আহমদ শফীর স্থলাভিষিক্ত বাবুনগরীর নামই সবার মুখে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৯:০৯,অপরাহ্ন ১৭ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৮৫৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: আল্লামা আহমদ শফীর পর কে হবেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহপরিচালক – এ নিয়ে শুরু হয়েছে মাদরাসার শুরা বৈঠক।
বুধবার (১৭ জুন) সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার ভিতরে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কক্ষে মজলিসে শূরার এ বৈঠক শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের শীর্ষ পর্যায়, কওমি মাদ্রাসা ও ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ শতবর্ষী প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কার নাম ঘোষণা করতে পারেন- এমন গুঞ্জন শুরু হয়। গত মে মাসের শুরু থেকে মাদরাসার ভিতরে-বাহিরে এ গুঞ্জন প্রকাশ্যে আলোচনা সমালোচনায় রূপ নেয়। গুঞ্জনের একটি নাম প্রকাশ্যে চলে আসার পর মাদরাসার শিক্ষক, স্থানীয় আলেম সমাজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। তাদের দাবি ছিল, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের মত গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক শূরা নির্ধারিত কোনো যোগ্য আলেমকে বসানো।
এ গুরুত্বপূর্ণ পদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকেই যোগ্য হিসেবে দাবি করছেন বেশিরভাগ।
তবে, পরিচালনা কমিটির সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ছাড়াই শুরু হয়েছে এ মজলিসে শুরার বৈঠক। বৈঠকে বাবুনগরী রাখা না হলেও তিনি মাদ্রাসাতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ বৈঠকের কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
প্রতিবাদীদের ভাষায়, আল্লামা শফীর অসুস্থতাকে পুঁজি করে হযরতের পুত্র আনাস মাদানী শূরাকে পাশ কাটিয়ে অনুগত হিসেবে পরিচিত মাদ্রাসার জনৈক শিক্ষককে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ঘোষণা করার পাঁয়তারা করেন।
এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে হাটহাজারীর স্থানীয় আলেম সমাজ এবং মাদরাসার সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা গত ১৬ মে মাদরাসার প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়। এমতাবস্থায় উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ওইদিন আল্লামা শফীর সাথে সাক্ষাৎ করে শূরা কমিটির বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ার অনুরোধ করেন।
পরে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী একটি ভিডিও বার্তায় কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হয়নি জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং শূরার বাহিরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না মর্মে সবাইকে আশ্বস্থ করেন।
জানা গেছে, এ শুরা বৈঠকটি ২০১৭ সালের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজকের মজলিসে শূরার বৈঠক থেকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা আসতে পারে- এমনটা মনে করছেন সবাই।
যিনি হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক তিনি সারা দেশের দুইশতাধিক কওমী মাদরাসার অভিভাবকও। এছাড়া দেশে অরাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন আন্দোলনের উৎস হেফাজতে ইসলামের শীর্ষপদেও তিনি থাকবেন- এমনই ভাবছেন অনেকে। সে হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম আসছে বারবার। আল্লামা বাবুনগরী ছাড়াও অনেকের মুখে মহাপরিচালক পদে হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস প্রবীণ আলেম মাওলানা শেখ আহমদ, সাবেক মুহতামিম মাওলানা আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দীদার কাসেমীসহ আরো দুয়েক জনের নামও শোনা যাচ্ছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বহিরাগতদের মধ্যে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে হাটহাজারী ওলামা পরিষদ। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও হেফাজত নেতা মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী বলেছেন, আমরা মজলিসে শূরা যা সিদ্ধান্ত দেয় তা মেনে নেব। তবে তা হতে হবে মজলিসে শূরার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শূরার উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন- ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক ও হাইয়াতুল উলয়া কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম ও বেফাক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী।
এ দিকে শূরা বৈঠক তথা মাদ্রাসার শীর্ষ পদে শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তৎপরতায় প্রকাশ্যে আসার কারণে কোনো ধরণের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে যেন না পারে সে জন্য হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত র্যাব পুলিশ আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে শুরা বৈঠক শুরু হয়েছে।