করোনা আক্রান্ত ৭৪১ পুলিশ, প্রাণ হারিয়েছেন ৫ পরিশ্রমি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩০:২৫,অপরাহ্ন ০২ মে ২০২০ | সংবাদটি ৭৩৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনা তান্ডবে বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের পরিশ্রমি ৫ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। অপর একজন করোনার তকমা নিয়ে মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৩২ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। এতে এ ভাইরাসে পুলিশ বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪১ জনে।
প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে প্রতিদিনই পুলিশে বাড়ছে করোনায় রোগী। তবে সুস্থ হয়ে বাড়িতেও ফিরছেন কেউ কেউ। তবুও সাহস আর মনোবল নিয়ে মাঠে কাজ করছেন হাজার হাজার পুলিশ সদস্য।
এদিকে করোনাভাইরাসে মারা গেলেন পুলিশের আরো আরেক সদস্য। এই নিয়ে করোনায় ৫ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। মৃত পুলিশ সদস্য হলেন-সুলতানুল আরেফিন। তিনি পুলিশের এস আই। তিনি মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএমএসআই) সদস্য ছিলেন। পুলিশ জানায়,
শনিবার (২ মে) সকালে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সুপার হাসান উল হায়দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকাল ৬টা ৫৩ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বলে জানান তিনি।
পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সম্মুখযোদ্ধা আরও এক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনকালে করোনা আক্রান্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করলেন। দেশ ও জনগণের কল্যাণে আত্ম-উৎসর্গকারী এ পুলিশ সদস্য সাব ইন্সপেক্টর সুলতানুল আরেফিন (৪৪)। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারায়ণগঞ্জফেরত ইমন রহমান নামের এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে কিডনিতে সমস্যা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়ে মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার খলিলপুর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। সেখানে কিছুদিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ এপ্রিল তাঁকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই পুলিশ সদস্যের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। তবে নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে। তারপরও সতর্কতার জন্য করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল ইসলাম বলেন, ওই পুলিশ কনস্টেবলের লিভারে সমস্যা ছিল। ইমনের লাশ সতর্কতার সঙ্গে দাফন করা হবে।’।
অন্যদিকে সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, সুলতান আরেফিনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর তিনি রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। শনিবার ভোরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পুলিশের ব্যবস্থাপনায় মরদেহ মরহুমের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সুলতানসহ এ নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ৫ সদস্য করোনাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করলেন। মৃত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন- ওয়ারী ট্রাফিক পুলিশের জসিম উদ্দিন, ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট দক্ষিণ বিভাগের এএসআই মো. আবদুল খালেক, ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদ, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসআই নাজির উদ্দিন।
কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ১ হাজার ১শ’১৭ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসোলেশনে আছেন ১৭৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ঢাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। কর্মকর্তারা বলছেন, আতঙ্ক নয় বরং সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।
নিহত পুলিশের ৪ সদস্য
ইতিমধ্যে যে ৫ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের ৫ জনই ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে একজন ছিলেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে। ডিএমপিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪০ পুলিশ সদস্য। গত ২৪ ঘন্টায় ডিএমপিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশের পরিবহন, প্রোটেকশন, উন্নয়ন, গোয়েন্দা, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, আটটি অপরাধ বিভাগসহ ২২টি বিভাগের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের তালিকায় একজন অতিরিক্ত উপ কমিশনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কনস্টেবলসহ ১২ জন নারী সদস্যও রয়েছেন।
সচেতনতার বিষয়ে ডিএমপির থানা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ইচ্ছে থাকলেও নিজেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখা যায় না। উদহারণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, কোথাও কোনো লাশ পড়ে থাকলে সেটা মর্গে নিয়ে যেতে এখন কেউ এগিয়ে আসবে না। পুলিশকেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এছাড়াও হাট-বাজার বসার সময় নিয়ন্ত্রন, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মানুষের চলাফেরার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাছাকাছি যেতে হয় পুলিশ সদস্যদের।
কোথাও কোনো অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটলে পুলিশকেই যেতে হয়। কিছু না ঘটলেও দিনে রাতে বাইরে ডিউটি করতে হয়। সবকিছু করতে গিয়ে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেয়া কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। সূত্রমতে, ঢাকার পরেই আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন ৫ সদস্য। পুলিশ সদর দপ্তর এই ৫ সদস্যের পরিবারের পাশে রয়েছে। তিন জানান, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৯ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০)। তিনি ওয়ারী ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনের সময় করোনায় সংক্রমিত হন। পুলিশের মধ্যে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তারপর দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল খালেক ও ট্রাফিক কনস্টেবল আশেক মাহমুদ। পরে মারা যান স্পোশাল ব্রাঞ্চের এসআই নাজির উদ্দীন।