নিউইয়র্কের হতভাগিনী এক নারীর করোনা গল্প!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৬:০০,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ১৭১১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: হতভাগিনীর নাম নাই বা দিলাম! ভাগ্যরথের চাকা ঘুরাতে স্বামী সন্তান সহ এসেছিলেন এই স্বপ্নের (এষ্টোরিয়া) শহরে বেশকিছু দিন আগে। ভালোই চলছিলো তাদের জীবন। নিজে কাজ করেন। স্বামী কাজ করেন। দুই সন্তান স্কুলে যায়।
ভয়াল প্রাণঘাতি করোনার বিপদ সংকেত পাবার সাথে সাথেই স্বামী ছুটি নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন। সন্তানরাও বাড়িতে। কিন্তু মহিলা নিজেই ভাইরাস বাড়ি নিয়ে আসলেন কাজের জায়গা থেকে।
নিজে মারাত্মক অসুস্থ হবার আগেই স্বামী অসুস্থ হয়ে পরলেন। দুই সন্তানকেও ধরলো ভাইরাসে। হাসপাতালে জায়গা না পাবার জন্য বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিলো।
ডাক্তারের উপদেশ অনুসারে তিন বেডরুমের বাড়িতে স্বামী সন্তানদের আলাদাভাবে রুম গুলো ছেড়ে দিয়ে নিজে জায়গা করে নিলেন ড্রইং রুমে। মধ্যরাতেও রুমে রুমে গিয়ে চেক করেন কে কেমন আছে।
রবিবার (১২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় খুব ভোরে স্বামীর রুমে ওষুধ দেবার জন্য ঢুকে কোন সারা পেলেন না। আগের দিনগুলোর মতো কোন সাড়া পেলেন না স্বামীর।
যা বুঝবার অল্পতেই বুঝে নিলেন তিনি। বাইরে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সন্তানদের ডেকে উঠালেন। শান্ত স্থির ভাবে বললেন ওদের সবকিছু।
নিজেই পুলিশ অথোরিটি, হসপিটালে কল করলেন। উত্তর পেলেন তাদের আসতে দেরি হবে। দেরি হবেই না কেন? নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ অফিসার, ফায়ার ব্রিগেড, নার্স, স্যোসাল ওয়ার্কার সহ অধিকাংশ মেডিকেল ডিপার্টমেন্টের ৪০% করোনায় আক্রান্ত।
বাকিরা মৃত্যুর শহরে দিনরাত ব্যস্ত রোগী আর মৃত্যু নিয়ে। সারাদিন তিনটি অসুস্থ মানুষ বসে রইলেন তাদের অতি প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে। বিকেল চারটায় তিনজন স্যোসাল ওয়ার্কার আসলো।
কিন্তু সাথে আসলো না মর্গের গাড়ি কিংবা কোন সরঞ্জাম। তারা জানালেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। সরঞ্জাম সর্টেজ ও মর্গ বা অস্থায়ী ট্রেইলার মর্গে জায়গার অভাবের কথা।
কিছু মৃতদেহ মাটি চাপার পর মর্গ কিছুটা খালি হলে তারা নিয়ে যাবে ডেড বডি। পুরু প্লাস্টিকের ডাবল বডি ব্যাগে স্বামীর দেহ ভরে স্ট্রেচারে বেধে স্প্রে করে রুমেই রেখে বন্ধ দরজায় No Entry হলুদ সাইন ঝুলিয়ে চলে গেলেন তারা।
এক রুমে প্রিয় স্বামীর মৃতদেহ অন্য রুমে একই রোগের রুগী তিনটি মানুষ ঠায় বসে রইলেন। অপেক্ষায় রইলেন Wait Listing Time এর জন্য।
অপেক্ষার এক মিনিট যেন এক যুগ। আজকে ওই তিনটি বনি আদমের কাছে। স্বামী হারালেন। সন্তানদের কি রাখতে পারবেন নিজের কোলে করোনার সাথে যুদ্ধ করে?
অথবা নিজেই কি চলে যাবেন সন্তানদের এতিম করে এই বিদেশ ভুইয়ে? অপেক্ষা আর প্রশ্ন কোনটারই উত্তর নাই যেন এই মুহুর্তে।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত খবর পেলাম মৃতদেহ এখনো বাড়িতে।
তারপর আর কোন খবর পাই নাই। ইচ্ছে করেই খবর নেই নাই। মন সায় দিচ্ছিলো না। কি করবো খবর নিয়ে? কিছুই তো করতে পারবোনা। কোন কিছুই তো হাতে নেই আমাদের।
শুধু নিউইয়র্ক না। আজকের এই দুর্ঘটনা শুরু হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে এই পৃথিবীর কোনায় কোনায়, প্রত্যেকটি দেশে।
স্বজনরা আরোও সচেতন হোন। ঘরে থাকুন। বন্ধুরা সাবধান! সচেতন হোন। যেভাবেই হোক সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন, এইটাই একমাত্র কার্যকরী মহাঔষধ এই মরণঘাতি সর্বনাশা রোগের জন্য।
আরশের মালিকের কাছে নিরন্তর প্রার্থনা, নিউইয়র্কের এই পরিচিত হতভাগ্য পরিবারের সবাই সুস্থ হয়ে উঠুক। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক তারা তাড়াতাড়ি। এই কামনা করি মনেপ্রাণে।
মারাত্মক খারাপ অবস্থা মার্কিন মুল্লুকের। বাংলাদেশে যেন এমনটি না হয় এই প্রত্যাশা থাকলো। আপনারা সবাই সাবধানে থাকুন, ভালো থাকুন…
(কপিরাইট ক্যাম্পাসলাইভ)