প্রধানমন্ত্রীর কাছে রশীদ জামীল’র খোলা চিঠি
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০২:২৮,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ১৩৫৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনাভাইরাসে স্তব্ধ সারা বিশ্ব। এ মহামারি থেকে দেশ ও দেশের নাগরিককে নিরাপদ রাখতে এবং লকডাউনে বন্দি মানুষকে সহায়তা প্রদানে অনেক উন্নয়নশীর রাষ্ট্রও হিমশিম খাচ্ছে। এরপরও বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্র এ মহামারি থেকে নাগরিককে রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের এমন উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বর্তমান মহামারি ও বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী রশীদ জামিল।
আমাদের প্রতিদিন’র পাঠকদের জন্য খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আপনি ভালো থাকুন। বাংলাদেশ ভালো থাকার জন্য আপনার ভালো থাকা দরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে আপনার সেরা উদ্যোগটি ছিল সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণকাজ পরিচালনা করার ঘোষণা দেওয়া। মানুষ আশ্বস্থ হয়েছিল। আর যাই হোক, মধ্যস্বত্বভোগিরা চেটেপুটে খেতে পারবে না। জানি না কেন আপনি এই ঘোষণা থেকে ডাইভার্ট হয়ে গেলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
মানুষ বাঁচলে আপনি বাঁচবেন, বাংলাদেশ বাঁচবে। করোনার প্রকটতা দেখতে কেমন- সেটা আমরা নিজ চোখে দেখছি। দেখছি বলেই নিজের দেশ নিয়ে ভেবে আতকে উঠছি। আপনার মন্ত্রী-এমপিরা এখনও সেই ভয়াবহতা আঁচ করতে পারছেন না। পারলে করোনা নিয়ে আজেবাজে বকওয়াস করতে সাহস পেতেন না। সম্ভব হলে তাদের জন্য সরকারি খরচে একটি করে সাউন্ডপ্রুফ মাস্কের ব্যবস্থা করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
১৮ মার্চ থেকেই যদি দেশ লকডাউন করে দিতেন, বিদেশ ফেরত লোকগুলোকে সতর্কতার সাথে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশ হয়তো এই ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে এসে পড়তো না। তবে আমরা আপনাকে দোষারোপ করব না। আপনি যে ভুল করেছেন, একই ভুল ইউরোপ-আমেরিকা সবাই করেছে। পাশের বাড়িতে আগুন লেগে যেতে দেখবার পরও সতর্ক হয়নি। তাহলে শুধু শুধু আপনাকে দোষ দেওয়ার কোনো মানে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
অনেক দেরি হয়েগেছে, তবে এখনও হতাশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়নি। সময় শেষ হয়ে যায়নি। এখনও যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যায়, রক্ষা পেতে পারে দেশ, আর দেশের মানুষ। যদি অবহেলা করা হয়, অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যেমন গেছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, তাহলে সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা কি বাংলাদেশের আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষের ক্ষমতা নেই এক সপ্তাহের খাবার জমা করে রাখার- এই সত্য কি আপনি জানেন? আপনি কি জানেন দেশের প্রায় দেড়কোটি মানুষের ঘরে এখনই খাবার সংকট তৈরি হয়ে গেছে? আপনি কি জানেন এমন কিছু মানুষও আছে যাদের ঘরে আজকের খাবারটুকুনও নাই! আপনি কি বিশ্বাস করেন, (আল্লাহ না করুন) দেশে করোনার প্রভাব প্রকট হয়ে উঠলে যতগুলো মানুষ করোনায় মারা যাবে, তারচে বেশি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
ইতিমধ্যেই ত্রাণ লুটপাটের সংবাদগুলোর কিছুটাও যদি আপনার নজরে এসে থাকে, তাহলে আশাকরি একমত হবেন আপনার ত্রাণের এক সিকি ভাগও মানুষের কাছে গিয়ে পৌছাচ্ছে না! আর পেটে ভাত না থাকলে মাথা ঠিক থাকে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তখন ভালোমন্দ বিচারের বিবেক লোপ পেয়ে যায়। মানুষ তখন খাবারের জন্য এমন অনেক কাজও করে বসে যা করা উচিত ছিল না। চুরি ডাকাতি ছিনতাই খারাপ কাজ- ক্ষুধার যন্ত্রনায় সব ভুলে যায়… আশাকরি বুঝতে পারছেন কী বলতে চাই!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
ক্ষুধার জ্বালা কতোটা ভয়াবহ, এটা আপনার মন্ত্রী-এমপিরা জানে না; কারণ, তাদেরকে কোনোদিন না খেয়ে কাটাতে হয়নি। অভুক্ত সন্তানের চেহারার দিকে তাকাতে কেমন লাগে, এটা তারা কোনোদিনই বুঝতে পারবে না; কারণ, তাদের ছেলেমেয়েরা কোনো রাতে না খেয়ে ঘুমায়নি! সুতরাং মানুষের এই দুঃসময়ে তাদের উপর ভরসা করবেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
যেকোনো দুর্যোগে বাংলাদেশের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশ্ব মহামারির এই সময়ে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি, কারণ, আপনি যথাসময়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়ে ছিলেন। প্লিজ, ত্রাণ বিতরণ এবং প্রণোদনা কার্যক্রমের সাথে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করুন। মানুষের দোয়া পাবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
সময়ের এই দুঃসময়ে রাজনৈতিক চেইন অব কমান্ড ভুলে যান। স্বাভাবিক প্রটোকলের চলমান ধারাটিও আপাতত বন্ধ থাকুক। ত্রাণ বিতরণের কাজটা সরাসরি সেনাবভিনীর হাতে সোপর্দ করুন। প্রণোদনা প্যাকেজ তদারকির কাজটাও তাদের দিন।
আবারও বলি, মানুষ বাঁচলে আপনি বাঁচবেন।
মানুষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।
আপনার মংগল হোক।