সিলেটে ডেঙ্গু আতঙ্ক: জ্বর হলেই ছুটছেন ডাক্তারের কাছে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩২:১৮,অপরাহ্ন ০৩ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৬১৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এমন আতঙ্কে সামান্য জ্বর হলেই পরিক্ষা করাতে ছুটে যাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। তবে সিলেটে ডেঙ্গু রোগ বহনকারী এডিস মশার অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। ফলে ঢাকার মতো বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট ২১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগীকে সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৭ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন। তবে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় নতুন কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি। আর সব মিলিয়ে সিলেট এ পর্যন্ত ১৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।
সিলেট জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রকোপ শুরু হওয়ার পর সিলেট নগরীর কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষা করে সিলেটে এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেহেতু সিলেটে এডিস মশা রয়েছে, সেজন্য সিলেটে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আশার কথা হল, সিলেট সিটি কর্পোরেশন গত কয়েকদিন থেকে একযোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছে।
অপরদিকে সামান্য জ্বর হলেই মানুষ ডেঙ্গু আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারদের কাছে ছুটছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাচ্ছেন। এ কারণে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়। সব মিলিয়ে সিলেটে অবনতির দিকে যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো বলছে, অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এবার সিলেটের প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে আবার অনেকেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষা করাচ্ছেন এবং এই ডেঙ্গু পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে সারাদেশে ডেঙ্গু টেস্টের কীট সংকট থাকলেও সিলেটে কীটের কোন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
মাউন্ড এডোরা হাসপাতাল আখালিয়া সিলেটের রিসিপশনিষ্ট আলী হোসেন সুমন বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১৫/২০ জন ডেঙ্গু সনাক্তের বিভিন্ন টেস্ট করাচ্ছেন। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে আবার অনেকই ডাক্তারের মাধ্যমে আসছেন। তাদের হাসপাতালেও কীটের সংকট নেই বলে জানান তিনি।
আর নগরীর মধুশহীদে অবস্থিত পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের হোসাইন চৌধুরী (প্রসাশন) বলেন, আগের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে ডেঙ্গুর টেস্ট করানোর জন্য বেশি মানুষ আসছেন। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ আমাদের এখানে পরীক্ষা করাতে আসেন। দিন যতই যাচ্ছে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর জন্য মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করছি। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে যে কেউ আমাদের এখানে ডেঙ্গু নির্ণয়ের টেস্ট করাতে পারেন।
এদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও কীটের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন বলেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, সিলেটে ডেঙ্গু মশা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিলেটের স্থানীয়ভাবে কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই। এজন্য আমরা সিলেটে সিটি কর্পোরেশনকে বলেছি পরিছন্নতা অভিযান চালাতে। তারাও অভিযান চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এখনো তেমন কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নাই। আপনারা জানেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অবস্থা যে কোন সময় খারাপ হতে পারে। আর উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে আইসিউ নেই। সেজন্য ডাক্তাররা উপজেলা থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিলেটের পরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, প্রথম দিকে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা সবাই ঢাকা ফেরত ছিলেন। এখন সিলেটে ডেঙ্গু তেমন নয়। তবে সামনে যেহেতু ঈদের মৌসুম, সেক্ষেত্রে কি হয় এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ ঈদের ছুটিতে যারা বাড়ি আসবেন তাদের নিয়ে কিছুটা চিন্তা রয়েছে।