ফুলকলি’তে ‘প্রবাসীর প্রবেশ নিষেধ, যা বললেন পরিচালক!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৮:০১,অপরাহ্ন ২৫ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ১৪৭১ বার পঠিত
ইমরান আহমদ:: গোলাপগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র নুরম্যানশনে অবস্থিতি ফুলকলি মিষ্টান্ন ভান্ডারে ‘বিদেশি লোকের প্রবেশ নিষেধ’ সাইনবোর্ড টানানো নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে তুলপাড়।
তবে, ইতোমধ্যে সাইনবোর্ডটি সরানো হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ সাধারণ ক্রেতা ও প্রবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এদিকে, ফুলকলি কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘বিদেশি লোকের প্রবেশ নিষেধ’ লিখে প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়। এ সাইনবোর্ডটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত দু’দিন থেকে সাধারণ ক্রেতা ও প্রবাসীদের মাঝে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, প্রবাসীরা হচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। স্থানীয় কতজন লোক তাদের বিলাসি সামগ্রী ক্রয় করেন। আর করোনা ভয়ে তারা প্রবাসীদের না ঢুকার জন্য সাইনবোর্ড টানিয়েছে। এতে প্রবাসীদের অপমান করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
অনেকে লিখেছেন, ফুলকলিতে বয়কট করা হবে। ফুলকলির মালামাল আজ থেকে আর কেউ কিনবেন না।
একজন ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেন- প্রবাসিরা (বিদেশী) আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা, তাদের ঘাম আর শ্রমের বিনিময়ে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা চলমান থাকে. ঢালাওভাবে সকল প্রবাসিকে যা ইচ্ছা তাই বলবেন এটা আমরা মেনে নিতে পারি না, আমার গোস্টিতেই এক-তৃতীয়াংশ প্রবাসে বসবাস করেন তাঁরা আমাদের জন্য কষ্ট করেন।আমি সিলেটে দেখেছি ফুলকলি থেকে প্রবাসিরাই বেশি কেনা-কাটা করে থাকেন, সুতরাং ফুলকলির এতো বড় সাহস কোথায় পায় যে এরকম প্রবাসিদের নিয়ে বলতে পারে…
বয়কট ফুলকলি।
আরেকজন লিখেন- জীবিকা ও জীবনের তাগিদে, সোনালী স্বপ্নের হাতছানিতে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে কোণে।
শস্য – শ্যামলা সবুজেঘেরা সোনার বাংলাদেশ এবং মা- বাবা ভাই- বোন আত্মীয় স্বজন এমনকি নিজের প্রিয় স্ত্রীর মায়া মমতা ভালোবাসা ত্যাগ করে, সংসারে সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবনবাজি রেখে প্রবাসের মাটিতে আছেন। তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমরা বেঠাগিরি করি, ব্যবসা বানিজ্য, সুন্দর সুন্দর কাপড়, গাড়ী, বাড়ী সব করি।
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কিছু অতিউৎসাহী ফেইসবুক যোদ্ধারা প্রবাসী এবং আমাদের গর্বের ধনদের কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে। আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
সুতরাং সরকার- স্হানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি -প্রবাসীদের কে সম্মান করে বাসায় বাড়ীতে গিয়ে জাতির এই ক্রান্তি কালে সকলে সহযোগিতা কামনা করে, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস নিয়ে অামাদের নতুন ফেরত প্রবাসীদের ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিন থাকার অনুরোধ করছে। এবং নতুন ফেরত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টিন করছে।
আশা করি প্রবাসী নিয়ে মন্তব্য আপনাদের শুভবুদ্ধি উদয় হবে।
একজন প্রবাসী লিখেছেন- শহরে আসা-যাওয়ার পথে প্রায় সময় এখানেই বাজার করতাম। ঢুকামাত্রই বলতো সালাম ভাই বসেন বলে চারখানা চেয়ার সহ টেবিল এক পলকে পরিস্কার। শুরু হলো খাওয়াদাওয়া বা নাস্তা, তারপর ঘরের বাজারশেষে বিল এক্কেবারে কম হলেও ৫ হাজার নইলে ৭ হাজার। সপ্তাহে ১’দিন। বোনাস আছে আরো ২/১’দিন, যেদিন ঐ এলাকায় কোনো মেহমানের বাসায় যাই।
এখানে যতোবার যাদের দেখেছি বাজার করতে, ততোবার ১০’জনের মধ্যে ৯’জনই প্রবাসী কাস্টমার দেখেছি বা প্রবাসীদের ভাই ভাতিজা অথবা প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজন ও মা-বোনেরা। এরকম আমার মতো আরো অনেককে দেখেছি বাজার করতে। এখন-আর আমাদের যাওয়া নিষিদ্ধ। আমরাও অত্র এলাকার ভাই-বিরাদ্দের জন্য রেখে আসতে চাই। তবুও আপনারা নিরাপদে থাকেন। আর ওরা যেনো আরো আত্মনির্ভশীল হতেপারে এই দোয়াই করি।
যারা এর বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছেন, এটাতেই আমরা বেজায় খুশি। এরচেয়ে বেশীকিছু চাওয়ার বা পাওয়ারও নেই। আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলপাড় শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রবাসী ও সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
ক্ষমা চেয়ে তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আমি ফুলকলির , গোলাপগঞ্জ শাঁখার পরিচালক। আমাদের একজন স্টাফ করোনা ভাইরাস এর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমাদের পরিচালনা পরিষদের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থী। ফুলকলি সবার জন্য উন্মুক্ত, আপনারা সব সময় আমাদের সাথে থাকবেন।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
অপরদিকে, ফুলকলি কর্তৃপক্ষ বলছে এটা তাদের প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নয়। এটি স্থানীয় একটি শো-রুমের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তারা এ শো-রুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের একটি পেইজে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।