করোনাবেষ্টিত এবারের বাজেট!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৯:১২,অপরাহ্ন ১১ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৪৯৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনাভাইরাস নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হয়েছে সরকারকে। আগের সব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে এবছর করোনাবেষ্টিত বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলেও জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এ ধরনের বাজেট প্রস্তুত করতে হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজস্ব আয় থেকে শুরু করে ব্যয় ও আগামীর পরিকল্পনা সবই করতে হয়েছে করোনাকে ঘিরে। করোনাকে মোকাবিলা করতে দেশের মানুষ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের অনুরোধ আবেদন ও নির্দেশনা প্রায় সবই করোনাকেন্দ্রিক।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল ৩টায় সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এসব তথ্যই প্রকাশ পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকানো এবং করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং প্রত্যয় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা।
সূত্র জানিয়েছে, করোনাকে মোকাবিলার জন্য সরকার এবার স্বাস্থ্যখাতকে ঘিরে আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনা করছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে। বাজেট বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা আকার বাড়িয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের। যারা করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, যারা দরিদ্র হয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে পরিকল্পনা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাকিলা করতে এ বছর সরকারি পরিচালন ব্যয় সংকোচনের নীতি অবলম্বন করছে সরকার। অপ্রয়োজনীয় সরকারি সফর, অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ কেনাকাটা, সভা সেমিনার, পোস্টার ছাপানোর কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা থাকছে এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহারের নির্দেশনাসহ তৈরি করা হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেট। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যয় সংকোচনের নির্দেশনা থাকছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। অন্য যে কোনও বছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরের জন্য প্রয়োজন নেই এমন ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা থাকছে বাজেটে। করোনা সংক্রমণ ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে সরকার নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে। এদিকে নতুন অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় সংকোচনের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা চলছে।
সূত্র জানায়, করোনা মোকাবিলায় সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে সরকারের ব্যয় বাড়বে, তাই ওই ব্যয় মেটাতে এজন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে। এছাড়া করোনার প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে এটা নিশ্চিত। তাই ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য সরকারের থাকতে হবে।
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের দাবি অনুযায়ী এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকায় তা দেওয়া হয়নি। তবে স্বাস্থ্যখাতে চলতি বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
২০১৯-২০ অর্থবছরের চলতি বাজেটে নির্বাচনি ইশতেহার অনুসারে বেশি মনোযোগ থাকার কথা ছিল ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কর্মসূচির প্রতি। ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। করোনার কারণেই আপাতত এসব কর্মসূচি থেকে কিছুটা পিছু হটেছে সরকার। দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসৃজন খাতকে অগ্রাধিকার দিলেও তা স্থগিত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এবারের বাজেট হবে মানুষের জন্য। করোনাকালে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মন্ত্রণালয়গুলোকে বরাদ্দ দিয়েছি। করোনার প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে আমরা কষি ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করেছি। কারণ কৃষিখাত এবার কারোনাকালে সরকারকে তথা দেশের মানুষকে অকল্পনীয় সাপোর্ট দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে। এবারের বাজেটে এই কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা ও উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়িয়েছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় যে যুদ্ধ চলছে সেই যুদ্ধে আমরা অবশ্যই দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জয়ী হবো। যদিও সময়টি কঠিন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ।’
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায় অনেকটাই চ্যালেঞ্জ। তারপরেও সরকারকে করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে মানুষের জন্য। এবারের বাজেট হবে মানুষের জীবন ও জীবিকার বাজেট।’