৬ এপ্রিল কী হবে হাজারীবাগে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০২:০৬,অপরাহ্ন ০৪ এপ্রিল ২০১৭ | সংবাদটি ৬০৪ বার পঠিত
ঢাকার হাজারীবাগের সব ট্যানারি ৬ এপ্রিলের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর চামড়া শিল্প কারখানাগুলোর জরিমানা পুনর্বিবেচনার আবেদন আদালত বিবেচনা করবে। ট্যানারি মালিকদের একটি আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ ৩০ মার্চ এই আদেশ দেয়।
পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫৪ ট্যানারির বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনায় এই আবেদন করেছিলেন ট্যানারি মালিকরা।
আপিল বিভাগ আদেশে বলেছে, আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি ‘ক্লোজ ডাউন’ করতে হবে। এরপর ক্ষতিপূরণের বকেয়া ও জরিমানা নিয়ে আবেদন আদালত শুনবে। বিষয়টি আগাসী ৯ এপ্রিল আবার শুনানির জন্য আসবে।
এর আগে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ হাজারীবাগের সব ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। ট্যানারি মালিকরা কোরবানির ঈদ পর্যন্ত হাজারীবাগে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলেও হাই কোর্ট বুধবার তা নাকচ করে দেয়।
৩০ মার্চ আপিল বিভাগে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। অন্যদিকে রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরশেদ বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবেশের ক্ষতি হিসেবে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে দিতে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা ট্যানারি মালিকরা না দেওয়ায় তারা একটি আবেদন করেছিলেন।
হাই কোর্ট বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আপিল করে। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হিসেবে ট্যানারি কারখানাগুলোকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার আদেশের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চাওয়া হয়েছিল। এই দুটি আবেদনের শুনানিতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে বলা হয়, ইতোমধ্যে তাদের কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নাই, তাই জরিমানার ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মওকুফ করা হোক। আদালত তখন বলে, হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানার বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলেও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের তথ্য আদালতের কাছে আছে।
আদালত আরও বলে, হাজারীবাগ থেকে কারখানাগুলো যদি ৬ এপ্রিলের মধ্যে নিজেরা সরে গিয়ে এসে বলতে পারে তখন এসব আবেদন বিবেচনা করা হবে বা নির্দেশ দেওয়া হবে। অর্থাৎ আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যনারি মালিকরা যদি নিজেরাই সরে গিয়ে আদালতে এসে হলফনামা দিয়ে যদি বলে, আমরা হাজারীবাগ থেকে সরে গেছি, তখন তাদের আবেদনের উপর কোনো নির্দেশনা আদালত দিতে পারে।
৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যনারি সরিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল বলেই এই সময়সীমার প্রসঙ্গটি আসে। এ বিষয়ে আগামী ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানান এই আইনজীবী। এর আগে শুনানি শুরু হলে ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমাদের সব কিছু তো এমনি শেষ। আমরা ৬ এপ্রিলের মধ্যে সব ট্যানারি কারখানা ক্লোজড ডাউন করতে যাচ্ছি। আমাদের বকেয়া জরিমানার বিষয়টি বিবেচনা করেন।” তখন আদালত বলে, আগে ৬ এপ্রিল সব ‘ক্লোজড ডাউন’ করে আসেন তখন বকেয়া জরিমানার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা সব ট্যানারি বন্ধ করে দেবেন মালিকরা। একইসঙ্গে ৬ এপ্রিলের মধ্যে সাভারে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কারখানা দ্রুত স্থানান্তরের জন্য কাজ করছি। সাভারের ট্যানারি স্থানান্তরে সব কাজ শেষ করতে আরও প্রায় এক বছর সময় লাগবে।
এসময় তিনি বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- বিসিকের অব্যবস্থাপনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে, হাজারীবাগের জমিতে ডিজাইন প্লান পাসের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে, যারা চামড়া শিল্পনগরীতে প্লট পাননি তাদের প্লট দিতে হবে, অবিলম্বে সাভারের শিল্পনগরীতে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া বিসিকের পক্ষ হতে চামড়া শিল্পনগরীতে অসম্পূর্ণ সুযোগসুবিধা ও স্থাপনার বিষয়ে প্রকৃত তথ্য সবার সামনে উপস্থাপন ও তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। উদ্যোক্তারা যাতে ঋণ সুবিধা পেতে পারেন সে উদ্দেশ্যে শিল্পনগরীর প্লটের মালিকানা দলিল রেজিস্ট্রেশন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
শাহিন আহমেদ বলেন, হাজারীবাগের চামড়া শিল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫০ লাখ লোক বেকার হবে। আমরা আদালতের রায় মেনে নিচ্ছি।
এসময় তিনি আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে আগামী ৮ এপ্রিল এ শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে হাজারীবাগে জনসভা করা হবে বলে জানান তিনি।
সবার নজর এখন হাজারীবাগের দিকে। কি হবে ৬ এপ্রিল। সত্যি কি বন্ধ হবে হাজারীবাগের সকল ট্যানারি ?