প্রাইম মিনিস্টার, উই নিড ইউ !
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪০:০৯,অপরাহ্ন ০৮ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৫১৫ বার পঠিত
আনোয়ার শাহজাহানঃ
করোনায় লকডাউনের দিনগুলি- ১৬
৭ এপ্রিল ২০২০
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত হওয়ার খবরটি আমাকে সত্যিকার অর্থেই চিন্তিত ও আতঙ্কিত করে তুলে। এর মূল কারণ ছিল বরিসের কিছু হলে এই ক্রান্তিকালে দেশের অবস্থা কি হবে। বরিসের মত শক্ত হাতে করোনার বিরুদ্ধে কে যুদ্ধ করবে। আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেনের যদি এই অবস্থা হয় তবে পুরো জাহাজের যাত্রীদের কি হবে?
বলেছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথা। ছোটবেলায় পুরো পৃথিবীর রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ৫৫ বছর বয়সে হয়েছেন ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির রাজা, পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ব্রেক্সিট অর্থাৎ ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার জন্য উদগ্রীব যে জনগোষ্ঠী তারাই ছিল তার অনুগত প্রজা।
তিনি ছিলেন ব্রিটেনের অভিজাত সমাজের আদর্শ প্রতিনিধি। বরিসের বাবা ছিলেন একজন কূটনীতিক। কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ইউরোপীয় সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন একবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন বরিস। যদিও এখন তাকে কনজারভেটিভ পার্টির কট্টর ডানপন্থী অংশের প্রতিনিধি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, ছাত্র জীবনে অল্প সময়ের জন্য বামধারার সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যুক্ত হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পর পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন। দি টাইমস পত্রিকায় কাল্পনিক একটি উদ্ধৃতি ব্যবহারের জন্য চাকরি খুইয়েছিলেন তখন।তারপর আরো দুই একটি পত্রিকায় কাজ করার পর যোগ দেন বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফে। ব্রাসেলসে ঐ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতেন তিনি।
২০০১ সাল থেকে তৎকালীন বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি কখনও ছায়া মন্ত্রিসভায় ঢোকেননি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে তেমন পছন্দ করতেন না।
২০০৮ সালে সংসদের রাজনীতি ছেড়ে তিনি লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এবং তখনই ব্রিটেনের রাজনীতিতে ভিন্ন এক মাত্রা পেয়ে যান বরিস জনসন।
বরিস জনসনের প্রপিতামহ অর্থাৎ তার দাদার বাবার নাম ছিল আলী কেমাল। জাতিতে তুর্কি মুসলিম। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আলী কেমাল প্রথমে একজন সাংবাদিক ছিলেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। অটোম্যান মন্ত্রিসভায় খুব কম সময়ের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। বাবার সূত্রে তার বংশের ইতিহাস জানতে, স্বজনদের সাথে দেখা করতে বরিস জনসন একবার তুরস্কে গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন।
তার মুসলিম হেরিটেজের কথা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেন বরিস জনসন। । তবে সম্প্রতি বোরকা পরা নারীদের নিয়ে তার এক কটু মন্তব্যের পর তাকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসাবে অনেক গালমন্দ শুনতে হয়েছে।
করোনার ভাইরাস মোকাবিলায় জন্য সকলের কাছে প্রশংসিত হন বরিস। তাকে যাঁরা পছন্দ করতেন না তারাও তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে শুরু করেন। বৃটিশ জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন সেবামূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।
২৭ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের ঘরেই আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। অফিসও চালাচ্ছিলেন ঘরে বসেই। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ভিডিও মেসেজ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দিয়েছেন তিনি। নিজের শরীরের খবর দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক ভাবে যুক্তরাজ্য কী ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, সে বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। অসুস্থ হবার পরেও বিশ্রাম না নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। অবশেষে অসুস্থতা বেড়ে গেলে ৬ এপ্রিল রোববার তাঁকে ভর্তি করা হয়ে লন্ডনের সেইন্ট থমাস হাসপাতালে। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট প্রথমে জানিয়েছিল, রুটিন চেক আপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার স্পষ্ট হল, চেপ আপ নয়, অসুস্থতার কারণেই হাসপাতালে ভর্তি প্রধানমন্ত্রী। এ দিন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। আপাতত সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত নেবেন বিদেশ সচিব ডমিনিক রাব। সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ”সন্ধ্যার পর থেকে জনসনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তাই তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।”
জনসনকে শুভ কামনা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দরা।
এদিকে যুক্তরাজ্য লকডাউনের ১৬তম দিনে আজই সর্বোচচ সংখ্যক লোক মারা গেছেন। মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গতকালের প্রায় দ্বিগুন। গতকাল ৪৩৯ জনের মৃত্যু খবর জানিয়েছিলো এনএইচএস। আজ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৫৯ জনে।
আজ আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৩৪ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫২৪২।
বরিস উই নিড ইউ। দি ইউকে নিডস ইউ!
আনোয়ার_শাহজাহান
৭ এপ্রিল ২০২০
লন্ডন।