সৌদিআরবে খুলনার মেয়ে আবিরুনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৮:৪২,অপরাহ্ন ০৩ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৬২২ বার পঠিত
খুলনা থেকে সংবাদদাতা:: খুলনার মেয়ে আবিরুন বেগম পরিবারের স্বচ্ছলতার আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে সৌদিআরব গেলেও কোন খোঁজ খবর পায়নি তার পরিবার। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মাথায় দালাল মারফতে খবর এলো সড়ক দূর্ঘটনায় আবিরুন মারা গেছেন। তবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড দাবি করছে আবিরুনকে খুন করে হত্যা করা হয়েছে। এমন দু:সংবাদে দিশেহারা তার পরিবার-পরিজন।
জানা গেছে, আবিরুন বেগম (৪৮) বিয়ে করে মাত্র ১ বছর ছিলেন স্বামীর সংসারে। এরপর বিচ্ছেদ হলে ১৮ বছর কাটিয়েছেন একাকী। ছিলেন বাবার বাড়িতে। কিন্তু ৬ বোনকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার সংসারে ছিল টানাটানি। সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরব যান। কিন্তু দু’বছর হলেও তিনি পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করেননি।
আবিরুনের বিদেশ যাওয়ার নথিপত্র থেকে জানা যায়, তিনি রিক্রুটিং এজেন্সি ফাতেমা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের (আরএল-১৩২১) মাধ্যমে সৌদি আরব যান।
ওই এজেন্সির মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে থাকলেও আমাদের মৃত্যু হতে পারে। কেউ কেউ বিমানে বসেও মারা যান। আল্লাহ জানেন, কীভাবে মারা যায়। তার ব্যাপারটিও আল্লাহই ভালো জানেন।
সড়ক দুর্ঘনায় মৃত্যু দাবি করেও এক পর্যায়ে জাহিদুল বুঝাতে চাচ্ছেন আবিরুনেরও দোষ ছিল। তার ভাষ্য, এক কাঠি কখনো বাজে না। একটা ঢোল আর একটা কাঠি দুই জায়গায় রাখলে বাজে না।
আবিরুনের পরিবার বলছে, সৌদি যাওয়ার কয়েক দিন আগে আবিরুন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। তবে রিক্রুটিং এজেন্সি, দালাল রবিউল এবং নিপুনের চাপ ও হুমকির মুখে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সৌদি আরব যেতে বাধ্য হন তিনি।
তবে যে আশায় সৌদি গিয়েছিলেন তা আর হয়নি। আবিরুন সৌদি যাওয়ার পর দুই বছরে একটি টাকাও পায়নি দেশে থাকা পরিবার। এমনকি তার সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি পরিবার। এতদিন পর দিশেহারা পরিবারের কাছে এলো আবিরুনের মৃত্যুর খবর। পরিবারটি এখন লাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্থানীয় দালাল রবিউলের মাধ্যমে সৌদি যান তিনি। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, আবিরুন হয়তো অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুলে গেছে অথবা নম্বরে ভুল আছে। তবে সে অনেক ভালো আছে।
আবিরুনের বোন রেশমা আক্তার বলেন, আপাই ছিল আমাদের একমাত্র আয়ের মানুষ। সৌদি যাওয়ার পরে বোনের কোনো খোঁজ পায়নি। দালালের কাছে বারবার অনুরোধের পরে কয়েক মাস পরপর দুই-এক মিনিট কথা বলতে পারতাম। ওখানে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছিল। মামলা করলে আপার বড় ক্ষতি হবে বলে দালাল আমাদের হুমকি দিত। বলত অ্যাকাউন্ট নম্বরে ভুল আছে, তাই টাকা আসে না।
রেশমা আরও বলেন, দালাল রবিউল এখন আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আপার মৃত্য নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নাকি সৌদি থেকে লাশ আনতে পারব না।
জানা গেছে, আবিরুনের লাশ সৌদির একটি হাসপাতালে রয়েছে। তার লাশ দ্রুত দেশে আনতে ও এই মৃত্যুর ন্যায়বিচারে দাবি জানিয়েছে পরিবার।
দুই বছরে কোনো টাকা না পাওয়া ব্যাপারে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবিরুনের পরিবার কেন দুই বছর চুপ করে ছিল। আগে কেন তারা অভিযোগ জানায়নি। এর মানে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১২০ জন নারী কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছি। বাকিদের অন্যরা এনেছে আমি প্রসেস করেছি। আবিরুনের পাসপোর্ট নম্বর জানার পরে বলতে পারব, তিনি কীভাবে সৌদি আরব প্রবেশ করেন।