লন্ডনে ‘৮ম বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৮’ উদযাপন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩২:২৮,অপরাহ্ন ১১ জুলাই ২০১৮ | সংবাদটি ৬৪০ বার পঠিত
পূর্ব লন্ডনের, মাইলঅ্যান্ড রোডস্থ ব্লু মুন সেন্টারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ (ইউকে)-এর উদ্যোগে, লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ‘বাংলাদেশ বইমেলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৮’ উদযাপন উপলক্ষে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ জুলাই সোমবার সংগঠনের সভাপতি ফারুক আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বুলবুলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সংগঠকগণ সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বইমেলা উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভার প্রথম বক্তা ছিলেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সদস্য দিলু নাসের। তিনি বইমেলার কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, আমরা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মেলা করে আসছি। এটা আমাদের একটি ঐতিহ্য। কিন্তু নানা ব্যর্থতার কারণে আমরা ২০১৭ সালে মেলা করতে পারিনি। মেলা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার ভূমিকার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে বলেন, আমরা যেকোনো মূল্যে এই মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।
কবি, কথাশিল্পী ও সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ তার বক্তৃতায় বলেন, এতো দিন ধরে বইমেলা হয়ে আসলেও মেলা-সংশ্লিষ্ট কয়েক জন ছাড়া এটির সঙ্গে এখানকার কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের তেমন কোন যোগ ছিল না। মেলার খবর শুনে আমরা বই কিনতে আসতাম। প্রতি বছরই দেখাতাম একই সভাপতি, একই সাধারণ সম্পাদক, এবং একই কোষাধ্যক্ষ। অর্থাৎ কমিটিতে কোনো পরিবর্তন নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান কমিটি হবার পর থেকে মূলত এই কমিটির কর্মকর্তাগণই আমাদেরকে এই সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। শুধু লন্ডন নয়, লন্ডনের বাইরের সাহিত্য সংগঠনগুলোকেও তারা এই সংগঠনের সদস্য করছেন। এই কমিটি এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ভাল অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছেন। আমরা ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ’-এর সঙ্গে আছি, এবং বইমেলাকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস দিচ্ছি।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, যুক্তরাজ্য সংসদের সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট নাট্যজন নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ’ প্রথম মেলায় আমরা যুক্ত ছিলাম।একসঙ্গে কাজও করেছি । কিন্তু পরবর্তিতে সংগঠনের নেতৃত্বের নানান দুর্বলতা বিশেষ করে সংগঠন একজন কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াতে শুধু আমরা নয় অনেক সংগঠনই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ থেকে সরে যায়। বর্তমান কমিটি গঠিত হবার পরে, কর্মকর্তাগণ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আমরাও তাদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের’ সদস্যপদ নিয়েছি। আমরা বইমেলা সহ আপনাদের সব ধরণের কার্যক্রমের সঙ্গে আছি এবং থাকব।
নুরুল ইসলামের সঙ্গে একমত পোষণ করে উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং যুক্তরাজ্য সংসদের সাবেক সভাপতি ডা. রফিকুল হাসান জিন্নাহ বলেন, বর্তমান কমিটির কার্যক্রম আমাদের ভাল লাগছে, তাই সদস্যপদ নিয়েছি। আমরা শুধু বইমেলাই নয়, আপনাদের সকল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক কার্যক্রমে অবশ্যই সহযোগিতা করব এবং সঙ্গে থাকব। বইমেলা নিয়ে কিছু সমস্যার কথা আমার কানে এসেছে আমি মনে করি তা হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষের কর্ম । এখানে যারা উপস্হিত সকলের বক্তব্য থেকে বুঝতে পারলাম মেলার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি । আমরা সকলেই আমাদের এই প্রাণের মেলাকে আগের থেকে আরো বড় আরো সুন্দর করে করতে চাই । আমার মনে হয় সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর পরামর্শ এবং সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমিকে আমাদের আজকের এই সভার কথা জানিয়ে মেলার উদ্যোগকে তোলে ধরা দরকার ।
নাট্য ও বাচিকশিল্পী স্মৃতি আজাদ তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা চাই এই সংগঠনের সঙ্গে সবাইকে সম্পৃক্ত করে মেলাটিকে আরও সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করতে। এজন্য আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই, পরামর্শ চাই।
বঙ্গবন্ধু লেখক ও সাংবাদিক ফোরামের সেক্রেটারি হেনা বেগম বলেন, এর আগে আমি এই সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিন্তু বর্তমানে আমি ও আমার সংগঠন এই পরিষদের সদস্য। আমরা বইমেলা সহ আপনাদের সব ধরণের কার্যক্রমের সঙ্গে আছি ও থাকব।
সাপ্তাহিক সুরমা সাবেক সম্পাদক কবি ও গল্পকার আহমদ ময়েজ বলেন, প্রায় প্রতি বছরই লক্ষ করতাম যে, বইমেলায় কেরানী থেকে নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে অনেক-কে নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ ব্যাস্ত থাকেন, তা পরিচালকদের জন্য হয়তো সুখের কিন্তা আমি একজন লেখক হিসাবে মনে করি বইমেলায় লেখকদের নিয়ে কাজ করলে মেলা আরো সুন্দর ও সফল হবে ।এবার মেলার প্রস্তুতি পর্বেই যখন দেখছি পরিষদের উদ্যোগে লেখক, শিল্পী,সংস্কৃতি কর্মীদের পরামর্শ নিয়ে মেলা উদযাপন করতে চাচ্ছেন এটা ভালো সংবাদ । এই সংগঠনকে সার্বজনীন করে তোলার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই । আপনাদের বইমেলা অবশ্যই স্বার্থক হয়ে উঠবে যেহেতু মেলা করার ব্যাপারে আপনারা এক্যমতে পৌঁছতে পেরেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
ছড়াকার শাহাদত করিম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছি। কিন্তু এই সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আজ অনেক কিছুই জানলাম। আমরা চাই মেলা হোক। এজন্য যা যা করার আমরা সবই করব। কিন্তু বইমেলা যেন কোনো ভাবেই বন্ধ না হয়।
কবি এ কে এম আব্দুল্লা বলেন, এই বইমেলা উপলক্ষে ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ সাহিত্য পুরস্কারের’ প্রবর্তন করা হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আমরা আমাদের ঐতিহ্যিক ধারাবাহিকতা রাখতে কাজ করছি।
সংগঠনের জয়েন্ট সেক্রেটারি কবি ও নাট্যকার এম মোসাহিদ খান বর্তমান কমিটির কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, আগে বছরে একবার মেলার আয়োজন ছাড়া এই সংগঠনের আর কোনো বিশেষ কার্যক্রম ছিল না। বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকে আমরা একটি গঠনতন্ত্র উপহার দিয়েছি। আমদের কোনো ব্যাংক একাউন্ট ছিল না, আমরা ব্যাংক একাউন্ট করেছি। এবং এ পর্যন্ত সফল ও অনুকরণীয় অনেকগুলো অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছি । এখন এই সংগঠন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী । ঐকবদ্ধ হয়ে বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি চর্চার জন্য এই সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার বিকল্প নাই । এবং তা সম্ভব হবে আপনারা সকলের সহযোগিতা থাকলে । আসুন এবারের বইমেলাকে আমরা সকলে মিলে একটি নান্দনিক মেলায় রুপ দেই।
সংহতি সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য-সম্পাদক কবি ও সংগঠক শামীম শাহান বলেন, সংহতি সব সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের কর্মকান্ডের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। বইমেলা নিয়ে বিগত দিনের নানান অসঙ্গতি কাঠিয়ে সংগঠনের কার্যকরী পরিষদ সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দেখে আমি খুশি । বইমেলাকে সুন্দর ও সফল করতে এই ধরণের কাজ জরুরী ।
ব্যারিস্টার কবি সৈয়দ রুম্মান বলেন, আমরা বিলাতেরর তৃতীয় বাংলা বলে থাকি। অথচ আমাদের অনেকের কথায় ও কাজে কোনো মিল নেই। আমদের কেউ কেউ মনে করেন কোন এক তৃতীয়পক্ষ আমাদেরকে লেখক হিসেবে সার্টিফিকেট অথবা পুরস্কার দিলেই আমরা লেখক হয়ে যাব। এই মানুসিকতা পরিহার করতে হবে। এই মেলাকে সত্যিকার অর্থে বই, লেখক এবং সাহিত্যমোদিদের মিলনমেলা গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করা উচিত। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই শুধু প্রয়োজন লক্ষ ঠিক করে সামনে হাঁটার চেষ্টা করা।
বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী নজরুল ইসলাম অকিব বলেন, প্রাণে বাংলাদেশ নিয়ে প্রিয় স্বদেশ থেকে দূর। দেশের জন্য কাজ করছি। আমি চাইনা অন্য কারো দোষের জন্য আমার নামে কলংক আসুক । বইমেলা পরিচালনায় আমরা যেনো সেই দিকে খেয়াল রেখে কাজ করি । সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করলে কোনো সময়ই লজ্জায় পড়তে হবেনা বলে আমার বিশ্বাস। আপনাদের উদ্যোগ ভালো ।
লেখক-সাংবাদিক মুহম্মদ শরীফুজ্জামান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে থাকি। কিন্তু মেলা কীভাবে হয়, বছরের কোন সময়ে হয় কিছুই জানতাম না। হঠাৎ বন্ধুদের মুখে, অথবা পত্রিকায় দেয়া কোনো বিজ্ঞাপন চোখে পড়লে তা দেখে বই কিনতে আসতাম। কোনো কোনো বছর বইমেলার খবরই জানতাম না। বর্তমান কমিটির কর্মকর্তাগণ আমাকে সদস্য করেছেন। এই কমিটির সময়ে বেশ সফল কয়েকটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে, এবং প্রত্যেকটিতে আমিও উপস্থিত ছিলাম। আজ অর্ধেক পথ নিজের গাড়িতে এসে সময়মতো সভায় পৌঁছাতে পারবো না ভেবে মাঝপথে গাড়ি রেখে ট্রেনে এসেছি। কারণ, এই সংগঠনকে আমি আমার নিজের সংগঠন মনেকরি। তাই শুধু বইমেলা নয়, সকল কার্যক্রমে আমি ও আমার সংগঠনের সর্বাত্মক সহযোগিতা আছে ও থাকবে।
সভায় মেলাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক আহমদ, সহ-সভাপতি ইসহাক কাজল এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বুলবুল। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন – বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, ইউকে-এর সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কবি মোহাম্মদ ইকবাল, উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম আকবর মুক্তা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট লন্ডন শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম অকিব,, সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা-সম্পাদক কবি কাইয়ুম আব্দুল্লাহ, ছড়াকার রেজুয়ান মারুফ, পাক্ষিক ব্রিক লেইন সম্পাদক কবি ও কলামিস্ট জুয়েল রাজ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন – ডকল্যান্ড থিয়েটারের কর্মকর্তা আফরোজা বেগম, যুক্তরাজ্য ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দীয় সদস্য লেখক-সাংবাদিক আনসার আহমদ উল্লাহ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের উপদেষ্টা কবি আতাউর রহমান মিলাদ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কবি মিলটন রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের সহ-সভাপতি কবি কাজল রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রচার সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান, কবি সাগর রহমান, কবি কামরুল বশীর, কবি মোহাম্মদ মুহিত, মুস্তাফিজুর রহমান নিপুন, লেখক-সাংবাদিক রহমত আলী, গীতিকবি রুহেল আমীন রুহেল, সাংবাদিক আব্দুল কাদির চৌধুরী মুরাদ, সাংবাদিক রেজাউল করিম মৃধা, কবি ফারাহ নাজ, আফরোজা বেগম, গীতিকার সামসুল জাকী স্বপন, কবি নজরুল ইসলাম, শামীম আহমদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, ২০১০ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ (ইউকে)-এর আয়োজনে লন্ডনে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালে এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ ছিল, ‘বাংলা একাডেমির প্রবাসী লেখক পুরস্কার’-এর প্রবর্তন।