বুলবুলের আঘাতে নিহত ৬, জেলায় জেলায় তাণ্ডব!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৬:৫০,অপরাহ্ন ১০ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬২৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বাংলাদেশের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, মাদারীপুর ও পটুয়াখালীতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড়টি অনেকটা দুর্বল হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন লাখ লাখ মানুষ।
আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে গাছপালা ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে। এ কারণে মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রামে মহাবিপদ সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নৌযান চলাচলে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
খুলনা:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার পরপরই এর ঝড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে খুলনায় নারীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার প্রমিলা মণ্ডল (৫২) ও দিঘলিয়া উপজেলার আলমগীর (৩৫)।
রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোরে পৃথক সময় ঝড়ে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত থেকে খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়।
নিহত প্রমিলা মণ্ডল খুলনার দাকোপ উপজেলার দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী ও আলমগীর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামের বাসিন্দা। আলমগীর পেশায় একজন ভ্যানচালক।
নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে খুলনার দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল ওয়াদুদ জানান, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে প্রমীলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইক্লোন শেল্টারে ছিলেন। পরদিন রবিবার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। এ সময় ঝড়ো আবহাওয়ায় একটি গাছ তার ওপরে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ দিকে, দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে সকাল ৯টার দিকে বাড়ির পাশেই অবস্থান করছিলেন আলমগীর হোসেন। এ সময় হঠাৎ একটি গাছ তার ওপর ভেঙে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথেই আলমগীরের মৃত্যু হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ২৬৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সাত শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের। একইভাবে উপকূলবর্তী এই দুই উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে সমগ্র খুলনা জেলা।
পটুয়াখালী:
উপকূলে হানা দেওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় বসতবাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ে হামেদ ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোর রাতে উপজেলার উত্তর রামপুরা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার বসতবাড়িতে গাছ ভেঙে পড়ে বৃদ্ধের নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাট:
বাতাসের শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গাছ ভেঙে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় গাছচাপায় সামিয়া খাতুন (১৫) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুল ইসলাম জানান, ঝড়ো হাওয়ায় গাছ ভেঙে পড়ে রামপাল উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে জেলার অনেক ঘরবাড়িসহ গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়ক বন্ধ রয়েছে। এ সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সকল সড়ককে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব চলাকালে আবুল কালাম (৬০) নামে একজন বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তবে, জেলা প্রশাসনের দাবি, তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
রবিবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাবুরা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া একই উপজেলার ভেটখালী ইউনিয়নের তারাণীপুরে দেওয়াল চাপা পড়ে ভ্যানচালক পলাশ ও তার স্ত্রী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে, বুলবুলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সাতক্ষীরা সদরসহ উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর। ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়া প্রচণ্ড বর্ষণসহ সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া গুঁড়িয়ে দিয়েছে সাতক্ষীরাবাসীদের আশ্রয়স্থলসহ অসংখ্য গাছপালা।
ভোলা:
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলে আছড়ে পড়ার পর ভোলায় প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া মুষলধারে বৃষ্টিসহ ঝড়ো আবহাওয়ার মধ্যে এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ জন। আহতদের মধ্যে দুইজন ভোলা সদর হাসপাতালে এবং বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ দিকে, রবিবার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে জেলাজুড়ে দমকা হাওয়াসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ভোলার বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো লালমোহন উপজেলার গজারিয়া ও চর পেয়ারী মোহন এলাকা। পাশাপাশি ঝড়ের কবলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর, নজরুল নগর, ওসমানগঞ্জ ও কলমি এলাকা। ঝড়ে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘরবাড়ি ও ফসলের মাঠের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ‘এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা আরও খোঁজ নিচ্ছি ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছি।’
বরগুনা:
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গ্রাসে বরগুনা সদর উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হালিমা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে তিনি উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ‘ডিএল কলেজ’ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন। শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিচুর রহমান নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ দিকে, ঝড়ো আবহাওয়ায় বরগুনার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সমগ্র জেলাজুড়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কার্যক্রম চলছে।