লন্ডনের পর নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিদের ‘ফেস্টিভ্যাল’!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৩:৪০,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৩৪৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক :: বাংলাদেশি যেখানেই থাকেন সেখানে তারা নিজ দেশের মানুষকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতে চান। হয় সেটা হোক দেশ বা ভিন দেশ। নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে ভিন দেশে তারা চান নিজ দেশের সংস্কৃতি ফটিয়ে তুলতে। এজন্য প্রবাসে শত ব্যস্ততার মাঝে ‘ফেস্টিভ্যাল’র মতো এসব আয়োজনেও তারা পিছ পা হননি।
এরক একটি বড় পরিসরে আয়োজন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দুই দিনব্যাপী বর্নিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশি আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল ২০১৯’ । জমকালো এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগান (বাম)।
শনিবার (১৭ আগস্ট) ও রবিবার (১৮ আগস্ট) ওয়ারেন সিটির সিটি স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে ছিলো রকমারি খাবার, বিভিন্ন ধরনের পন্য সামগ্রীর স্টল। আর এ উৎসবে হাজার হাজার বাংলাদেশির অংশগ্রহণে সিটি স্কয়ার হয়ে উঠেছিল যেন একটুকরো বাংলাদেশ।
পুরো দুই দিন সিটি স্কয়ার ছিল বাংলা সংস্কৃতির দখলে। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিলো বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের পরিবেশনা। মাইলস মঞ্চে উঠার সাথে সাথে বাধন হারা উল্লাসে মেতে উঠেন বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়ে। মাইলসের বাংলা গানের সাথে তাল দেন প্রবাসে বেড়ে উঠা বাংলাদেশি ছেলে মেয়েরা। শুধু ব্যান্ডই নয় বাঙ্গালিয়ানার ধারক আয়োজকরা আয়োজনে রেখেছেন বাউল গান। বিখ্যাত সব বাউল গান পরিবেশন করে দর্শক মাতিয়ে রাখেন দেশ বিদেশের জনপ্রিয় বাউল, বাংলার লোকসংগীতের গর্বমুখ বাউল কালা মিয়া। দুই দিন মঞ্চ মাতিয়ে রাখতে একে একে পরিবেশনে আসেন মিশিগান জনপ্রিয় এবং একমাত্র বাংলা ব্যান্ড দল রিদম অফ বাংলাদেশ। এছাড়াও দর্শক মাতিয়ে তুলেন শাকিল খন্দকার, শাম্মী আক্তার, রাব্বী আহমেদ, নর্থ আমেরিকার সুনামধন্য সাংস্কৃতিক গ্রুপ রংধনু সহ স্হানীয় শিল্পীরা।
আয়োজকরা জানান ফেস্টিভ্যালের মূল পতিপাদ্য বিষয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ধরে রাখা এবং প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। সেই ধারাবাহিকতায় উদ্যোক্তারা এই মেলার আয়োজন করে আসছে প্রতিবছর। দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী আমেরিকান ফেস্টিভ্যালের আমন্ত্রিত অথিতিদের মধ্য বক্তব্য রাখেন ওয়ারেন সিটি মেয়র জেমস আর ফাউটস, কংগ্রেসম্যান এন্ডি লাভিন, বাংলাদেশ কনসুলেট শিকাগোর কনসান জেনারেল মনির চৌধুরী বিএডিসির প্রতিষ্ঠাতা ড. নাজমুল হাসান শাহীন, সাইদ রব, আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগান (বাম) এর প্রেসিডন্ট মোহাম্মেদ এ আহাদ, ভাইস প্রেসিডন্ট জাবেদ আহমেদ এবং সমাধান সম্পাদক মাহফুজ চৌধুরী প্রমূখ।
এ ফেস্টিভ্যালে আরো উপস্থিত ছিলেন হ্যামটরমিক সিটি এবং ওয়ারেন সিটির কাউন্সিলরগণ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য গনমাধ্যম কর্মীরা। ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক গণ। আয়োজনের চমক ছিল র্যাফেল ড্র। হ্যামট্রামিক ব্যাঙ্গল অটো সেলসের কর্নধার গিয়াস তালুকদারের সৌজন্যে র্যাফেল ড্র এর প্রথম পুরস্কার ছিল একটি গাড়ি। সেই গাড়ী বিজয়ী ভাগ্যবান হলেন ওয়ারেন এর কামরুল ইসলাম। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল কনান্ট ট্রেভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর সৌজন্যে শিকাগো টু ঢাকা, ঢাকা টু শিকাগো।
অনুষ্ঠান শেষে স্বতস্ফুর্ত ভাবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগানের ২০২০-২০২১ সালের কমিটি গঠন করা হয়। ২১ সদস্যের কমিটিতে বাঙ্গালিয়ানার ধারক জাবেদ চৌধুরী কে সভাপতি ও মাহফুজ চৌধুরী কে সাধারণ সম্পাদক, জসিম চৌধুরী কে কোষাধ্যক্ষ ও মোঃআব্দুল মুকিত কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সকলের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে যেন আনন্দের জোয়ারে ভাসছিলো ওয়ারেন সিটি স্কয়ার প্রাঙ্গন। যদিও শেষের দিকে বৃষ্টি এসে মেলায় বিগ্ন ঘটায়। হঠাৎ বৃষ্টি ও মেলায় উপস্থিত দর্শকের উচ্ছ্বাস ধমাতে পারেনি। শেষ অব্দি উপস্থিত থেকে তারা সেটি জানান দেন।
প্রবাসে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালিয়ানা ধরে রাখতে এই ফেস্টিভ্যালের সর্বাত্মক সহযোগীতাকারী লাইকা মোবাইল,জাদু টিভি,টাকা এক্সচেঞ্জ ও টোটাল টিভিকে কৃতজ্ঞতা জানান আয়োজক দল। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা অদিতি বর্ণার মুগ্ধকর সঞ্চালনায় ফেস্টিভ্যালের মিডিয়া পার্টনার ছিল ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন (আইটিভি)।
দুই দিন ব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে সহস্র মানুষের অংশগ্রহণে মুখর হয়ে উঠে সিটি স্কয়ারের মাঠ। বৃষ্টি বাগড়া দিলেও তা উপেক্ষা করে এই বাংলা হৃদয় জুড়া আয়োজন।শেষে আশপাশের রেস্টুরেন্ট শপিংমলে ও তিল ধারনের জায়গা ছিল না। বাঙ্গালিয়ানার এই অনন্য আয়োজনে আবাক চোখে দর্শক সারিতে অংশ নিয়েছিলেন অসংখ্য মার্কিন নারী পুরুষ। নিউইয়র্ক থেকে আসা প্রখ্যাত ঢোলক সফিকের বাংলা ঢোলের তালে তাদের উচ্ছলতা আর মাথা দোলানো সবার মন কাড়ে।
প্রসঙ্গ, গত ২৮ জুলাই লন্ডনে এরকম একটি আয়োজন করে ‘গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট’। তারা শুধু যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী নিজ উপজেলাবাসীকে নিয়ে এ ‘ফেস্টিটভ্যাল’র আয়োজন করেছিলো।