‘সবকিছু খুলে দিয়ে সরকার কানে তুলো দিয়েছে’
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৯:৩২,অপরাহ্ন ০১ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৩৩১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনা মহামারির ভয়াবহতা বিবেচনায় না এনে সবকিছু খুলে দিয়ে ‘সরকার কানে তুলে দিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১ জুন) দুপুরে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এস কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাল থেকে দেখছি যে, রেলগাড়ি চলছে এবং ট্রেনগুলোতে সেই গাদাগাদি করে মানুষ আসছে। এর মধ্যে আপনারা দেখেছেন যে, বাসে রীতিমতো মারামারি হচ্ছে বাসে উঠার জন্য, জায়গা পাওয়ার জন্য। এটা সম্ভব না, বাংলাদেশে এভাবে গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? যেখানে আপনি অফিস খুলে দিয়েছেন, অফিস খুললে তো লোকজন তো আসবেই। লঞ্চেও একই অবস্থা হয়েছে।’
‘এখন সরকারের অবস্থা হচ্ছে যে- ‘কানে দিয়েছি তু্লো’। তারা কানের তুলে দিয়েছে। কানে দিয়েছি তুলো, যা খুশি বলেন আমাদের (সরকার) কিছু যায় আসে না। আমরা তো আছি।’
ফখরুল বলেন, ‘বার বার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের (সরকার) নিয়োজিত যে টেনিক্যাল পরামর্শক কমিটি রয়েছে তারাও বলছেন যে, এটা (সব কিছু খুলে দেয়া) একটা সুইসাইডাল। এটা করলে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে। তারা সেই কথা শুনেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যে ব্যক্তিগত চিকিৎক যিনি আছেন আবদুল্লাহ (অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ) সাহেব, তাকে এডভাইজার হিসেবে নেয়া হয়েছে, তিনিও পরিস্কার করে বলেছেন যে, এটা ভয়া্বহ অবস্থার সৃষ্টি করবে, সংক্রামণ আরো ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। এটা পরিস্কার যে, তারা (সরকার) ব্যর্থ হয়েছে এই করোনা ভাইরাসের উদ্ভুত যে পরিস্থিতি সেটাকে সামাল দিতে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি- এটা আরও সময় নিতে পারতো। ভারতে দেখেন, তারা সব রাজ্যের চিফ মিনিস্টার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কথা বলে আরো একমাস লকডাউন বাড়িয়েছে। যে কথাটা আমি বার বার বলেছি, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার এভাবে তুগলগি কারবার করছেন যেটা জনগনকে পুরোপুরিভাবে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের একলা চলো নীতি, সেই একথা চলো নীতি পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেয়া হবে, কোনো ইনসেনটিভ না। এটা কিন্তু একটা কৌশল। যে কৌ্শল আপনি দেখছেন খুনাখুনিও হচ্ছে। এক ব্যাংকের ডিরেক্টর আরেক ব্যাংকের ডিরেক্টরকে ধরে নিয়ে আসছে বাসায়, তাকে বন্দুক ধরছে। তারা আবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ থেকে চলেও যাচ্ছে। হোয়ার ইজ গর্ভমেন্ট, সরকার কোথায়? আজকে এই কারণে এতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেজন্যই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু বললেই তো বলে যে, আমরা উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছি, আমরা সমালোচনা করছি। একজন তো প্রায় বলেন যে, বিষোধগার করবেন না। আরে বিষোধগার করে আপনারা যে অবৈধভাবে সরকার দখল করে আছেন সেটা বলছি না। আমরা বলছি যে, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন এটা পারছেন না করতে, এই জিনিসটা করা উচিত ছিলো।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘এই জিনিসগুলোই আমরা বার বার করে বলছি। কিন্তু ওই যে, কানে দিয়েছি তুলো। যা খুশি বলেন- আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তো আছি। আমি বলি, থাকে না। জনগণের চাহিদা যদি পুরন করা না যায়, জনগণের আশা-আকাংখা যদি পুরন না করা যায়, আর যদি ভয়াবহ দুরযোগ নেমে আসে তাহলে কিন্তু থাকে না, চিরকাল থাকে না।’
‘বাসভাড়া বৃদ্ধি অমানবিক সিদ্ধান্ত’
বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অমানবিক কাজ করা হয়েছে। আর এমনিতেই মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসে কারা উঠে? কম আয়ের সাধারণ মানুষেরাই বাসে উঠে। তাদের বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। কার স্বার্থে বাড়িয়েছে? মালিকদের স্বার্থে বাড়িয়েছে। মালিকদেরকে আবার প্রণোদনা দিচ্ছে, অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য, পুরোপুরি লুটপাট। শুধুমাত্র দুর্নীতির চরমভাবে সুযোগ নিচ্ছে সবাই।’
গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনি দেখুন না, এখনও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি চলছে, ব্যবসা চলছে, বাণিজ্য চলছে। মানুষের এ দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পূঁজি করে ব্যবসা করার, বাণিজ্য করার, ব্যবসা করার সুযোগ দেয় সেই সরকারকে কি আমরা দুর্ণীতিমুক্ত বলতে পারবো? পারবো না। আমরা তাই আশা করবো, তারা (সরকার) ভুল-ত্রুটিগুলো শুদরিয়ে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবেন।’
করোনা ভাইরাসের কারণে কৃষি ও কৃষকদের নাজুক-দুর্বিসহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা প্রস্তবানা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
‘এইসবের মধ্যে আছে, আগামী একবছর পোল্ট্রি ও ডেয়েরিসহ সকল ধরনের কৃষি ঋণের কিস্তি সুদসহ মওকুফ, বীজ, সার, কিটনাশক, সেচ ও ভুর্তকীসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ, কৃষিপণ্যসহ আম, লিচু কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফল সরকারি উদ্যোগে বাজারজাত নিশ্চিতকরণ, কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে কমপক্ষে তিন মাসের সমপরিমান টাকা বিনা সুদে প্রদান, কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমান ধান ক্রয়ে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ, প্রান্তিক চাষঅ ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের ওপরে হয়রানি বন্ধ করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
১০ জুন প্রতিটি জেলায় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ, আর্থিক ও পরিবহন সংকটে যেসকল কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না তাদেরকে কৃষকদল থেকে সহায়তা প্রদান এবং প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে চলমান ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথাও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত ছিলো। যেমন ধরেন কৃষির ব্যাপারে বলি, সবাই জানি কৃষি আমাদের মেরুদণ্ড। এই করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কিন্তু এই কৃষি। অর্থাৎ এই কৃষিকে যদি আরো উজ্বীবিত করতে পারেন, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন, কর্মসংস্থান সেখানে বাড়াতে পারেন তাহলে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ওইদিকে কিন্তু দেখবেন সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেই প্রণোদনার মধ্যে কৃষি একেবারেই অবহেলিত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রয়াত শিল্পপতি আব্দুল মোনেম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, শিক্ষাবিদ আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ফখরুল।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তার স্ত্রী শিরিন পারভিন হক, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী, প্রবীন আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রীসহ গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও চিকিৎসকের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু, সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, সদস্য মেহেদি হাসান পলাশ, অধ্যাপক শামসুর রহমান শামস, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।