ব্রিটিশ হোম অফিসের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৭:০৫,অপরাহ্ন ০১ জুলাই ২০২০ | সংবাদটি ১৬১০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: হোম অফিসের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ভুলে দীর্ঘ ১৭ বছর আইনি লড়াই করে যাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম নামে প্রবাসী বাংলাদেশি অভিজ্ঞ এক শেফ।
যৌন হয়রানির সেই মিথ্যা মামলায় এরইমধ্যে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাকে সেদেশে রাখতে রাজি নয় ব্রিটিশ সরকার। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ভুলের খেসারত হিসেবে সাইফুলকে মাত্র ৬ হাজার পাউন্ড দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে তারা। মিথ্যা মামলা আর ভোগান্তির মধ্যে জীবনের ১৭টি বছর পার করে দেওয়া সাইফুল এখন নিঃস্ব। তারপরও হাল ছাড়েননি তিনি। ব্রিটিশ হোম অফিসের এ অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শেফ সাইফুল তার সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা আমাদের প্রতিদিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন।
সাইফুল ইসলামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানায়। জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। শেফ হিসেবে যোগ দেন একটি রেস্তোরাঁয়। তবে ভাগ্য বেশিদিন সহায় হয়নি। পড়ে যান যৌন হয়রানির মিথ্যা মামলার কবলে। এ নিয়ে ১৮ টি মামলা লড়তে হয় সাইফুলকে। শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের আদালতে প্রমাণিত হয়, হোম অফিসে সাইফুলের জমা থাকা কয়েকটি কাগজ ভুল করে মিশে যায় অন্য তিন অপরাধীর কাগজের সাথে। এতেই বাঁধে বিপত্তি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ব্রিট্রিশ হোম অফিস কর্তৃপক্ষ এর জন্য সাইফুলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছে।
২০১৯ সালে সাইফুলকে বাংলাদেশে ফেরার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ সরকার। ভুলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাইফুলকে ৫ হাজার পাউন্ড দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। রায়কে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে আদালতের বাইরে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে হ্যান্ড মাইক হাতে বিক্ষোভ করেন সাইফুল। এরই মধ্যে হাউস অব কমন্সের একাধিক সদস্য, ওয়েলসের ফাস্ট মিনিস্টারসহ অনেকে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন।
সাইফুলের প্রতি এ অন্যায্যতা নিয়ে ব্রিটেনের মুলধারার সংবাদমাধ্যম বিবিসি, স্কাই নিউজ ও গার্ডিয়ানে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর হোম অফিসের পক্ষ থেকে সেই পাঁচ হাজার পাউন্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত এক হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভুল অভিযোগে ১৮টি মামলা লড়তে গিয়ে জীবনের ১৭টি বছর হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ এই দীর্ঘ সময়ে একবারও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। ব্রিটেনে তার কোন আত্মীয়ও নেই। সাইফুল আক্ষেপ করে বলেন, ব্রিটিশ সরকার তার জীবনের এই ১৭টি বছরের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার পাউন্ড। তবে তিনি তা মানতে নারাজ। লড়তে চান সরকারের এই অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
লন্ডনে আসার আগে সর্বশেষ ঢাকার মৌচাকে ইউরো গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন সাইফুল। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনে আসার আগে এক যুগ দক্ষ শেফ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কাজ করেছি। ব্রিটিশ সরকার আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিলেও কাজ করে খেতে পারব। এ দেশে থাকলেও কাজ করেই খেতে হবে। সেটা কোন বিষয় না। ব্রিটেনের হোম অফিসের অবহেলা, ভুল, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বহু বাংলাদেশির পরিবার, সংসার বিপর্যস্ত হয়েছে। মানুষ সীমাহীনভাবে ভুক্তভোগী। মানুষ হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’
সাইফুল আরো বলেন, ‘এ লড়াই আমার একার না। হোম অফিস মানেই ব্রিটেনের অভিবাসীদের কাছে একটা আতঙ্কের নাম। সরকারের সেবাদাতা একটি প্রতিষ্ঠান কেন জনগনের জন্য আতঙ্কের কারণ হবে? আমি লড়াই করেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আদালতের সকল নথি, চিঠিপত্র ও রায় প্রকাশ্যে আনার একমাত্র কারণ প্রতিবাদ করা।’
লন্ডনে ইমিগ্রেশন আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি সেবা দিচ্ছেন সলিসিটর, কলাম লেখক বিপ্লব কুমার পোদ্দার। তিনি বলেন, ‘সাইফুলের বিষয়টি হোম অফিস মানবিকভাবে দেখতে পারত। হোম অফিস বা অন্য যে কারও ভুলের দায়ে একজন অভিবাসীর জীবনের ১৭ বছরের ক্ষতিপূরণ মাত্র ছয় হাজার পাউন্ড হতে পারে না।’