মোদির নতুন মন্ত্রী পরিষদে শপথ নেয়া কে এই প্রতাপ সারাঙ্গি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৮:৪৮,অপরাহ্ন ০১ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ৮৪৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ভারতে নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ নেয়া উড়িষ্যা রাজ্যের প্রতাপ সারাঙ্গি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের রাইসিনা হিলসে মন্ত্রিসভার ৫৮ সদস্য শপথ নেন। হাজার হাজার অতিথির সামনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
কে এই প্রতাপ সারাঙ্গি:
ওড়িষ্যার এক কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দা প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গির নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাসের বন্যা বইলেও বজরং দলের সাবেক এই নেতার রয়েছে সন্দেহজনক অতীত।
১৯৯৯ সালে ভারতের ওই রাজ্যে অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনেস ও তার দুই ছেলেকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে উগ্রপন্থি হিন্দুদের একটি দল।
ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে উগ্রপন্থি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) যুব শাখা বজরং দলের হাত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। সে সময় বজরং দলের নেতা ছিলেন প্রতাপ সারেঙ্গি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০০৩ সালে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য বজরং দলের সদস্য দারা সিংসহ ১৩ জনকে সাজা দেয় আদালত। তবে দুই বছরের মাথায় দারার মৃত্যুদণ্ডের সাজা লঘু করে দেয় ওড়িষ্যা হাই কোর্ট।
এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেয় হাই কোর্ট।
ওড়িষ্যার সাংবাদিক সন্দীপ সাহু বিবিসিকে বলেছেন, ওই ঘটনা নিয়ে তিনিসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে প্রতাপ সারেঙ্গির সাক্ষাৎকার নেন। এসব সাক্ষাৎকারে খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে ‘পুরো ভারতকে ধর্মান্তরিত’ করার ‘নীল নকশা’ নিয়ে কাজ করার অভিযোগ করেন তিনি।গ্রাহাম স্টেইনেসের ওপর হামলার ঘটনায় তার দুই শিশু সন্তানকে হত্যার নিন্দা জানালেও মিশনারিদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণ নিয়ে নিজের ওই অভিমতে অনড় ছিলেন তিনি।
বজরং দলসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ২০০২ সালে ওড়িষ্যার বিধান সভায় হামলা চালানোর পর দাঙ্গা, আগুন দেওয়া, আক্রমণ ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে প্রতাপ সারেঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বিবিসি বলছে, চলতি সপ্তাহেই ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসা প্রতাপ সারেঙ্গি এর আগে রাজ্যের বাইরে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। তাকে নিয়ে ফেইসবুক-টুইটারে আলোচনায় তার অতীত কর্মকাণ্ড উঠে আসেনি, যেটা এসেছে তা হল তার সাদামাটা জীবন-যাপন।
বৃহস্পতিবার দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে যখন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ানো হয়, তখন সবচেয়ে বেশি করতালি পড়েছিল দারিদ্র ছাপ নিয়ে আসা প্রতাপ সারেঙ্গির শপথের সময়। তাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিমন্ত্রী করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সাংবাদিক সাহু বিবিসিকে বলেন, “নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে বাইসাইকেল নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘোরার জন্য পরিচিতি রয়েছে সারেঙ্গির। রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরেও তাকে দেখা যায় বিধান সভায় যোগ দিতে সাইকেল চালিয়ে বা হেঁটে যাচ্ছেন, রাস্তার পাশের সাদামাটা রেস্তোরাঁর খাচ্ছেন বা রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য।”
এবার লোকসভা নির্বাচনে সম্পদশালী দুই প্রার্থীকে হারিয়ে তার জয় আলোচনার ঝড় তোলে। বৃহস্পতিবার তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নির্বাচনী এলাকায় উৎসব হয়ে যায়। সমর্থকরা আতশবাজি ফুটিয়ে ও মিষ্টি বিতরণ করে তা উদযাপন করেন। কেউ কেউ তাকে ‘ওড়িষ্যার মোদী’ বলেও অভিহিত করেন।
বিবিসি বলছে, প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গির বিষয়টিই সোশ্যাল মিডিয়ার ‘নায়কদের’ নিয়ে সংকটের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রায়ই এক ধরনের ভাবমূর্তি বা কোনো একটি ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তা ভাইরাল হয়ে যায়। আর তাতে কোনো ব্যক্তি আসলে কে বা তিনি কী করেছেন, তা না জেনেই তাকে ‘নায়ক’ মনে করেন লোকজন।
বালাসোরেই জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা তার। সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করেন। একটা ছোট্ট ঝোলা আর সাইকেল নিয়েই এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন সারাঙ্গি। আর এ কারণে তিনি এলাকায় সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত। সম্বল বলতে ছিল একটা ছোট কুঁড়েঘর।
মোদির মন্ত্রিসভার ৫৮ জনের মধ্যে ৫৬তম নামটি তার। রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি যখন শপথ বাক্য পাঠ করেন তখন তার সঙ্গে স্বপ্ন দেখেছেন সেখানকার বহু ছাপোষা মানুষ, স্বপ্ন দেখেছেন যুব সমাজ, অনুপ্রেরণা পেয়েছে পুরো দেশ।
সহজ-সরল এই সারাঙ্গি একবার বিজেপির ভোটের টিকিট হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঘটনাটি ২০০৯ সালে উড়িষ্যা বিধানসবা নির্বাচনের। তিনি বাসে ভ্রমণ করার সময় প্রার্থী পদের টিকিট হারিয়ে ফেলেন। শেষমেশ পরিস্থিতি সামলাতে নির্দল হিসাবে ভোটযুদ্ধে লড়েন সারাঙ্গি।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে সারাঙ্গিকে নিয়ে ব্যাপক হইচই। অনেকেই তাকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন। মোদির মতো তিনিও বেলুর মঠে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য গিয়েছিলেন। তবে তার বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন শুনেই স্বামী আত্মস্থানন্দ তাকে সন্ন্যাসে দীক্ষিত না করেই পাঠিয়ে দেন বাড়ি।