বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরী বন্ধের নেপথ্যে অসাধু কর্মকর্তারা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৪:১৫,অপরাহ্ন ১৫ এপ্রিল ২০১৯ | সংবাদটি ৪১৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর উপর বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরী সার্ভিস দীর্ঘ ১১ বছর চলাচলের পর হঠাৎ করে বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা খন্ডন করতে অনেক সময়ের ব্যাপার। ২০০৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধারে ফেরী সার্ভিস চলাচলের পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ব্রীজ নির্মাণের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। মানুষ দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাজের কাজ কিছু না হওয়াতে আলোচনা শুরু করতেই ফেরীও গায়েব হয়ে গেল। বিভিন্ন সুত্র থেকে এ তথ্যগুলো জানা গেছে।
২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ইজারাদারের কাছে সড়ক ও জনপদ ফেরী সার্ভিস ইজারা প্রদান করে চওড়া মূল্যে । প্রথমত ইজারা ছিল অতি অল্প পরবর্তীতে কয়েকগুণে ছাড়িয়ে যায়। এরই মধ্যে চন্দরপুর-সুনামপুর ব্রীজ হওয়াতে ফেরী দিয়ে গাড়ি চলাচল অনেকটা কমে গেলে ইজারাদাররা আগের মূল্যে ইজারা নিতে অনিহা প্রকাশ করলে ২০১৪ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত জেলা পরিষদ এর দায়িত্ব গ্রহণ করে। আর এর সুবাদে ওরা ফেরী বারটা বাজিয়ে ছাড়ে। সুত্র জানায় সরকারী কর্মচারীরা যখনই ফেরীর দায়িত্বে আসেন তারা আয়-ব্যয়’র হিসাবে বড় ধরণের গড়মিল দেখালে জেলা পরিষদ ভর্তুকি কথাটি সংযোজন করে ফেরী সার্ভিস বন্ধ করার অনেকটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এদিকে ফেরীতে থাকা কর্মচারীরা গাড়ি পারাপারের রসিদ জাল করে বিরাট ক্ষয়ক্ষতি দেখালে জেলা পরিষদ ইজারাদার খোজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অযুহাত তৈরী করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি জানান, জেলা পরিষদ কর্তৃক যে সকল কর্মচারী ফেরীর জন্য রাখা হয়েছিল তারা গাড়ি পারাপারের সময় অন্য একটি রসিদ বই ব্যবহার করতেন এবং জেলা পরিষদকে নামে মাত্র কয়েকটি গাড়ি পারাপারের রসিদ দিতেন। তাই ভর্তুকীর পরিমান দিন দিন বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ফেরী বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
জেলা পরিষদের কথানোযায়ী কর্মচারীরা ফেরী বন্ধ করে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে বলে সুর তুললে তা আর কখনো মেরামত করা হয়নি। মাসের পর মাস নষ্ট ফেরী নিয়ে কর্মচারীরা ঘাটে থেকে ঠিকই তাদের বেতন আদায় করতেন এবং ঢাকা চট্রগাম থেকে নতুন একটি ইঞ্জিন আনা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানাতেন।
বিষয়টি তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে অবহিত করলে তিনি বলতেন, যেহেতু এখান দিয়ে ব্রীজ হচ্ছে তখন আর ফেরী সার্ভিসের প্রয়োজন কি? এলকার লোকজন ব্রীজ না হওয়া পর্যন্ত ফেরী সার্ভিস অব্যাহত থাকার দাবি জানালে ইজারাদার নিয়ে কথা হয়। লোকজন ইজারা নিতেও রাজি থাকলে কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে বলতেন ইজারার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে বিজ্ঞাপনের কোন পত্রিকা দেখাতে পারেননি।
২০১৮ সালে হঠাৎ করে এখান থেকে ফেরী চলে যাওয়ায় লোকজন ভাবছিল হয়তো এখানে ব্রীজ হবে কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোন নামগন্ধ নেই বলে জানালেন বুধবারীবাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মস্তাকুর রহমান। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার জেলা পরিষদ এবং মন্ত্রী মহোদয়ের স্মরণাপন্ন হয়েও কোন কাজ হয়নি। তারা বার বার ইজারা নিতে ইচ্ছা পোষন করলেও তাদেরকে দেয়া হয়নি।
বর্তমানে এলাকার লোকজন প্রায় ১০ কিলোমিটার বেশি পথ অতিক্রম করে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। তাদের সময় ও আর্থিক ব্যয় বাড়ায় অনেকে হিমসিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে তাদের পন্য বুঝাই ট্রায় অতিরিক্ত ভাড়ায় নিয়ে আসায় পন্যের উপর বাড়তি মুল্য নির্ধারণ করতে হচ্ছে। এতে ঠকছেন সাধারণ জনগণ।