিণাল নির্মান ও ভুমি ক্রয় এবং পরিচালনা বাবদ ১কোটি টাকা, ২০ শয্যা বিশিষ্ট পৌর হাসপাতাল নির্মাণে ১কোটি টাকা, এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় ও পরিচালনা বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, পৌর স্টেডিয়াম নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা, জলবায়ু প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা, বন্যা নিরোধ প্রকল্পে ৫০লক্ষ টাকা, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও ভুমি ক্রয় বাবদ ১কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ ও পরিচালনা এবং পানি সরবরাহ ও পরিচালনা বাবদ ১কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
বাজেটে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের আগামী অর্থবছরের সম্মানী বাবদ ভাতা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে ১৯লক্ষ ২০হাজার টাকা এবং পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ৬৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। মশা ও কুকুর নিধন খাতে ৫০ হাজার টাকা, বয়স্ক ভাতা/বিধবা ভাতা ইত্যাদি খাতে ২লক্ষ টাকা, আর্থিক সাহায্য খাতে ৩লক্ষ টাকা, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ তহবিলে দেড় লক্ষ টাকা, নারীদের প্রশিক্ষন বাবদ ১লক্ষ টাকা,পৌর এলাকার সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান এবং হাফিজ / ইমামদের সম্মানী, বিভিন্ন সামাজিক ক্লাবে অনুদান বাবদ বরাদ্ধ সাড়ে ৫লক্ষ টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র উল্লেখ করেন তিনি নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব গ্রহনের প্রায় ১বছরের মধ্যে ৩ কোটি ৪লক্ষ ৯২ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করেছেন। বর্তমানে আরো ১কোটি ৮৯ লক্ষ টাকার কাজ শুরু হবে।
বাজেট বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন নাগরিক প্রশ্ন করেন পৌরসভার ১০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিলো এটি পরিশোধ করা হয়েছে কিনা? উত্তরে মেয়র রাবেল বলেন এই টাকা সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বিল পরিশোধ না করে বকেয়া রেখে যান, আমি দায়ীত্ব নেওয়ার পর তা পরিশোধ করেছি।
সাংবাদিক এনামুল হক বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে পৌর শহরে ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপন খাতে বেশী বরাদ্ধের দাবী জানান। এসময় মেয়র জানান পৌর শহর যানজট মুক্ত করে সড়কের ডিভাইডারে ও দুই পাশে বৃক্ষ রোপন হবে প্রয়োজনে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করা হবে।
গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল আহাদ দাবী রাখেন বাজেটে প্রস্তাবিত পৌর পাঠাগারটির নামকরন প্রয়াত মেয়র সিরাজুল জব্বারের নামে করার। এসময় উপস্থিত সবাই এবং পৌর পরিষদের সদস্যরা একমত পোষন করেন।
পৌর প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান চৌধুরী প্রশ্ন করেন সাবেক মেয়র বলতেন, ‘‘ নতুন কেউ নির্বাচিত হলে সরকার থেকে বরাদ্ধ আনতে পারবেননা, এমনকি মন্ত্রণালয় চিনতেই ৫বছর চলে যাবে, এক্ষেত্রে নতুন মেয়র কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা’? জানতে চাইলে মেয়র বলেন , নতুন হিসেবে সমস্যা হলে ১বছরে প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকার কাজ করা সম্ভব হতো না। বর্তমানে পুরো পৌরশহর লাইটিংয়ের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েল মন্ত্রীর মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ করিয়েছি। সুতরাং কাজ করতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা।
প্যানেল মেয়র-১ ও ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলালুজ্জামান হেলালের সভাপতিত্বে এবং গোলাপগঞ্জ অনলোইন প্রেসক্লাব সভাপতি এম আব্দুল জলিলের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাজেটে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খান, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামেল আহমদ চৌধুরী জামিল।
বাজেট পেশকালে কাউন্সিলরদের মাধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহির উদ্দিন, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জবান আলী, ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলুল আলম, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাস্টার আব্দুল জলিল, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল আহমদ জানাল, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সুফিয়া বেগম, মেহরুন বেগম, মনোয়ারা ফেরদৌস প্রমুখ।