গোলাপগঞ্জের নওমুসলিম ইসমাঈল সন্তানদের মাথা গোজার ঠাই করে যেতে চান
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১৬:৩৮,অপরাহ্ন ২৬ মে ২০২০ | সংবাদটি ১২৮১ বার পঠিত
ইমরান আহমদ, সিলেট::
মোঃ ইসমাঈল হোসেন (৬২)। ছিলেন হিন্দুধর্মের অনুসারী। টিভি ও ওয়াজ মাহফিলে বয়ান শুনে ঝুঁকে পড়েন শান্তির ধর্ম ইসলামের দিকে। মনে প্রাণে বিশ্বাস জন্মায় ইসলাম ধর্মই শান্তির ধর্ম। এ ধর্মই পারে আমাকে শান্তি দিতে। সেই ভাবনা নিয়েই ২০১১ সালে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে গ্রহণ করেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। শুধু বাপ-দাদার ধর্মই ত্যাগ করেননি, ত্যাগ করেন বাপ-দাদার ভিটে মাটিও। ছেড়ে দেন পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সঙ্গও। হিন্দুধর্ম ত্যাগ করার পর ইসমাঈল হোসেনের ঠাঁই হয় অসহায় এক বৃদ্ধের কুঁড়ে ঘরে। ঐ বৃদ্ধ নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখেন নওমুসলিম ইসমাঈল হোসেনকে।
অবশেষে নিজের মেয়েকে নওমুসলিম ইসমাঈল হোসেনের সাথে বিবাহ দিয়ে আরও আপন করে নেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত খর্দ্দাপাড়া গ্রামের মৃত তজমিল আলী।
বর্তমানে ইসমাঈল হোসেন স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে নিশ্চিন্ত খর্দ্দাপাড়ায় শশুর বাড়িতেই বসবাস করছেন। তবে অসহায় ইসমাঈল হোসেন সন্তানদের মাথা গোজার জন্য এখন পর্যন্ত কোন ঘর তৈরী করতে পারেননি। মারা যাওয়ার আগে সন্তানদের জন্য কমপক্ষে মাথা গোজার ঠাই করে যেতে চান তিনি। আমাদের প্রতিদিন’র সাথে আলাপচারিতায় এমনটাই জানালেন, গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ খর্দ্দাপাড়ায় বসবাসরত নওমুসলিম ইসমাঈল হোসেন।
শনিবার (২৩ মে) রাতে প্রতিবেদকের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে নওমুসলিম ইসমাঈল হোসেন জানান, তিনি হিন্দুধর্মালম্বী ছিলেন। সে সময় তার নাম ছিলো কাজল ভট। তাঁর বাপ-দাদার বাড়ি শ্রীমঙ্গল সাজগাঁও এলাকায়। ১০ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ। দীর্ঘ প্রায় ৩০/৩৫ বছর পূর্বে দুই ভাইকে নিয়ে ইসমাঈল হোসেন চলে আসেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার দত্তরাইল নওয়াপাড়া গ্রামে। এখানে তারা ঘড়ে তুলেন বসত ভিটা। ইসমাঈল হোসেন পেশায় ছিলেন বাবুর্চি। বিভিন্ন নামীদামি রেস্তোরায় কাজ করে টাকা জমিয়ে দত্তরাইল নওয়াপাড়ায় সম্পত্তিও গড়ে তুলেছিলেন। তারই আপন ছোট ভাই সমর ভটকে সরল বিশ্বাস করে রোজগারের সকল টাকা তার হাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার জমানো টাকা দিয়েই সকল সম্পত্তি ছোট ভাই সমর ভট তার নামেই করে নেয়। পরে যখন জানতে পারেন নিজের সারা জীবনের রোজগারের টাকা দিয়ে ক্রয় করা সম্পত্তি ছোট ভাই তারই নামে গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘মূলত: এ ক্ষোভ আর অভিমানেই আমি হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করি’। বলেন, আপন ভাইয়ের আচরণে আমি চিন্তিত হয়ে থাকতাম। টিভি দেখে ও মাইকে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ শুনে মনে মনে ভাবতাম ‘ইসলাম ধর্ম কত শান্তির’। এ ভাবা থেকেই বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করি।
তিনি বলেন, স্ব-ইচ্ছায় ২০১১ সালে ঢাকাদক্ষিণ বড় মসজিদে কালিমা পড়ে আমি মুসলমান হই। মুসলামন হয়ে যখন নিজ ঘর, মা-বাবা, ভাইদের সঙ্গ ছেড়ে একেবারে একা হয়ে পড়লাম, তখন নিশ্চিত খর্দ্দাপাড়া গ্রামের মৃত তজমিল আলী নিজের বাড়িতে আমাকে নিয়ে আসেন। নিজের সন্তানের মতো আমাকে গড়ে তুলেন। এরপর ২০১২ সালে নিজের মেয়েকে আমার সাথে বিবাহও দিয়ে দেন। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শশুরবাড়িতেই জীবন-যাপন করছি। তিনি বলেন, আমার ২ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর, ছেলের বয়স সাড়ে ৪ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ২ বছর। তাদের নিয়েই কোন রকম দিন কাটছে।
তিনি জানান, শশুর মারা যাওয়ার পূর্বে আমাকে ৩ ডিসিমেল জায়গা দান করে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে ঘর তৈরী করতে পারিনি। শশুর বাড়ির অবস্থাও বেশি ভাল না থাকায় তারাও উদ্যোগী হতে পারছেন না।
ইসমাঈল হোসেন দেশ-বিদেশের সকলের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিন্তু আমার অবুঝ তিনটি সন্তান রয়েছে। মারা যাওয়ার আগে কমপক্ষে তাদের জন্য কিছু করে যেতে চাই। এজন্য সরকার বা দেশ-বিদেশের সকলে সাহায্য করলে আমার সন্তানদের জন্য মাথা গোজার ঠাঁই করে যেতে পারব। এজন্য তিনি সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
এব্যাপারে ঢাকাদক্ষিণ ইউপি সদস্য সাব উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, আমি যখন ইসমাঈল হোসেনের খবর পেয়েছি, সাথে সাথে ইউনিয়ন থেকে ত্রাণ সাহায্য দিয়েছি। বর্তমানে তিনি শশুরবাড়ি থাকেন। শশুর মারা যাওয়ার পূর্বে ৩ ডিসিমেল জায়গা দিয়েছিলেন, কিন্তু কোন রাস্তা না থাকায় এ জায়গার উপর ঘর তৈরী করা সম্ভব হবে না। প্রবাসী ও দেশের হৃদয়বানরা এগিয়ে এলে নওমসুলিম ইসমাঈল হোসেন স্ত্রী-সন্তানদের মাথা গোজার ঠাই হবে। তিনি জানান, সরকার থেকে আমার ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত কোন ঘর পাইনি। পেলে সর্বপ্রথম আমি ইসমাঈল হোসেনকে বরাদ্দ দেব।
তিনি আরও জানান, আমি যতটুকু যেনেছি, বর্তমানে তিনি বেকার। প্রায় সময় তার পরিবার না খেয়েই দিন-রাত কাটান। তাঁর ভোটার আইডি কার্ডে সমস্যা থাকায় সরকারী বয়স্ক ভাতা বা সরকারী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ফেইসবুকে শাহেদ আহমদ বাদশাহ একটি স্ট্যাটাস দেখে লন্ডন থেকে প্রকাশিত আমাদের প্রতিদিনের সম্পাদক ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকের জেনারেল সেক্রেটারি ফরেন এলায়েন্স অব গোলাপগঞ্জ গ্রুপে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে ইসমাইল হোসেনকে সাহায্যের জন্য একটি মানবিক আবেদন জানান। স্ট্যাটাসের পর পরই প্রবাসী অনেকেই এগিয়েে এসেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আনোয়ার শাহজাহান। তিনি বলেন, স্ট্যাটাসের পর পরই অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আমরা যুক্তরাজ্যে ইসমাইল হোসেন সহায়তা তহবিল নামে একটি গ্রুপ করেছি। এর মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব ইসমাইল হোসেনকে সহায়তা করতে। এই সহায়তা তহবিলে ১৫ জনের মত সদস্য রয়েছেন। আশা করছি আরো অনেকেই এগিয়ে আসবেন। সকলের সম্মতিতে আমরা একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারব। যারা সহযোগিতা করতে চান তারা হাবিবুর রহমানের সাথে ০৭৫৭২ ১২২৬৬১ এই নম্বরেও যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
[প্রতিবেদক ইমরান আহমদ, সিলেটে প্রতিনিধি, আমাদের প্রতিদিন, মোবাইল নম্বর 0088- 01303 605662/ 01717 191277]