এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে এবার দুই পাসপোর্ট ব্যবহারের তথ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৮:০০,অপরাহ্ন ১৪ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৫৪৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে এবার দুই পাসপোর্ট ব্যবহারের চাঞ্চল্যকর প্রমান পেয়েছে দেশটির তদন্ত সংস্থা।
পাপুল বাংলাদেশ থেকে কুয়েত গমনে লাল পাসপোর্ট ব্যবহার না করে সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। আবার কুয়েত থেকে অন্য দেশে যেতে এমপি হিসেবে লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করছিলেন।
এদিকে কুয়েতের তদন্ত সংস্থার কাছে পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সাতজন অভিযোগকারীর মুখোমুখি হওয়ার পর তিনি নিজের কিছু কিছু ‘সীমাবদ্ধতা ও ভুল স্বীকার’ করে নিয়েছেন।
কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি এমপি কাজী শহীদ পাপুলের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে বাংলাদেশ কোনো আপত্তি জানাবে না বলে কুয়েত সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কুয়েত সরকারের তদন্ত সংস্থা এবং কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে উদ্ধৃত করে এসব খবর দিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস।
আরব টাইমসের খবরের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, এ ধরনের কোনো তথ্য তার কাছে নেই। এমপি পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়। গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানতে চেয়ে কুয়েত সরকারকে একটা নোট ভারবালও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার কোনো জবাবও কুয়েত সরকার দেয়নি। তবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বলা হয়েছে, যে কোনো দেশের দূতাবাস সাধারণভাবে নিজের দেশের নাগরিকদের জন্য যে ধরনের কনস্যুলার সেবা দেয়, এমপি পাপুল চাইলে তাকেও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সে ধরনের সেবা দেবে, এর বেশি কিছু নয়।
এমপি পাপুলের কূটনৈতিক পাসপোর্টের বাইরে অন্য পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার কানেও এ ধরনের কথা এসেছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ এখনও তিনি পাননি।
আরব টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যে সাতজন সাক্ষী দিয়েছেন, তাদের তদন্তের এক পর্যায়ে তার মুখোমুখি করা হয়। এ সময় নিজের কিছু ভুল ও সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নেন কাজী শহীদ পাপুল। তবে গ্রেপ্তারের পর তদন্ত সংস্থাকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কুয়েতে কারও কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নামে কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ নেননি, কিংবা কাউকে বিনা বেতনে কাজ করানি। কিন্তু সাত অভিযোগকারীর মুখোমুখি করার পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান।
অভিযোগকারীরা তার মুখের ওপরই তাদের কুয়েতে নিয়ে আসার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে আড়াই হাজার দিনার নেওয়ার তথ্য জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করলে এমপি পাপুল নিশ্চুপ থাকেন। এরপর তিনি তার কিছু ভুলের কথা স্বীকার করেন তদন্ত সংস্থার কাছে।
খবরে বলা হয়, মানব পাচার ও প্রতারণার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণের পর এবার অর্থ পাচারের বিষয়ে নিবিড় তদন্ত চলছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক দেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত সংস্থার কাছে তথ্য আসে। পাপুলের গ্রেপ্তারের পর এখন সেই তথ্যই জোরালোভাবে যাচাই করা হচ্ছে। এই খবরে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের আদেশ অনুযায়ী তদন্তের জন্য যত দিন প্রয়োজন হবে, ততদিনই কুয়েতে ‘রেসিডেন্স পারমিটধারী’ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কাজী শহীদকে আটক রাখা হবে।
এদিকে সংশ্নিষ্ট একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এমপি পাপুল কুয়েতে যাওয়া-আসার জন্য কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছাড়াও অন্য একটি পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। যখন যে পাসপোর্ট প্রয়োজন, সেটা ব্যবহার করতেন তিনি। সর্বশেষ কুয়েতে ঢোকার সময়ও কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করেননি।
জানা গেছে, কাজী শহীদ কুয়েত থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। আর বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য পৃথক পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। সূত্র আরও জানায়, কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, এমপি পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার কোম্পানির লোকজন জামিনের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, এখন তাও থেমে গেছে। কোনো আদালত তার জামিন শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ করেননি। এ কারণে পাপুলের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের নির্দেশই বলবৎ থাকবে।